Published : 21 Jun 2025, 09:13 AM
যশোরের শার্শার বাগআচড়া বাজারে এক কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দ আর বৃষ্টির পানিতে এক ভয়ঙ্কর মৃত্যু ফাঁদ তৈরি হয়েছে।
যশোরের নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাগআঁচড়া সাতমাইল বাজার থেকে বেলতলা আমবাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তার এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
খানাখন্দে পরিপূর্ণ এ সড়কে ভোগান্তির শেষ নেই। জলাবদ্ধতা, কাদায় ভরা গর্ত, যানজট ও দুর্ঘটনা এ পথে এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।
বাগআচড়া ড. মশিউর রহমান মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী অনামিকা আফরিনকে প্রতিদিন ক্লাসে যেতে হয় বেলতলা সড়ক পেরিয়ে।
দিনের পর দিন কিভাবে তাকে এই সড়কের চলতে নাজেহাল হতে হয় সে কথা বলছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।
একাদশ শ্রেণির এ শিক্ষার্থী বলেন, “প্রতিদিন প্রায় দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে কলেজে যাই। আগে ২০ মিনিটে পৌঁছাতাম, এখন লাগে এক ঘণ্টা। এত খানাখন্দ আর ভোগান্তি পেরিয়ে ক্লাসে গিয়ে আর মনোযোগ দিতে পারি না।
“বিশেষ করে পরীক্ষার সময়ে রীতিমত ভয়ে থাকি। সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারব কি-না। প্রশাসনের কাছে আমাদের আকুতি দয়া করে এই সড়কের দিকে নজর দিন।”
সরেজমিনেও অনামিকার কথার সত্যতা পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বাগআচড়া বাজারের ব্যবসায়ী, ক্রেতাবিক্রেতা ও চলাচলকারী সাধারণ লোকজন।
জিরো পয়েন্ট মোড়ে বড় বড় গর্তের কারণে বাজারে আসা মানুষজন চরম বিড়ম্বনায় পড়ছেন। বর্ষায় সময় গর্তগুলোতে জমে থাকা পানি ও কাদামাটি রাস্তার চেহারাই পাল্টে দেয়। দেখলে মনে হয় যেন শহরের বুকে জেগে উঠেছে বিশাল পুকুর।
মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তাজুড়ে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। বিশেষ করে সাতমাইল থেকে বেলতলা পর্যন্ত বাজার এলাকায় কোথাও কোথাও পথচারীরা ঠিক করে বুঝতেও পারেন না, তারা গর্তে হাঁটছেন না সমতলে। দোকানপাটে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে, কাঁধে করে শিশুদের রাস্তা পারাপার করাতে হয়। প্রায়ই সময়ই গর্তে পড়ে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও ভ্যান বিকল হয়ে পড়ে থাকে ফলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তার কার্পেটিং উঠে গিয়ে জেগে উঠেছে গভীর গর্ত। যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার লাখো মানুষ চলাচলের এই মহাসড়কটি একমাত্র ভরসা হলেও যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজগামী হাজারো শিক্ষার্থী, রোগী ও সাধারণ মানুষ নিত্যদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
ওই সড়কে চলাচলকারী ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালক আলতাফ হোসেন বলেন, “এখন ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতি হচ্ছে। গর্তে পড়ে ভ্যান উল্টে যাচ্ছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ আহত হচ্ছে। অথচ দেখার কেউ নেই।”
ট্রাক চালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, “এই সড়কটি ভোমরা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিনিয়ত পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে যাতায়াত করতি হয়। এতে গাড়ি চালানোর কোনো কায়দা নেই। গেল বর্ষায় যে বড় বড় গর্ত হয়েছে, তাতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার মধ্যে পড়তি হচ্ছে। রাস্তাটি সংস্কার করা জরুরি।”
স্থানীয় প্রবীণ সংবাদকর্মী হেদায়েত উল্লাহ বলেন, “এটি মহাসড়ক নয়, মৃত্যুফাঁদ। যানবাহন চালানো দূরে থাক, হেঁটে চলাচলের অবস্থাও নেই। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। চলতে গিয়ে আমরা সবসময় ভয়ে থাকি।”
বাগআচড়া বাজারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মিজানুর রহমান বলেন, “সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তার পাশে দোকানপাট খুলে বসা যায় না। সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়। কখন যে কি দুর্ঘটনা ঘটে। কাদাপানি ছিটকে কাপড়চোপড় নষ্ট হচ্ছে।”
বাগআচড়া হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক মনিরুদ্দিন বলেন, “এই মহাসড়কের দুধারে একটি হাইস্কুল, দুটি কলেজ, একটি কলেজিয়েট বালিকা বিদ্যালয়, দুটি মাদ্রাসা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত তিনটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে।”
বাগআচড়া জিরো পয়েন্ট মোড়ের লিওন ফার্মেমির মালিক জিয়াউর রহমান বলছিলেন, “বাজারের মূল স্থানে গর্তে জমে থাকা পানিতে গাড়িগুলো একে অপরকে ওভারটেক করতে গিয়ে যানজট তৈরি করছে। হঠাৎ বৃষ্টি হলে রীতিমতো রাস্তায় বসে ভিজে যায় পথচারীরা। বহু মোটরসাইকেল উল্টে আহত হয়েছে। ভারি ট্রাকগুলো বিকল হয়ে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে রোডের মাঝখানে।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) যশোর এর সহকারী প্রকৌশলী মাহাবুব খান বলেন, “নাভারন সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাগআঁচড়া অংশের উন্নয়নে বাজেট অনুমোদন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলেই দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু হবে। জনগণের দুর্ভোগ আমরা বুঝি এবং এটাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।”