Published : 12 Oct 2016, 11:27 AM
রৌমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার গত শুক্রবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই রায় দেন।
কুড়িগ্রামের একজন সরকারি কৌঁসুলি এবং ফৌজদারি মামলায় অভিজ্ঞ ঢাকার আদালতের একজন আইনজীবী বলেছেন, এভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায় দেওয়ার কোনো এখতিয়ার আইনে দেওয়া হয়নি।
রৌমারী থানার এসআই মশিউর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে রৌমারীর মাদারটিলা ব্রিজ এলাকায় মদপানের সময় তিন তরুণকে আটক করেন তারা।
পেশকার আবুল কাসেম এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাননি।
রৌমারী থানার ওসি এবিএম সাজেদুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপস্থিত ছিলেন না; তবে মোবাইল ফোনে ‘সব কার্যক্রম’ পরিচালনা করেছেন।
ঢাকা থেকে রৌমারীতে ফিরে ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওসি সাহেব আমাকে মোবাইল ফোনে জানালেন তিনজন মাদকসেবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার করা দরকার। কিন্তু আমি তখন ঢাকায়।
“মাদকসেবীরা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে এমন তথ্য জানানোর পর আমি প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করি। মোবাইল ফোনে এভাবে রায় প্রদান আমি করতে পারি।”
২০০৯ সালের মোবাইল কোর্ট আইনে আদালতের ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:
৬। (১) ক্ষমতাপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ধারা ১১ এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আইন শৃংখলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করিবার সময় তফসিলে বর্ণিত আইনের অধীন কোনো অপরাধ, যাহা কেবল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য, তাহার সম্মুখে সংঘটিত বা উদ্ঘাটিত হইয়া থাকিলে তিনি উক্ত অপরাধ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলেই আমলে গ্রহণ করিয়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে, স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে, দোষী সাব্যস্ত করিয়া, এই আইনের নির্ধারিত দণ্ড আরোপ করিতে পারিবেন।
আইনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে:
৭। (১) এই আইনের অধীন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করিবার সময় কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গৃহীত হইবার পরপরই মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট সংক্ষিপ্ত অভিযোগ লিখিতভাবে গঠন করিয়া উহা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঠ ও ব্যাখ্যা করিয়া শুনাইবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি গঠিত অভিযোগ স্বীকার করেন কি না তাহা জানিতে চাহিবেন এবং স্বীকার না করিলে তিনি কেন স্বীকার করেন না উহার বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানিতে চাহিবেন।
(২) অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ স্বীকার করিলে তাহার স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করিয়া উহাতে অভিযুক্তের স্বাক্ষর বা ক্ষেত্রমত, টিপসই এবং দুইজন উপস্থিত স্বাক্ষীর স্বাক্ষর বা, ক্ষেত্রমত, টিপসই গ্রহণ করিতে হইবে; এবং অতঃপর মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট তাহার বিবেচনায় যথোপযুক্ত দণ্ড আরোপ করিয়া লিখিত আদেশ প্রদান করিবেন এবং উক্ত আদেশে স্বাক্ষর করিবেন।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মোবাইল ফোনে রায় দেওয়া যায় না, এটা ‘পুরোপুরি বেআইনি’। ওই ঘটনায় মোবাইল কোর্টের বিধি মানা হয়নি।
“ভ্রাম্যমাণ আদালতে রায় দিতে হলে বিচারককে অবশ্যই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে। আদালত এক জায়গায় আর বিচারক অন্য জায়গা থেকে মোবাইল ফোনে রায় ঘোষণার ঘটনা নজিরবিহীন।”
ঢাকা বারের আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস বলেন, কেবল মোবাইল কোর্ট আইন নয়, বাংলাদেশে প্রচলিত কোনো আইনে মোবাইল ফোনে, বা ভিডিও কনফারেন্সে রায় দেওয়ার সুযোগ নেই।
“এটা তিনি পারেন না। রায় দিতে হলে বিচারককে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হবে। কোনো আইনেই এভাবে রায় দেওয়া যায় না।”
রৌমারীর ওসি এবিএম সাজেদুল ইসলাম জানান, তিন আসামির কাছ থেকে জরিমানার দুই হাজার টাকা করে আদায়ের পর তাদের ইতোমধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন - উপজেলার গোলাবাড়ি গ্রামের সোহরওয়ার্দী মণ্ডলের ছেলে রাফিউল ইসলাম সোহাগ (২২), সায়দাবাদ পশ্চিপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে রফিকুল ইসলাম পারভেজ (২১) ও মির্জাপাড়া গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে সজিব মিয়া (২০)।