Published : 17 Oct 2024, 08:43 PM
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর, তার তিন ছেলে ও ভাইয়ের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ময়েনদিয়া বাজার এলাকার কয়েকটি বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নগরকান্দা-সালথা সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, “মান্নান মাতুব্বর মানবতাবিরোধী অপরাধে আবুল কালাম আজাদের মামলার সাক্ষী ছিলেন বলে জেনেছি। তবে এ হামলার পেছনে ওই ঘটনা কাজ করেছে বলে আমার মনে হয়নি।”
তাহলে কেন এই হামলা- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “মেয়েনদিয়া বাজার এ এলাকার একটি বড় বাজার। এ বাজারের নিয়ন্ত্রণ এতদিন মান্নান মাতুব্বর এবং বড়খারদিয়া গ্রামের ইব্রাহিম মোল্লা ও তার ভাই জালাল মোল্লা করতেন। এ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ ঘটনা ঘটতে পারে।”
ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর বেলা ১১টার দিকে ইব্রাহিম ও জালালের বাড়িতেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড় খারদিয়া গ্রামের সহস্রাধিক লোক মান্নান মাতুব্বর, তার তিন ছেলে হারেজ মাতুব্বর, মজনু মাতুব্বর ও মাসুদ মাতুব্বর এবং ভাই সিদ্দিক মাতুব্বরের বাড়িতে এ হামলা চালায়।
হামলাকারীরা ভাঙচুর ও লুটতরাজ করে আগুন দিয়ে বাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়।
এরপর হামলাকারীরা মান্নান মাতুব্বরের সমর্থক খারদিয়া গ্রামের হাসেম মোল্লা, কালাম মোল্লা, ইব্রাহিম মোল্লা, জালাল মোল্লা ও হবি মোল্লার বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
এ সময় মান্নান মাতুব্বর এবং পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। আশেপাশের লোকজন হামলার প্রতিরোধ করতে এলে বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করা হয় বলে শোনা গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার যদুনন্দী ইউনিয়নের বারখাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। রায়ের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বরের ভাই মো. সিদ্দিক মাতুব্বর সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের বাড়িতে হামলা হতে পারে এমন শঙ্কার মধ্যেই আমরা ছিলাম।”
বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে তারাও প্রায় প্রতি রাতে এলাকায় টহল দিত বলে জানান তিনি।
সিদ্দিক মাতুব্বর অভিযোগ করে বলেন, “ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চুর ছেলে জিহাদ মিয়ার নেতৃত্বে এ হামলা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।”
তিনি বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও ওই পরিবার আমাদের বাড়ি-ঘর হামলা করেছিল। আবার এখন তার ছেলেও হামলা করল।”
এই ঘটনা প্রসঙ্গে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির হাসান চৌধুরী বলেন, “হামলার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে জানাই। দ্রুত ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী তিনটি টিম ও থানা থেকে পর্যাপ্ত ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।
“এখন পর্যন্ত সংঘর্ষকারী কাউকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে সেখানে পুলিশ মোতায়ন আছে। সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমান বলেন, “এ ঘটনায় কেউ আহত হয়েছে বলে জানা যায়নি। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।”
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “ইব্রাহিম ও জালালের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায়ও কাউকে আটক করা যায়নি। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সালথা ও বোয়ালমারীতে দ্রুত পুলিশের সম্মিলিত অভিযান শুরু হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।