Published : 06 Apr 2025, 04:24 PM
শরীয়তপুরের জাজিরায় মুহুর্মুহু হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সংঘর্ষের বিষয়ে সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ায় এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার রাতে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বাড়িতে শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর পাশাপাশি চারজনকে মারধর করা হয়েছে বলেও দাবি ভুক্তভোগীদের।
তবে পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকা পুরুষশূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় এমন হামলার সুযোগ নেই।
রোববার সকালে বিলাসপুর ইউনিয়নের আহসান উল্লাহ মুন্সি কান্দির এলাকার ফেরদৌসি আকতার বলেন, “ঘটনার পর আমরা সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার কারণে রাতে জলিল মাদবর সমর্থকরা বাড়ি এসে শতাধিক বোমা ফাটিয়ে হুমকি দিয়ে গেছে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
তিনি আরও বলেন, “পুলিশ এলাকায় ঢুকলে জলিল সমর্থকরা গা ঢাকা দেয়। পুলিশ চলে গেলে আবার এসে হুমকি দেয়। এটা পুলিশকে জানিয়েছি।”
স্থানীয় কাজিয়ার চরএলাকা আহাদ ইসলাম বলেন, “কথা বললেই যদি এমন হুমকির মুখে পড়তে হয়, তবে আমরা কিভাবে বাঁচব?”
নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, শনিবার রাতেই জলিল মাদবর সমর্থকরা মুলাই বেপারী কান্দি, সলিমুল্লাহ মাদবর কান্দি ও আহসান উল্লাহ মুন্সি কান্দি এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়।
তারা শতাধিক বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষ আ. কুদ্দুস বেপারীর চার সমর্থককে মারধর করে।
আহতরা হলেন, আব্দুল হক মুন্সী, তার বড় ছেলে কুদ্দুস মুন্সী এবং নাতি শুভ মুন্সী এবং কাজিয়ার চর এলাকার ছাত্তার মুন্সী।
এ ব্যাপারে জাজিরা থানার ওসি মো. দুলাল আকন্দ বলেন, “ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন আছে। শনিবার রাতে এলাকায় সেনা সদস্যসহ যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে।
“গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকায় কোনো পুরুষ মানুষ নেই। তাই এমন হামলার কোনো সুযোগ নেই। মানুষই নেই হামলা করবে কারা।”
এ বিষয়ে জানতে জলিল মাদবরকে একাধিক বার ফোন করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায় এবং সমর্থক কাউকেই পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, বিলাশপুর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান চেয়ারম্যান আ. কুদ্দুস বেপারী এবং পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আ. জলিল মাদবরের মধ্যে বিরোধ চলছে। তারা দুজনই জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
এই বিরোধের জের ধরে এলাকায় একাধিকবার সংঘর্ষে প্রাণহানিসহ শতাধিক লোকজন আহতের ঘটনা ঘটেছে। উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক ডজন মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
পরে শনিবার সকালে দূর্বাডাঙ্গা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ হয়।
এ সময় বাড়িঘর ভাঙচুরসহ পাঁচ শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এক পর্যায় মুলাই বেপারী কান্দি, সলিমুল্লাহ মাদবর কান্দি ও আহসান উল্লাহ মুন্সি কান্দি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে পুলিশ ও যৌথবাহিনী খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দুপক্ষের এ সংঘর্ষ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে।
১৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি খোলা মাঠে উভয় পক্ষের লোক মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। সেখানে হেলমেট পরিহিত অনেকের হাতে বালতি দেখা যায়। সেসব বালতি থেকে হাতবোমা নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। হাতবোমাগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে মাঠজুড়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করছে।
পুলিশ বাদী হয়ে মামলা, গ্রেপ্তার ৭
সংঘর্ষের ঘটনায় রোববার জাজিরা থানার পুলিশের এসআই সঞ্চয় কুমার বাদী হয়ে ৮৬ জনকে আসামি করে আরও অজ্ঞাত ৮০০ থেকে ১ হাজার লোককে আসামি করে মামলা করেছেন।
রোববার বেলা ১১টার দিকে নড়িয়া সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশিকুর রহমান বলেন, মামলায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আ. কুদ্দুস বেপারীকে গ্রেপ্তার করে।
এছাড়া জাজিরা বিলাসপুর এলাকা থেকে সাদ্দাম হোসেন (৩৫), শাহ আলম (৪২), শাহজাহান (৪৪), মতিউর রহমান (৪৭), শেখ আ. মালেক (৫৫), সাহাবুদ্দিন শেখকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডের আবেদন করে শরীয়তপুর আদালতে তোলা হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
এছাড়াও অভিযানের সময় বোমা তৈরির কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা করেছে বলে জানিয়েছে জাজিরা থানার পুলিশ।
ওসি দুলাল আকন্দ বলেন, ঘটনার পর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকা পুরোপুরি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন
'যার বোমা থাকবে সে জিতবে, যার বোমা শেষ সে পালিয়ে যাবে'
জাজিরার মাঠে আধিপত্যের লড়াই: বালতিতে হাতবোমা, মাথায় হেলমেট, মুহুর্মুহু বিস্ফোরণ