Published : 24 Feb 2025, 01:47 AM
‘সংস্কার খায় না, মাথায় দেয়’ বলে প্রশ্ন করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, “শুধু বলেন সংস্কার-সংস্কার, সংস্কার খায় না, মাথায় দেয়? দেশ সংস্কার করেছে জিয়াউর রহমান, তিনি বাড়ি বাড়ি গেছেন, খালেদা জিয়া মাইলের পর মাইল কাজ করেছেন। তাই দেশ সংস্কার একমাত্র বেশি করেছে বিএনপি।”
রোববার বিকালে টাঙ্গাইল পৌর উদ্যানে সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টুর গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “যুবকদের জন্য যুব মন্ত্রণালয় করেছে বিএনপি, মহিলাদের জন্য মহিলা মন্ত্রণালয় করেছে বিএনপি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় করেছে বিএনপি। সবগুলো কল্যাণকর কাজ করেছে বিএনপি। দেশে প্রথম সংস্কারের জন্য ঘোষণা দেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। ৩১ দফার মধ্যে সংস্কার রয়েছে।”
এসময় তিনি আরও বলেন, “১৭ বছর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে, অসংখ্য খুন করেছে, গুম করেছে। জুলাই আন্দোলনে আমাদের ৪০০র অধিক কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বিএনপি ১ দফা আন্দোলন শুরু করেছি। আমরা স্বৈরাচার পতন করেছি।”
বিএনপি জোর করে ক্ষমতায় যেতে যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শোনা যাচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন দিতে পারে। তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের কোনো নেতাকর্মী যদি কাউকে অত্যাচার ও নিপীড়ন করে তাহলে আপনারা জানাবেন, আমি যথাযথ ব্যবস্থা করব।”
একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুকে ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। ৫ অগাস্ট সরকার পতন হলে সে মামলায় খালাস পান তিনি। পরে ২৪ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
তারপর দীর্ঘ ১৭ বছর পর রোববার তিনি টাঙ্গাইলের মাটিতে পা রাখেন। এ উপলক্ষে তাকে গণসংর্বধনা দেওয়া হয়।
গণসংর্বধনায় আব্দুস সালাম পিন্টু বলেন, “শেখ হাসিনা সরকার আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল। কারাগারে কী রকম ভয়াবহ নির্যাতন করেছে। আপনারা যারা দেখেন নাই, তারা বুঝবেন না।”
ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি এমপি ছিলাম মন্ত্রী ছিলাম তারপরেও আমার উপর নির্যাতন চালায়। এমন করে আঘাত করতো যে- ড্রিল মেশিন দিয়ে পায়ের হাঁটু ছিদ্র করে দিত। আমাদেরকে কনডম সেলে নিয়ে নির্যাতন করা হত।
“একটি কথা বলতে চাই- অত্যাচারীদেরকে কখনো আল্লাহ ক্ষমা করেননি, শেখ হাসিনাকেও ক্ষমা করবে না।”
তিনি আরও বলেন, “ইদানিং ভারতের মিডিয়া আমাকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে- তাই বলতে চাই আমি কখনো হিন্দুদের ক্ষতি করিনি। তাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই। টাঙ্গাইলে যত হিন্দুদের বাড়ি ছিল, সব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দখল করেছে।
“আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীর রাজত্ব তৈরি করেছিলো এই দেশকে। কিন্তু জাতীয়তাবাদী দল কখনো সন্ত্রাসীতে বিশ্বাস করে না।”
তিনি বলেন “শেখ হাসিনা আমাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল, কখনো কল্পনা করি নাই আবার ফিরে আসবো। আগের সালাম পিন্টু নেই কারণ সালাম পিন্টুকে শেখ হাসিনা মেরে ফেলেছে, আজকের সালাম পিন্টু জিয়াউর রহমানের সালাম পিন্টু, তারেক রহমানের সালাম পিন্টু।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান। তিনি বলেন, “খুনি হাসিনা যেমন বলতেন আগে উন্নয়ন পরে নির্বাচন। ঠিক তেমনি এই সরকার বলে বেড়ায় আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। সারাদেশে এখন ডাকাতি হচ্ছে, বাসে ডাকাতি হচ্ছে, ট্রেনে ডাকাতি হচ্ছে, আগেই বলেছি দেশে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে অবশ্যই নির্বাচন দরকার।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ১৭ বছর ভোটের অধিকারের জন্য লড়েছে। সেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য আগামী পাঁচই ডিসেম্বর ঘোষণা করেন।”
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, “এই টাঙ্গাইলে খুনি হাসিনা সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব করেছিল। অসংখ্য নেতাকে গুম করেছে খুন করেছে। আমরা বলতে চাই টাঙ্গাইলে বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাস নেই। বর্তমান সরকারকে বলতে চাই আপনারা নির্বাচন দিতে পারবেন না কারণ আপনাদের সেই সক্ষমতা নেই।”
জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে টুকু বলেন, “বিগত ৯৬ সালে তিনটি সিট পেয়েছিলেন। এবার নির্বাচনে একটি সিটও পাবেন না। আমরা হিন্দুবাদ চাই না, উর্দুবাদ চাই না, সবার আগে আমরা বাংলাদেশ চাই।”
জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবালের সঞ্চালানায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাঈদ সোহরাব, নির্বাহী সদস্য এস এম ওবায়দুল হক নাসির, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী।