Published : 26 Feb 2023, 08:41 PM
‘ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায়’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
গত শুক্রবার গভীর রাতে হলের ২১৯ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে বলা হয়।
এ ঘটনায় বিচার চেয়ে রোববার হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।
তবে এ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ অস্বীকার করেছে।
কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনে তোলপাড়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অভিযোগ পাওয়া গেল।
অভিযোগকারী বিশ্বিবিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
অভিযোগে বলা হয়, গত শুক্রবার [২৪ ফেব্রুয়ারি] রাত ২টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন সিনিয়র ভাই (প্রেসিডেন্ট ব্লক) ২১৬ নম্বর কক্ষের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ডাকেন। ডাকা হয় ২১৯ নম্বর কক্ষে।
এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ তার সঙ্গে কয়েকজনকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং সারা রাত হলের গেস্ট রুমে তালাবন্ধ করে রাখা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের আতিক শাহরিয়ার, বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ইমরান মির্জাসহ ইংরেজি, ফার্মেসি, চারুকলা, সরকার ও রাজনীতি, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।
এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "গত শুক্রবার রাতে ৪৮ ব্যাচের ভাইয়েরা আমাদের ২১৯ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। গত কয়েকদিনে কেন আমরা ছাত্রলীগের প্রোগ্রামগুলোতে ছিলাম না এ বিষয়ে জানতে চান। আমার পরীক্ষা চলমান থাকায় আমি থাকতে পারিনি বললে তারা উত্তেজিত হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসেন। এক পর্যায়ে তারা আমাকে শার্ট খুলতে বলেন। শার্ট খুলতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে এলোপাথাড়িভাবে মারতে থাকেন।"
"পরবর্তীতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে না থাকলে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে আমরা বিষয়টি হল প্রাধ্যক্ষকে অবহিত করি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আজ রোববার প্রাধ্যক্ষ স্যার বরাবর অভিযোগ জমা দিই।"
এ ব্যাপারে অভিযোগে থাকা শিক্ষার্থী আতিক শাহরিয়ার বলেন, "আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। অভিযোগকারী ছেলেটা প্রায়ই রুমমেটদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। এজন্য আমরা তাকে রুমে ডেকে রুম পরিবর্তনের জন্য নির্দেশ দিই। তখন সে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। তাই আমরা তাকে বুঝিয়ে রুম ত্যাগ করতে বলি। তাকে কোনো রকম মারধর বা নির্যাতন করা হয়নি।"
অভিযোগে থাকা আরেক শিক্ষার্থী ইমরান মির্জা বলেন, "তাকে রুমে ডাকা হয়েছিল। তবে কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।"
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে আন্তর্জাতিক বিভাগের সাকিব বলেন, "চড় থাপ্পড়ের আওয়াজে আমি রুম থেকে উঠে এগিয়ে যাই। তখন দেখি ৪৮ ব্যাচের সিনিয়র ভাইয়েরা তাকে মারধর করতেছে। পরে তাকে আমি রুম থেকে বের করে নিয়ে আসি।"
এ ব্যাপারে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, "ঘটনা সম্পর্কে আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, "বিষয়টি সম্পর্কে আমার কাছে কেউ অভিযোগ জানায়নি। হলের প্রাধ্যক্ষ সংক্ষেপে জানিয়েছেন যে সিনিয়র-জুনিয়রদের কিছু একটা ঝামেলা হয়েছিল যার সমাধান হয়ে গেছে। হল প্রশাসন যদি আমাকে অফিসিয়ালি জানায় তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, "ছাত্রলীগ র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, "মারধরের ঘটনা সম্পর্কে আমি অবহিত নই। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যদি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে আমরা সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"
গত বছরের ২ অগাস্ট মধ্যরাতে একই হলের গেস্ট রুমে এক সাংবাদিককে মারধর করে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। উক্ত ঘটনায় জড়িতদের বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:
ফোনে ইবির নির্যাতিত ছাত্রীকে ‘ন্যায়বিচারের’ আশ্বাস ছাত্রলীগ সভাপতির
যা যা ঘটেছে ছাত্রলীগকে সব বলেছি: ইবির নির্যাতিত ছাত্রী
ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন জমা