Published : 01 Sep 2024, 09:40 PM
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারস কারখানায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়তলা ভবনটিতে মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় পেয়েছেন বলে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা দাবি করেছেন।
রোববার বিকালে জেলা প্রশাসনের গণশুনানি শেষে কারখানার ভেতরে ঢুকে পড়েন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। তাদের অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যান।
সেখানে তারা মেঝেতে পুড়ে যাওয়া বেশকিছু হাড় ও মাথার খুলি পান। এসব দেহাবশেষ পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এসব দেহাবশেষ শনাক্তের প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে।
২৫ অগাস্ট বিকাল থেকে লুটপাটের পর রাত ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী এলাকার গাজী টায়ারস কারখানায় আগুন দেওয়া হয়। প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে জ্বলে সেই আগুন।
এ ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি তাদের স্বজনদের। তাদেরই একজন রূপগঞ্জ উপজেলার মৈকুলী গ্রামের বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি শাহাদাত হোসেন। ভাইয়ের দেহাবশেষের খোঁজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যান তার বোন সিনথিয়া। সেখানে একটি মানুষের মাথার খুলি পান তিনি; যার অধিকাংশই পুড়ে গেছে।
সিনথিয়া বলেন, “সবার সঙ্গে আমিও ফ্যাক্টরিতে ঢুইকা যাই। তিনতলায় হাড়গোড় দেখছি অনেক। অনেকেই হাতে করে নিয়া গেছে। আমিও একটা খুলি নিয়া আসছি।”
পরে অন্যদের মতো খুলিটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন সিনথিয়া।
এর আগে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি কারখানার চত্বরে একটি গণশুনানির আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে গণশুনানি। এই সময় নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির লোকজন। তাদের কাছ থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করেন।
গণশুনানিতে ৭৮টি পরিবার অংশগ্রহণ করেন বলে কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান জানান।
আরও পড়ুন:
গাজী টায়ারস: ভবনের বেজমেন্টে আগুন পৌঁছায়নি, সেখানে কোনো ‘ভিক্টিম’ নেই
গাজী টায়ারস: ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ঢুকে উদ্ধার অভিযান চালানো ‘খুবই বিপজ্জনক’
গাজী টায়ারসে উদ্ধার অভিযান নিয়ে সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার
তিনি বলেন, “আমরা গণশুনানি শেষে উপজেলা পরিষদে গিয়ে বসি। তখন জানতে পারি নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা ভবনটির ভেতরে ঢুকে পড়েছে এবং সেখানে মানুষের কিছু হাড়গোড় পেয়েছেন। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাদের নির্দেশনা দেন। পরে আমরা এসব দেহাবশেষ সংগ্রহ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেই।
“স্বজনরা খুঁজে পাওয়া দেহাবশেষ জমা দিয়েছেন। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এসব দেহাবশেষ শনাক্তের প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে।”
স্বজনদের বিক্ষোভ
এদিকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গণশুনানি চলাকালে নিখোঁজ স্বজনদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে সামনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় ১০ মিনিট পর তদন্ত কমিটির সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্বজনদের নিবৃত করে সড়কটিতে যানচলাচল স্বাভাবিক করেন।
মহাসড়কে বসা থাকা অবস্থায় নিখোঁজ ব্যাটারি কারখানার শ্রমিক আমান উল্লাহর বৃদ্ধা মা রাশিদা বেগম বলেন, “দিনের পর দিন যাইতাছে অথচ কেউ কইতাছে না আমার পোলা কই আছে। এতো এতো লোক আইতাছে, কেউ লাশের কোনো খোঁজ জানাইতে পারতাছে না।
আরও পড়ুন:
গাজী টায়ারসে আগুন-লুটপাট: জেলা প্রশাসনের ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি
গাজী টায়ারস: ৪ দিনেও শুরু হয়নি উদ্ধার অভিযান
গাজী টায়ারসে আগুন-লুটপাট: জেলা প্রশাসনের ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি
“আগুনে পুইড়া গেলে হাড্ডিগুড্ডি অইলেও দিতে অইব। লাশ না পাইলে আমরা কারখানার সামনে থেইকা যামু না।”
এদিকে পাঁচদিন পর গত ৩০ অগাস্ট সন্ধ্যায় ছয়তলা ভবনটির আগুন সম্পূর্ণ নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।
তখন নারায়ণগঞ্জ জোন-২ এর উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মন্নান বলেন, “টানা আগুন জ্বলতে থাকার কারণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার অভিযান চালানো যায়নি। তবে ভবনের বেজমেন্টে তল্লাশি চালানো হয়েছে, ড্রোন ও টিটিএলের (উঁচু মই) মাধ্যমে ভবনটির ভেতরেও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ভিকটিম বা তাদের দেহাবশেষ মেলেনি।”
আরও পড়ুন:
গাজী টায়ারসে আগুন: এবার নিখোঁজদের তালিকা করছে প্রশাসন ও শিক্ষার্থ
'আমার ভাইয়ের লাশটাও পাইতেছি না গো'
গাজী টায়ারস: ৩২ ঘণ্টা পর নিভেছে আগুন, ভবন ধসের শঙ্কা
গাজী টায়ারস: মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো, তারপর লুটপাট-আগুন
গাজী টায়ার: ২২ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে, তবে পুরোপুরি নেভেনি
গাজী টায়ারস: ২১ ঘণ্টায়ও নেভেনি আগুন, লুটপাট চলছেই
লুটপাট-নাশকতা: ১৪ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি গাজী টায়ার কারখানা