Published : 23 Oct 2024, 11:30 AM
মৌলভীবাজারের বকেয়া মজুরির দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছে কমলগঞ্জ ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)’র মালিকানাধীন পাঁচটি চা বাগানের শ্রমিকেরা।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি পালন করেছেন কমলগঞ্জ উপজেলার এনটিসি’র পাত্রখোলা, কুরমা, চাম্পারায়, মদনমোহনপুর ও মাধবপুর চা বাগানের কয়েকশত চা শ্রমিক।
শ্রমিকরা জানান, তাদের ছয় সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। মজুরি না পেয়ে তারা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মালিকপক্ষ বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করলে তারা কাজে ফিরবেন না।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, “দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করা চা শ্রমিকরা এক সপ্তাহের মজুরি না পেলেই অবর্ণনীয় সমস্যায় পড়তে হয়। এরপরও তারা ছয় সপ্তাহ ধরে মজুরি পায়নি। কবে দেওয়া হবে তার কোনো নিশ্চয়তা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিতে পারছেন না।”
এর আগে মঙ্গলবার সকালে চা বাগানগুলির শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে কমলগঞ্জ পাত্রখোলা চা বাগানের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছিলেন।
মানববন্ধনে পাত্রখোলা চা বাগানের চা শ্রমিক নেতা প্রদীপ পাল বলেন, “মালিকপক্ষ বলেছিল শারদীয় দুর্গাপূজার আগে মজুরি দিয়ে দিবে। কিন্তু আমাদের মজুরি দেওয়া হল না। টাকা না পেলে আমাদের সংসার চলবে কিভাবে?
“আমাদের ঘরে খাবার নেই। আমরা অনেক কষ্ট করে চলছি। যদি অনতিবিলম্বে বকেয়া মজুরি পরিশোধ না হয়, তবে চা বাগানগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, বুধবারের মধ্যে তাদের পাওনা বকেয়া পরিশোধ না করলে কঠোর অবস্থানের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
কুরমা চা বাগানের শ্রমিক ও নারী নেত্রী গীতা রানী কানু বলেন, “কুরমা চা বাগানে অনেকেরই এখন কচু পাতা ভাতের নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছে। এমনিতে মাত্র ১৭০ টাকা হাজিরা যা এখন বাজারের সাথে সামঞ্জস্য নয়। তারপরে আবার বাগান ঠিকমতো তলব বা হাজিরা পেমেন্ট ঠিকমতো দিতে পারতেছে না, আর কতদিন পরে বাগানের কচু পাতাও মিলবে না।
“বাজারে যে হারে জিনিসপত্রের দাম তাতে বাগানবাসীর অনেক কষ্ট হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। বাগানে ঊধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বসে এটার একটা বিহিত করা দরকার, কতদিন বাগান এভাবে চলবে?”
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসকের বিভিন্ন উদ্যোগ ও আশ্বাস মালিকপক্ষের ব্যর্থতায় এর আগে সফল হয়নি। এমতাবস্থায় হতাশ শ্রমিকরা সোমবার থেকে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের সমর্থন দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি বা নতুন কোনো দাবি নিয়ে ধর্মঘট করছেন না। পাওনা পরিশোধ করলে পেট ভরে ভাত খেয়ে আগামীকাল কাজে যেতে শ্রমিকরা প্রস্তুত।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এমতাবস্থায় মালিকদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান করছি। সেই সঙ্গে মহাপরিচালক, শ্রম অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের আবেদন করছি।”
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালীর সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, “এনটিসির মালিকানাধীন চা বাগানগুলোর মজুরি সমস্যার বিষয়ে এর আগেও আন্দোলন করেছেন শ্রমিকরা। কিন্তু কোনো সমাধানের পথ হয়নি। চা শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের সঙ্গে আছে।”
ন্যাশনাল টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার এমদাদুল হক জানান, “সমস্যাটির সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে, বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হলে এ সমস্যা থাকবে না।”