Published : 07 Jul 2024, 07:35 PM
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমর নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে জেলার নয় উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে জেলার নয় উপজেলায় ৩৪১টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদরাসার পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ষান্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুল আলম বলেন, “বন্যার পানি উঠার কারণে ১২১টি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত নয়, এমন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। আর বন্যা কবলিত সব বিদ্যালয়ের ষান্মাসিক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।”
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন বলেন, “৯ উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫৩টি। এর মধ্যে পাঠদান বন্ধ রয়েছে ২২০টিতে।”
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক হাজার ২০৬টি। অপরদিকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদরাসার সংখ্যা ৭০৯টি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধরলার পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া বিকাল ৩টায় দুধকুমর নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে তিস্তার পানিও। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ১১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান পাউবোর এই কর্মকর্তা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
আগামী ৭২ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমর নদ-নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে তিস্তা নদীর পানি সমতল কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
ধরলা ও দুধকুমর নদ-নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে।
দেশের নদ-নদীর ২১ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় ৬ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় জেলার নদ-নদীর অববাহিকার চার শতাধিক চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে সাত দিন ধরে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে উঁচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার সংকটে পড়েছেন চরাঞ্চলের বন্যা কবলিতরা। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা।
তবে বানভাসি মানুষের মাঝে সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ সহায়তা লক্ষ্য করা গেলেও বেসরকারিভাবে তেমন ত্রাণ সহায়তা দেখা যায়নি। রাজনৈতিক দল এবং এনজিও গুলো হাতগুটিয়ে আছে।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের জহুরুল হক বলেন, “গত ৭-৮ দিন ধরে আমার চরের সব বাড়িতে পানি। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী নিয়ে পাশের উঁচু একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি আমরা। আমার এখানকার সবারে খুব কষ্ট।”
জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “জেলায় বন্যার কারণে সবজি, বীজতলা ও বিভিন্ন ফসলের ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির ফসল এখন পানির নিচে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে।”
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, “বন্যা মোকাবেলায় ৩১৭ মেট্রিক টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৯ হাজার ৩০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে।”
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে জেলার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, “ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে অপরদিকে যমুনা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় উভয় নদীর পানি সমতল ধীর গতিতে হ্রাস পেতে পারে।”
তিনি বলেন, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল সার্বিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।”