Published : 15 May 2025, 10:33 PM
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কির সন্দেশ ভৌগোলিক নির্দেশক-জিআই সনদ পেয়েছে। এতে আনন্দিত জেলার মানুষ।
সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের ভাষ্য, সন্দেশের আদি স্বাদ ও সু-ঘ্রাণ ধরে রাখতে হবে।
এ সন্দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখার কারণে বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের কাছ থেকে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক জিআই সনদ গ্রহণ করেন।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে জামুর্কিতে কালিদাস মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে শতবর্ষ ধরে তৈরি হচ্ছে এই মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য। গুণগত মানের কারণেই সারাদেশে এর সুনাম।
প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখান থেকে সন্দেশ কিনতে আসেন টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ। যাত্রাবিরতি দিয়েও অনেকে এই সন্দেশ নিয়ে যান।
সন্দেশের কারিগররা বলছেন, বাজার থেকে উৎকৃষ্টমানের দেশি গাভীর দুধ সংগ্রহ করেন তারা। পরে তিন ঘণ্টা ধরে দুধ জাল দিয়ে নানা ধাপ পেরিয়ে এই সন্দেশ তৈরি করা হয়। জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় তারাও খুশি।
স্থানীয়রা জানান, এখানকার কালিদাস সাহা দুধ, চিনি ও পাটালি গুড় ব্যবহার করে দুই রকমের সন্দেশ তৈরি করেন। তার হাতে তৈরি সন্দেশ ধীরে ধীরে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে।
ক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমি চাকরি করি নরসিংদীতে। যাত্রাপথে কালিদাসের সন্দেশ প্রায়ই কিনে নিয়ে যাই। আমার বাচ্চারা কালিদাসের সন্দেশ পছন্দ করে। এই সন্দেশ খুব সুস্বাদু। একবার খেলে মুখে স্বাদ লেগে থাকে। শহরে অনেক দোকানে সন্দেশ আছে। সে তুলনায় অনেক অনেক ভালো কালিদাসের সন্দেশ।”
ক্রেতা গোলাম ছাত্তার তানজীল বলেন, “কালিদাসের সন্দেশ, ঐতিহ্যবাহী। অনেক সুস্বাদু, অনেক মজাদার। আমার বাসা টাঙ্গাইল। আমি প্রায়ই আসি। দেশের সবাই এখানে সন্দেশ খেতে আসুক এটাই আমার চাওয়া।”
ক্রেতা মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকেই কালিদাসের সন্দেশ খেয়ে বড় হয়েছি। কালিদাসের সন্দেশ এতিহ্যবাহী খাবার। জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য টাঙ্গাইলবাসীর পক্ষ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ দেব। এ ছাড়া দেশের জিআই স্বীকৃতি পণ্যের দিকে সরকার যেন আলাদাভাবে গুরুত্ব দেন। এতে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশিরাও কালিদাসের সন্দেশের গুণের কথা জানতে পারবে।”
কালিদাসের ভাগ্নে প্রেমা সাহা বলেন, “এই দোকানের বয়স ১০০ বছর। শুরুতে কালিদাস তার বাবাকে নিয়ে সন্দেশের ব্যবসা চালু করেন। তারপর কালিদাসের ছেলেও ব্যবসায় যুক্ত হয়। কালিদাস এখনও জীবিত আছেন। তার পরামর্শে ছেলে ব্যবসা চালায়। বাজারের ভালো দুধ, ভালো গুড়, চিনি, এলাচের সমন্বয়ে সন্দেশ যত্ন নিয়ে বানানো হয়। সরকারি অনেক কর্মকর্তাই এখানে এসে সন্দেশ খান। তাদের কারণেই জিআই স্বীকৃতি এসেছে।”
কালিদাস মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী সমর চন্দ্র সাহা বলেন, “আমার বাবা, আমার দাদা, আমার কাকা ও আমি দোকান করতেছি। টাঙ্গাইলে আমাদের সন্দেশ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। টাঙ্গাইলের ডিসি সাহেব এতে অবদান রেখেছেন। আমাদের গ্রামবাসী খুশি।
“সন্দেশ ভালো হওয়ার কারণ হলো, আমরা ভালো দুধ কিনি, কোনো দুই নম্বর ছানা কাটি না। পাবনার ছানা ব্যবহার করি না। দেশি গরুর দুধ ব্যবহার করি। মার্কেটের দুধ ব্যবহার করি না। মনোযোগ দিয়ে কাজ করি। মানুষকে ভালো জিনিস খাওয়াতে পারি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনো দোকানে সন্দেশ সরবরাহ করি না। এরকম চিন্তা-ভাবনা আমাদের মধ্যে নেই। এখানেই সন্দেশ তৈরি করি, এখানে থেকেই বিক্রি করি। এতে আমাদের সন্দেশের মান বজায় থাকে।”
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক বলেন, “ঈদ, পূজা, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কালিদাসের সন্দেশ একটি অন্যতম উপাদান হয়ে থাকে। দেশি-বিদেশি অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিও এই মিষ্টির স্বাদ নিয়ে মুগ্ধ হয়েছেন।
“প্রতিদিন এই সন্দেশের দোকানে গড়ে লক্ষাধিক টাকার বেচাকেনা হয়ে থাকে। পণ্যটি জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় এটা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে বলে আশা করি।”