Published : 12 May 2025, 09:02 PM
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সামনে চার দফা দাবিতে আন্দোলনরত ইজিবাইক চালকদের বিরুদ্ধে যানজট নিরসনের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের ওপর হামলা অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ১৯ জন আহত হয়েছেন।
এ সময় হামলাকারীরা সিটি করপোরেশনের নগরভবনের ভেতরে ঢুকেও হামলা ও ভাঙচুর চালায় বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল উদ্দিন।
আহতরা হলেন- সিটি করপোরেশনের যানজট নিরসন সুপারভাইজার সম্রাট ইসলাম (৩০), যানজট নিরসন কর্মী মো. শাওন (৩৫), লিটন (৩৮), পলাশ (৩৪), মোহাম্মদ আলী (৩০), সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী শামসুন্নাহার শিমলা (২২), মোস্তাফিজুর রহমান মুহিন (১৮), সাগর দাস (২০), মাসুম বিল্লাহ ফারাবি (২৩), মাহিদুল আল মাহি (২২), মাহিদুল আল মাহি (২২), মাহফুজ আহমেদ (২২), সোনারগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম ইমন (২২), ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাতুল দেওয়ান (২২), সরকারি কদমরসুল কলেজের সিয়াম সরকার (২৪), মো. নাহিদ ইসলাম হৃদয় (১৮), শফিকউদ্দিন শিফন (১৮), নারায়ণগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল এম এ মাদ্রাসার মিনহাজ প্রিন্স (২০), নারায়ণগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থী শেখ সামি (১৮) এবং মো. সানভী (২১)।
এ ছাড়া ইজিবাইক চালক রিপন (২৮) ও সুমন (৩২) আহত হয়েছেন বলে দাবি তাদের সহকর্মীদের।
নগরে বিনা বাধায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল, চাঁদাবাজি বন্ধ ও নির্ধারিত স্ট্যান্ডের দাবিতে সকাল ১০টা থেকে নগরভবনের সামনের সড়কে আন্দোলন করছিলেন চালকরা। এক পর্যায়ে তারা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত দাবিও পেশ করেন।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি আলোচনার পর সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ সেখান থেকে চলে গেলও বেশ কয়েকজন সেখানেই থেকে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী সিটি করপোরেশনের কর্মীরা জানান, সিটি করপোরেশনের যানজট নিরসনের দায়িত্বে থাকা কর্মী ও শিক্ষার্থীরা নগরভবনের প্রধান ফটকের সামনে গেলে তাদের সঙ্গে ইজিবাইক চালকদের কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ইজিবাইক চালকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান।
এ সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটক টপকে তালা ভাঙারও চেষ্টা করতেও দেখা গেছে। পরে আন্দোলনকারীরা নগরভবনের ভেতর ঢুকে ভাঙচুর চালান।
হামলার ঘটনার পর আহতরা অন্তত দুই ঘণ্টা নগরভবনে অবরুদ্ধ ছিলেন। পাশে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে থাকলেও নগরভবনের সামনে ইজিবাইক চালকদের অবস্থান থাকায় তারা চিকিৎসা নিতে পারেননি।
পরে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে আহতরা হাসপাতালে যাবার সুযোগ পান।
আহত সুপারভাইজার সম্রাট ইসলাম বলেন, “যানজট নিরসন কর্মীদের নিয়ে নগরভবনে ঢোকার পথে তাদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান ইজিবাইক চালকরা।”
“ইজিবাইক শহরের ভেতর প্রবেশ নিষেধ। সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী গত সপ্তাহে কয়েকটি ইজিবাইক যানজট নিরসন কর্মীরা আটক করে নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করেন। যেহেতু আমরা যানজট নিরসনের দায়িত্বে আছি, তাই ওরা (চালকরা) আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। আমরা বুঝতেই পারিনি। এটা ধারণায় থাকলে আমরা সেখানে যেতামই না।”
আহত শিক্ষার্থী শিমলা বলেন, “আমরা কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা হামলা শুরু করেন।”
আন্দোলনকারী ইজিবাইক চালক মোহাম্মদ রাসেলের অভিযোগ, “সিটি করপোরেশনের সুপারভাইজার সম্রাট চালকদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়। যারা তাকে চাঁদা দেয়, তাদের শহরে ঢুকতে দেন। বাকিদের জরিমানা করেন।
“এ কারণে লোকজন তাকে দেখার পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি আবার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের কয়েকজনকে মারধরও করেন।”
পুলিশ পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, “খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে দুই পক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে। এটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল।”
তিনি বলেন, ঘটনার পর ইজিবাইক চালকরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিলেন। পরে তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
বিকালে পৌনে ৫টার দিকে নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জোসেফ। এ সময় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি।
শিক্ষার্থীরা এ হামলার ঘটনায় জোসেফের অনুসারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেন। পরে তিনি বিষয়টি ‘সমাধান করবেন’ বলে আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা শান্ত হন।
জোসেফ বলেন, “সিটি করপোরেশন আমাকে (মোবাইলে) কল দিয়ে ডেকেছিলেন বলে আমি এসেছি। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা দরকার তা আমরা করেছি।”