Published : 05 Apr 2025, 05:50 PM
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় ডেকে নিয়ে নির্যাতন ও স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন এক সাংবাদিক।
শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সন্মেলন করে এ অভিযোগ করেন ইত্তেফাকের তাড়াশ উপজেলা সংবাদদাতা ও স্থানীয় এনজিও পরিবর্তন সংস্থার পরিচালক (প্রোগ্রাম) গোলাম মোস্তফা এবং তার স্ত্রী ফারজানা পারভিন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের জেরে তাড়াশ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল কাদের এই নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে গোলাম মোস্তফা বলেন, ঈদের দিন রাতে সাড়ে ১১টার দিকে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে বাড়িতে ফেরার পথে তিনি ডাকাতির শিকার হন। ডাকাত দল প্রাইভেটকারের চালক লিটন চন্দ্র দাসকে মারধর এবং ৪৬ হাজার টাকা ও একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
পরে বাড়িতে ফিরে বিষয়টি মোবাইলে তাড়াশ থানার পরিদর্শক নাজমুল কাদেরকে জানালে তিনি থানায় যেতে বলেন।
গোলাম মোস্তফা বলেন, “স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে থানায় গেলে গেইটে দাঁড় করিয়ে রেখে নাজমুল কাদের ঘটনা জানতে চান এবং অভিযোগ দিতে বলেন। কিন্তু আমি অভিযোগ না দিয়ে ডাকাতির মামলা করতে চাইলে পরিদর্শক নাজমুল কাদের ক্ষেপে যান এবং মারধরের চেষ্টা করেন।”
এক পর্যায়ে পরিদর্শক কাদের প্রাইভেটকারে থাকা সাংবাদিকের স্ত্রীকে টেনে হেঁচড়ে নামাতে গেলে তিনি ডান হাঁটুতে আঘাত পান বলে জানান গোলাম মোস্তফা।
লিখিত অভিযোগে তিনি আরও বলেন, “পরিদর্শক নাজমুল কাদের আমাকে বলেন, তুই মদ খেয়ে থানায় আক্রমণ করতে এসেছিস। চল তোকে হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করাব। এই বলে নাজমুল কাদের নিজেই আমার শার্টের কলার ও চুল ধরে এবং কিলঘুষি মারতে মারতে পিকআপে তোলেন এবং পিকআপে তুলেও আমাকে মারধর করা হয়। এসব কাজে আমার স্ত্রী বাধা দিলে তাকেও ধাক্কা দেওয়া হয়।”
এরপর পরীক্ষার নামে তাকে তাড়াশ হাসপাতালে নিয়ে জরুরি বিভাগে বসিয়ে রেখে নানা গালমন্দ করা হয়। একপর্যায়ে চিকিৎসক তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করে- বলেন এ সাংবাদিক।
এরপর তাকে আবারও থানায় এনে মুন্সীর কক্ষে বসিয়ে রেখে সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদের বিষয় নিয়ে মিথ্যা মামলা করার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয় বলেও অভিযোগ করেন সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা।
তিনি আরও বলেন, ভোরে তার মা মাজেদা বেগমও থানায় আসেন। সে সময় নাজমুল কাদের তার স্ত্রী ও বাল্যবন্ধু উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এস. এম তারিকের মাধ্যমে আপসের প্রস্তাব দিতে থাকেন।
“এক পর্যায়ে পরিদর্শক নাজমুল কাদের বলেন মুচলেকায় আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে, সেখানে শুধু লেখা থাকবে ডাকাতির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আমি পুলিশের সাথে একটু খারাপ ব্যবহার করেছি। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নাজমুল কাদেরের ওই প্রস্তাব মেনে আমি থানা থেকে মুক্ত হই।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফারজানা পারভিন বলেন, “অবৈধ পুকুর খননকারীদের থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পুলিশের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেন আমার স্বামী। এ কারণে পরিদর্শক নাজমুল কাদের ব্যক্তিগত আক্রোশে আমার স্বামীকে থানায় ডেকে নিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন ও মারধর করেন।
“আমাকেও প্রাইভেটকার থেকে টেনে হেঁচড়ে নামান এবং ধাক্কা দেন। যা একজন নারীর সম্ভ্রমহানীর শামিল। আমি এই পুলিশ কর্মকর্তার বিচার দাবি করছি।”
তবে নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে তাড়াশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল কাদের বলেন, “সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা নেশা করে গভীর রাতে থানায় এসে পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন।
“তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্ত কয়েকজন মিলে অনুরোধ করায় তাকে মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন উল্টো তিনি আমার বিরুদ্ধে নির্যাতনের নানা মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন।”