Published : 26 Feb 2025, 12:24 AM
কক্সবাজারে বিমান বাহিনী ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষে একজনের নিহতের ঘটনার পরদিন সমিতিপাড়া বাজারে লোক সমাগম কমে গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সমিতিপাড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অন্য স্বাভাবিক দিনের চেয়ে লোকজনের আনাগোনা অনেক কম। অপরিচিতদের সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলতে চাইছেন না।
সোমবার দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিমান ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতিপাড়া এলাকায় স্থানীয়রা বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সে সময় ঢিল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে গুলিও ছোড়া হয়। সংঘর্ষের সময় শিহাব কবির নাহিদ (৩০) নামে একজন ব্যবসায়ী নিহত হন।
ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার সকালে নাহিদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান।
নিহত নাহিদের বাবা নাসির উদ্দীন বলেন, “প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে বুধবার থানায় যাব মামলা করার জন্য।”
এদিকে দুপুরের দিকে এলাকাবাসীর পক্ষে কয়েকজন কক্সবাজার ডিসির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা দিদারুল ইসলাম রুবেল বলেন, “সোমবারের ঘটনার পর মামলার আশঙ্কায় স্থানীয়রা উদ্বেগে রয়েছেন। আমরা ডিসি স্যারকে বলেছি, আমাদের যেন আর হয়রানি করা না হয়।”
বৈঠকে অংশ নেওয়া আইনজীবী সেজান এহসান বলেন, “আমরা ডিসিকে বলেছি, এর নিরপেক্ষ তদন্ত হোক৷ বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি।
“নাহিদ হত্যার বিচার অবশ্যই করতে হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন যেন প্রভাবিত না হয় কোনোভাবে, সেটাও বলা হয়েছে।”
এক নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আক্তার কামাল বলেন, “আমাদের সঙ্গে বিমানবাহিনীর কোনো বিরোধ নেই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের জায়গায় বসবাস করতে চাই। আমরাও থাকব, তারাও থাকবে।
“একটা সার্ভে করে কতটুকু জায়গা অ্যাভিয়েশনের লাগবে, কত জায়গা বিমান বাহিনীর লাগবে তা নিয়ে আলোচনা করে কীভাবে সুষ্ঠু সমাধান করা যায় তা নিয়ে কথা বলেছি ডিসির সঙ্গে।”
তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছুই বলতে চাননি ডিসি সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “ওরা এসছিল। ওদের কথা শুনেছি।”
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে শিহাব কবির নাহিদের সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান বলেন, প্রতিবেদনটি করেছেন এসআই মুহাম্মদ আলাউদ্দিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “মাথার খুলি গভীর গর্তযুক্ত, মগজ সম্পূর্ণ বাহির হওয়া অবস্থায়। যাহার আঘাতের পরিমাণ প্রস্থে অনুমান ৬ ইঞ্চি, লম্বায় অনুমান ৭ ইঞ্চি।”
তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন, প্রতিবেদন তার কাছে এখনো আসেনি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মং টিংঞোর মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুবক্তাগিন মাহমুদ শহিল এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে যাকে আটক করা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল সেই শিক্ষানবিশ আইনজীবী জাহেদুল ইসলামকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তার বাবা সাবের আহমেদ বলেন, জাহেদের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কক্সবাজারের সমিতিপাড়ায় মূলত ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বাস্তুচ্যুত হওয়া প্রায় ৫০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু বসবাস করেন।
স্থানীয়রা বলছিলেন, বিমান বাহিনী ঘাঁটি নির্মাণের কারণে তারা ‘উচ্ছেদ আতঙ্কে’ ভুগছিলেন। এলাকার মানুষ ভূমি রক্ষার জন্য আন্দোলন করছিল।
আরও পড়ুন:
কক্সবাজার বিমান ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষ: 'এলাকাবাসীকে সন্ত্রাসী বানানো