Published : 15 Oct 2023, 09:36 PM
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে সকালে অভিযান চালিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সমসের আলীকে আটক করে ডিবি পুলিশ; পরে বিকালে ‘শর্ত সাপেক্ষে’ তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে রোববার খুব সকালে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এই সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় তার অনুসারীরা বাধা দেয়। এসময় ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে।
সমসের মেম্বারের ভাই মোশারফ হোসেনের অভিযোগ, অভিযানকালে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে; যাতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন।
আহতরা হলেন- চনপাড়া এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল খালেক (৫০), ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. রাজু (৩৬) ও আবু সাঈদ (৫৫)।
তাদের মধ্যে খালেক ও রাজু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।
তবে অভিযানের কথা জানালেও গুলি চালানোর বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশিদ।
ইউপি সদস্য সমসের আলী চনপাড়া ইউনিয়ন (সাংগঠনিক ইউনিয়ন) আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ও মাদকের একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, “সকালে সমসের মেম্বারকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে বিকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
“যদি এরপর প্রয়োজন হয় তাহলে ডাকলে তিনি আসবেন এই শর্তে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
গুলি চালানো এবং তিনজন আহতের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, “ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম সেখানে অভিযান চালিয়েছিল বলে জানতে পেরেছি। সেখানে গুলি চালানোর ঘটনা সম্পর্কেও অবগত হয়েছি। তবে কী কারণে তারা অভিযান চালিয়েছিল সেই বিষয়ে বিস্তারিত এখনও পাইনি। আমরা খোঁজখবর করছি।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৬টার দিকে সমসের আলীর বাড়ির সামনে সাদা একটি মাইক্রোবাস এসে থামে। গাড়ি থেকে অস্ত্র হাতে কয়েকজন সাদা পোশাকে নেমে আসেন। তারা কিছুক্ষণ পর সমসেরকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন।
খবর পেয়ে সমসেরের অনুসারীরা তার বাড়ির সামনে জড়ো হয় এবং পুলিশকে বাধা দেয়। তখন পুলিশ সদস্যরা তাদের পরিচয় দেন।
এক পর্যায়ে ডিবি পুলিশ সমসেরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি করে। ছররা গুলিতে তিনজন আহত হয়। পুলিশ সমসেরকে নিয়ে চলে যায়।
সমসের মেম্বারের ভাই মোশারফ হোসেন বিকালে বলেন, “সমসের তখন বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন। ৭-৮ জনের একটি দল হাতে অস্ত্র নিয়ে বাসায় আসে এবং নিজেদের ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। তারা সমসেরের সঙ্গে কথা আছে বলে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যায়। পরে তাকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন বাধা দেয়। তখন পুলিশ গুলি করে।”
সমসের বিকালে এলাকায় ফিরে আসেন এবং তার অনুসারীদের নিয়ে মিছিল শেষে তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজনের মদদে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে নির্যাতনেরও অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে সমসের আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ভাইয়ের ফিরে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে মোশারফ বলেন, “আমার ভাই ফিরে এসেছে শুকরিয়া। এখন আর বেশি কিছু বলতে চাই না।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, চনপাড়া বস্তি নামে অধিক পরিচিত এলাকাটি মাদক ব্যবসার জন্য কুখ্যাতি রয়েছে। এলাকার একজন প্রভাবশালী নিয়ন্ত্রক ছিলেন প্রয়াত ইউপি সদস্য বজলুর রহমান। তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে ইউপি সদস্য হন সমসের আলী। এখন তিনি চনপাড়া নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।