Published : 09 Aug 2023, 08:24 PM
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় মন্দিরের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে হামলায় আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর উত্তেজিত সমর্থকরা প্রতিপক্ষ জাসদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এক সপ্তাহ আগে হামলায় আহত কুষ্টিয়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সঞ্জয় প্রামাণিক বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান বলে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই সম্পদ প্রামাণিক।
তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। হামলার একপর্যায়ে ভয় ও আতঙ্কে ভেড়ামারা উপজেলা সদরের বাজারের সব দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সরকার-সমর্থক বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষ জাসদ সমর্থকদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় চার পুলিশ সদস্যসহ অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হন।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম জানান, অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে সকাল পৌনে ১১টা থেকে কাজ শুরু করেন তারা। বিকাল পর্যন্ত মোট চারটি বাড়ি এবং একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আগুন নেভানো হয়েছে। বাড়িগুলো পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্পট থেকে পাঁচজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভেড়ামারা থানার ওসি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের পৈত্রিক বাড়ি এই আসনে হলেও তিনি সংসদ সদস্য কুষ্টিয়া সদর আসনের।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই এখানে রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে; যা বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে এসেছে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সময়ও এখানে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে মামলাও রয়েছে।
এর মধ্যে আবার ভেড়ামারায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।
তবে এ ধরনের ঘটনা জাসদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থের কারণেই কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না বলে মন্তব্য করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।
নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয়ের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত গত ২ অগাস্ট রাতে। স্থানীয় একটি মন্দিরের কমিটি গঠন নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরে সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভেড়ামারা শহরের গোডাউন মোড় এলাকায় সঞ্জয় প্রামাণিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এ সময় ধারাল অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় কোপ দেওয়া হয়। হামলায় সঞ্জয়ের সঙ্গে থাকা বেলাল ও শ্যামল নামে আরও দুই স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আহত হন।
আহতরা জানান, জাসদ যুবজোটের জেলা ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান শোভনের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন এই হামলা চালিয়েছেন।
সেই রাতেই সঞ্জয়ের উপর হামলা ও গুলির ঘটনায় তার স্ত্রী বিথী রানী বাদী হয়ে জাসদ যুবজোট নেতা মুস্তাফিজুর রহমান শোভনসহ ১৪ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে ভেড়ামারা থানায় মামলা করেন।
গুরুতর আহত সঞ্জয়কে গত শুক্রবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম স্বপন বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মারামারির ঘটনার সঙ্গে জাসদের রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই মুস্তাফিজুর রহমান শোভনকে ঘটনার পর পরই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কোনো জবাব না পেয়ে আজ তাকে শৃঙ্খলা ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন, “যা ঘটেছে সেই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আইনিভাবেই তার বিচার হবে। কিন্তু তার আগে হামলা-ভাঙচুর কাম্য হতে পারে না।”
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, “একটি সামাজিক ইস্যু নিয়ে হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এর আগেও এসব ইস্যু নিয়ে হামলা ও মারামারি হয়েছে, সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা দলের উপর চলে আসে। আমি মনে করি, সেটা ঠিক না; দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত।
“ভেড়ামারাতেও যা হয়েছে সেটা তাই। সামাজিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। আমি এটা সঠিক মনে করি না।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে জাসদ রয়েছে। একে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থের কারণেই কোনো ধরনের প্রভাব দুই দলের উপর পড়বে বলে আমার মনে হয় না।”