Published : 25 Nov 2024, 12:05 AM
রাতভর র্যাগিংয়ের শিকার পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অসুস্থ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সাত শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শনিবার গভীর রাত আড়াইটার দিকে এম কেরামত আলী হলে অন্তত ২০ জনকে উঠবস করানো, জনালায় ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয় বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
অসুস্থ অবস্থায় একজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকি তিনজনকে দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সকালে উপাচার্য অধ্যাপক কাজী রফিকুল ইসলাম বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীর খোঁজ-খবর নেন এবং সুচিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে উপাচার্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “র্যাগিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত সাত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ডিন কাউন্সিল, প্রভোস্ট কাউন্সিল, ডিসিপ্লিনারি বোর্ড তারা ওদেরকে এক বছরের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করছে।
“এ ছাড়া পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। শুধু হল থেকে বহিষ্কার না, এদেরকে একাডেমিক কী শাস্তি আছে সেটার বিধান দেখে ওই শাস্তিও নিশ্চিত করবে।”
তিনি বলেন, “একজন বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি আছে। তিনজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিল। পরবর্তীতে ওদেরকে আমাদের নিজস্ব মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। আশা করি, সমস্যা হবে না।
“বরিশালে যে আছে তার একটু পেনিকটা বেশি, শারীরিক অসুস্থতা তেমন গুরুতর না। তার ভয়টা বেশি কাজ করেছে।”
উপাচার্য বলেন, “আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা একটু ভাল করে প্রচার করেন যেন সারা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে, এরকম করলে শাস্তি পেতে হয়।”
যে সাত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের মধ্যে চারজনের নাম জানতে পেরেছে বিডিনিউজ। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রিতম কারণ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থী ও এম কেরামত আলী হলের তানভিরুল ইসলাম সিয়াম, কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের জিহাদ হাসান জীম এবং আইন অনুষদের শিক্ষার্থী ও এম কেরামত আলী হলের সৌরভ সরকার শাওন।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বাকি তিনজন হলেন- আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদের শাওন, সুপেল চাকমা ও গোলাম রাব্বি।
এম কেরামত আলী হলের বাসিন্দা ও স্নাতক প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪ সেশন) শিক্ষার্থী বলেন, “গভীর রাত পর্যন্ত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগ দেওয়া হয়। র্যাগিং চলাকালীন হঠাৎ করেই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চারজন শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই অমানবিক নির্যাতনের কারণে অনেকেই রাতে ঘুমাতে পারেননি।”
২০২৩-২৪ সেশনের আরেক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, “রাত ১২টায় ইমিডিয়েট সিনিয়ররা আমাদের গণরুমে এসে সবার ফোন জমা নিয়ে একটা টেবিলে রেখে দেন।
“আমাদেরকে কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, বিভিন্ন বাধ্যতামূলক নিয়ম বলে, সিগারেটের ধোঁয়ায় অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে গণরুমে।”
তিনি বলেন, “এ ছাড়া আমাদের জানালায় ঝুলানো থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।”
শিক্ষার্থীরা এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে আছেন খবর পেয়ে এম কেরামত আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সহকারী প্রক্টর মো. আবদুর রহিম ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
এ সময় তারা গণরুমে ঢুকে র্যাগিং দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত দুই জনকে কম্বল মুড়ি দিয়ে থাকা অবস্থায় হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে ক্যান্টিনে গিয়ে চারজনকে র্যাগিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হিসেবে শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আবুল বাশার খান সাংবাদিকদের বলেন, “এ পরিস্থিতি একেবারেই কাম্য নয়। ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত রয়েছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
“পাশাপাশি এমন পরিস্থিতি যেন পরবর্তীতে আর না ঘটে এজন্য প্রশাসন অধিক তৎপর হবে এবং এ জন্য সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।”