Published : 31 Oct 2024, 09:00 PM
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে এক স্কুল শিক্ষকের ২৫ শতাংশ জমির প্রায় দেড় শতাধিক লাউ গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে স্কুল শিক্ষক বুধবার হরিরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে জানিয়েছেন হরিরামপুর থানা ওসি মোহাম্মদ মুমিন খান।
উপজেলার চালা ইউনিয়নের পূর্ব খলিলপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম পাশের ইউনিয়নের হারুকান্দি আব্দুল কাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি কৃষিকাজও করেন।
১২-১৩ বছর আগে ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকেই তিনি বাড়ি সংলগ্ন ওই জমিতে লাউ, ধুন্দুল, করলা ও কচু চাষ করে আসছেন। গত বছরও প্রায় ২ লাখ টাকার লাউ বিক্রি করেছিলেন তিনি। কৃষিতে তার এমন সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন গ্রামের অনেকে।
এবারও একটি ক্ষেতের লাউ বিক্রি শুরু করেছিলেন আর আরেকটা ক্ষেতে ছোট ছোট লাউ আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার বাগানের ৪০০-৫০০ লাউসহ দুটি ক্ষেতের সব গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে সিরাজুল ইসলামের লাউ ক্ষেতে দেখা যায়, ক্ষেত দুটির গাছগুলি গোড়া থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। লাউ গাছগুলো মাচার ওপর নুয়ে পড়ে আছে। পাতা মরে গেছে। শতাধিক কাটা লাউ ক্ষেতেই পড়ে আছে।
সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার ২৫ শতাংশের দুইটি জমিতে হাজারি জাতের লাউয়ের চাষ করেছেন তিনি। শিক্ষকতার পেশায় ব্যস্ততার সময় তার বাবা আব্দুল রউফ ও মা শিরিন বেগম ক্ষেতের দেখাশোনা ও পরিচর্যা করেন।
এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, লাউ ক্ষেতের সঙ্গের ২০ শতক একটি জমি তিনি কিনেছেন। তার প্রতিবেশি হাকিম উদ্দীনও সেটি কিনতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে হাকিম উদ্দীনের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে।
এছাড়া এর আগে একই জমিতে তিনি ধুন্দল চাষ করেছিলেন। তখন হাকিম উদ্দীনের ছাগল ধুন্দল গাছসহ ফসল নষ্ট করে। তা নিয়ে তার বাবা আব্দুল রউফের সঙ্গে হাকিম উদ্দীনের কথা কাটাকাটি হয়েছে।
সিরাজুল ইসলামের অভিযোগ, “জমি কেনা ও কথা কাটাকাটির জেরে বড় ১০০ লাউ ও ছোট ৩০০-৪০০ লাউসহ দুটি ক্ষেতের লাউ গাছ কেটে ফেলেছে হাকিম।”
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাকিম উদ্দীনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে কল দিলেও সেটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এদিকে লাউ গাছের সাথে এমন শত্রুতা মেনে নিতে পারছেন না গ্রামের সাধারণ মানুষও। তাদের দাবি এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
একই গ্রামের আরেক লাউ চাষী ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিরাজুল লাউ চাষে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তার ক্ষেতের কাছাকাছি আমারও একটি লাউ ক্ষেত রয়েছে।
“সে সবসময় আমাদের কৃষি বিষয়ক বুদ্ধি-পরামর্শ দিত। কিন্তু তার এতো বড় ক্ষতি করা হল। প্রশাসনের কাছে দোষীর শাস্তি দাবি করছি।”
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, “কৃষি অফিস থেকে সিরাজুল ইসলাম ও তার বাবাকে সব সময় সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। তার ক্ষেতের সব লাউ গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। খুবই বাজে কাজ করা হয়েছে।”
হরিরামপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মুমিন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্তে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”