Published : 17 May 2025, 07:30 PM
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ফেইসবুকে মহানবীকে (স.) নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ওঠার পর এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওই যুবকের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত কয়েক দফা থানা ঘেরাও, সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তৌহিদি জনতা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই যুবককে থানা হেফাজতে নেওয়া হয় বলে জানান বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ।
তবে ওই যুবকের মায়ের দাবি, তার ছেলের নামে কেউ ফেইসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ধর্মকে অবমাননা করে পোস্ট দিয়েছেন। এ ঘটনায় তার ছেলে থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন।
গ্রেপ্তার সৌরভ দত্ত (২৪) উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের বেবাজ গ্রামের বাবুল দত্তের ছেলে।
ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সৌরভের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানাসহ সাইবার আইনে মামলা হয়েছে। রাতেই তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
কলসকাঠি এলাকার বাসিন্দা কাওসার হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
ওসি বলেন, “যতটুকু জানতে পেরেছি, সৌরভ দত্তের নাম ও ছবি দিয়ে ফেইসবুকে আইডি খুলে পোস্ট দেওয়া হয়েছে।”
নিজের নামে ভুয়া আইডি খুলে কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছে, এমন অভিযোগে সৌরভ শুক্রবার বিকালে থানায় জিডি করেন বলে জানান ওসি আবুল কালাম আজাদ।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ফিরোজ আলম বলেন, “শুক্রবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে মহানবীকে (স.) কটূক্তি করে পোস্ট দেওয়া হয়। এতে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হলে সৌরভ দত্ত সন্ধ্যায় থানায় জিডি করে চলে যায়। তবে আলেম-ওলামারা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেননি।
“তারা থানা ঘেরাও করেন। রাত ১১টার দিকে পুলিশ সৌরভকে থানায় নিয়ে যায়। তখন পরিস্থিতি খারাপ হয়। জনগণ সৌরভকে পেলে মেরে ফেলত। তখন তাকে বরিশালে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এতে তৌহিদি জনতা আরও ক্ষুব্ধ হলে সৌরভকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি ভিডিও কলে দেখানো হয়।”
তিনি বলেন, ভোরে এলাকার সব মসজিদের মাইক থেকে সৌরভের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী ফজরের পর মানুষ সড়ক অবরোধ করে। সেখানে সৌরভের ফাঁসি দাবি ও বাকেরগঞ্জ থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
এ ঘটনায় শনিবার বিকাল ৫টার মধ্যে ওসি আবুল কালাম আজাদ ও এসআই তোফাজ্জেলকে প্রত্যাহার এবং সৌরভের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। অন্যথায় তারা কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর কলসকাঠী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি ও কলসকাঠী ডিগ্রি কলেজ জামে মসজিদের ইমাম মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার পৌনে ৪টার দিকে স্ট্যাটাসটি তার নজরে আসে। তখন মসজিদের পাশেই সৌরভের বাড়িতে তিনি ছুটে যান। যখন সৌরভের সঙ্গে তার সরাসরি কথা হচ্ছিল, ঠিক তখনই একই আইডি থেকে আরও একটি কটূক্তির স্ট্যাটাস দেওয়া হয়।
তখন ওই আইডি সৌরভের নয় বলে নিশ্চিত হন তিনি। কেউ তাকে ফাঁসানোর জন্য হয়ত এটি করেছেন বলে মনে করেন মিজানুর।
সৌরভের বাবা বাবুল দত্ত মোবাইল ফোনে বলেন, “ঝড়ের কারণে দুই দিন ধরে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পরিবারের কেউ নেট ব্যবহার করতে পারছেন না। শুক্রবার বিকালের দিকে ইমাম মিজানুর রহমান আমাদের বাড়িতে আসেন।
“তার মাধ্যমেই জানতে পারি, আমার ছেলের ছবি দিয়ে কেউ আইডি তৈরি করেছে। সেই আইডি দিয়ে নবীকে কটূক্তি করা হচ্ছে। পরে মিজানুর রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী ছেলে থানায় গিয়ে জিডি করে। কিন্তু সন্ধ্যায় পুলিশ সৌরভকে তাদের হেফাজতে নিয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “আমার ছেলে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। কেউ তাকে ফাঁসাতে চাইছে। তদন্তে আমার ছেলে দোষী হলে তার শান্তি হোক এটা যেমন চাই, তেমনি যারা আমার ছেলেকে ফাঁসাতে চাইছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।”