Published : 06 Jan 2023, 06:50 PM
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
শুক্রবার বিকালে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং তাদের বিরোধীপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রক্টর মনিরুল ইসলাম সোহাগ জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আরও বলেন, “এটা সংঘর্ষ না, জাস্ট ঢিল ছুড়াছুড়ি হয়েছে। হলগুলো কাছাকাছি এজন্য এ রকমটা হয়েছে।“
“এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। পাঁচজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজনকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহ পরান থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংঘর্ষে নয়জন আহত হয়েছে বলে শুনেছি। এর মধ্যে আমরা পাঁচজনের নাম পেয়েছি। ওসমানী মেডিকেলে একজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।”
এখন ক্যাম্পাস পরিস্থিতি শান্ত ও নিরিবিলি আছে উল্লেখ করে ওসি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীরা সবাই নিজ নিজ হলে পড়াশোনা করছেন। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে।“
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. এমাদুল হোসাইন বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদীয় ছাত্রলীগের কর্মীসভার ঘোষণা দেন।
এতে বাধা দেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধীরা। ওই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি শরীফ হোসাইন, সাব্বির মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসাইন, আকাশ ভূঁইয়া ও প্রান্ত ইসলাম।
বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তখন পাঁচটি আবাসিক হল থেকে দুই পক্ষের সমর্থকরা এক অপরের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে আহতের ঘটনা ঘটে।
এ সময় বিরোধীরা শাহ পরান হলে ঢুকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আশিকুর রহমানের কয়েকজন সমর্থকের কক্ষ ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সভাপতি আশিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য আমরা কর্মীসভার আয়োজন করি। এটি বানচাল করতে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে বিরোধীরা।
কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই সহসভাপতি শরীফ হোসাইন, সাব্বির মোল্লা ও সাংগঠনিক সম্পাদক আরমানের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে অভিযোগ করে সভাপতি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থবির করতেই এই হামলার ঘটানো হয়েছে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রশাসন বিরোধীদের ‘ইন্ধন’ দিয়েছে এমন অভিযোগ করে আশিকুর আরও বলেন, “এখন বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
সংঘর্ষের বিষয়ে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি শরীফুল ইসলাম বলেন, “অনুষদীয় কর্মীসভা ছিল আজ। গত কয়েক মাস আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়েছে। আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও হয়নি। হল কমিটিও হয়নি।”
“এই অবস্থার মধ্যে গতকাল তারা সাংগঠনিকভাবে অনুষদীয় কর্মীসভা দিয়ে দিছে। এতে করে ছাত্রলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সংগঠনের যে আইন-কানুন আছে সেটা তারা মানেননি।”
সহসভাপতি আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মনোনীত যে কমিটি ওই কমিটির নির্বাহী সদস্যদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্মীসভার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। একপর্যায়ে এই উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”
প্রক্টর মনিরুল ইসলাম সোহাগ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “ছাত্রলীগের সভাপতি আর সেক্রেটারি গতকালকে এসেছিল আমার কাছে। তারা বলল যে, অর্থনীতি আর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে কর্মীসভা করতে চায়। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমতি দেওয়া হয়।”
“পরে জানতে পারছি যে, সভাপতি আর সেক্রেটারি একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্মীসভার। তাদের কমিটির বাকিরা যারা আছে তাদের কোনো সম্মতি নাই। পরে বাকিরা বলল যে, কর্মীসভা হবে, আমাদেরকে কেন জানানো হয়নি। এগুলো নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে।”
একটি পক্ষকে ‘ইন্ধনের’ অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর আরও বলেন, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কী কারণে সভাপতি এ ধরনের অভিযোগ করেছেন তা আমি জানি না।“