Published : 14 Sep 2024, 05:37 PM
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ‘নারীদের মারধর ও হয়রানির’ ঘটনায় আটক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শনিবার বিকালে হেনস্তার শিকার প্রিয়া মনি বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন বলে জানান কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, “তৃতীয় লিঙ্গের একজন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় আটক মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম ছাড়াও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।”
আসামিকে এরই মধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
‘মারধর ও হয়রানির’ তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শুক্রবার রাতে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ফারুকুলকে (২৩) আটক করে। তিনি পরিবারের সঙ্গে ওই এলাকায় থাকেন। তাদের আদিবাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার চুনতি এলাকায়।
ফারুকুল তার ফেইসবুক আইডিতে গত বুধবার শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকায় ‘ভাসমান যৌনকর্মীদের’ লাঠি নিয়ে তাড়িয়ে মারধর করার একটি ভিডিও দিয়েছিলেন।
শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে আযম খান নামের এক ব্যক্তি ফেইসবুকে তিনটি ভিডিও দিয়ে লেখেন, “কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শরীয়া পুলিশিং চালাচ্ছে স্থানীয় সমন্বয়কেরা। কোন নারীকে একা পেলে, কারো পোষাক পছন্দ না হলে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের আক্রমণ করছে। কক্সবাজার এখন আফগানিস্তান।”
ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকটে একা বসে থাকা ‘এক তরুণীকে’ লাঠি হাতে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ‘ওই তরুণীর’ পরিচয় এবং কেন রাতে একা সৈকতে অবস্থান করছেন জানতে চান। ‘তরুণীটি’ ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি।
এক পর্যায়ে যুবকরা সৈকতের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই ‘তরুণীকে’ সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।
দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, আরেক ‘তরুণীকে’ ঘিরে রয়েছে কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে লাঠি হাতে আছেন কয়েকজন যুবক।
ওই যুবকদের মধ্যে একজন লাঠি দেখিয়ে ওই ‘তরুণীকে’ নির্দেশ দিচ্ছিলেন কান ধরে উঠবস করতে। পরে ভয়ার্ত ওই ‘তরুণী’ উঠবস করতে থাকলে ঘিরে থাকা লোকজনকে অশ্লীল মন্তব্য করতে শোনা গেছে ভিডিওতে।
আরেকটি ভিডিওতে সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ভুক্তভোগী এক ‘তরুণী’সহ আরও একজনকে দেখা যায়।
সেখানে সাধারণ পোশাকের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে এক ‘তরুণী’ কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ করতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রবেশ করেন লাঠি হাতে ‘তরুণীকে’ উঠবস কজরানো সেই যুবক।
এসময় ওই‘ তরুণী’ যুবকে দেখিয়ে বলছিলেন, “উনি আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলিট করে দেব।”
এসব ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয় পুলিশ। ভিডিও দেখে ফারুকুলকে শনাক্ত করার পর তাকে আটক করা হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, “হেনস্তার শিকার ভিডিও তিনটি তিনি দেখেছেন। এরপর খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছেন, ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে কিছু শিক্ষার্থী সৈকতে ভ্রমণে আসেন ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে। এ সময় তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজনকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি আইনগত অপরাধ।”
ঘটনার সময় উপস্থিত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
এদিকে ফারুকুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ নন বলে দাবি করেছেন কক্সবাজারের স্থানীয় সমন্বয়করা।
তবে আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা মত ও পথের ছাত্র-জনতার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে কক্সবাজারের অন্যতম সমন্বয়ক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, “আটক যুবক জেলার সমন্বয়ক বা নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ নন। আন্দোলনে যেহেতু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশা, মত ও পথের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল; আটক যুবকেরও অংশগ্রহণ থাকতে পারে। তাই বলে তিনি সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।”
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কেউ যদি নিজের উদ্যোগে বা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো কর্মসূচি নিয়ে থাকে সেটার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দায় নেই বলেও জানান শাহেদ।
তিনি বলেন, “ব্যক্তির দায়ভার সংগঠন নেবে না। ব্যক্তির কর্ম-অপকর্ম ব্যক্তিকেই জবাবদিহি করতে হবে।”