Published : 03 May 2023, 08:33 PM
এক বছর আগেও যে জমি ছিল নলখাগড়াসহ বিভিন্ন আগাছায় পরিপূর্ণ, সেই জমিতেই এখন সোনালি ধানের ঝিলিক। শত বছরের অনাবাদী জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হাসি ফুটিয়েছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কৃষকের মুখে।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ২৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় । তবে মোট আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে।
কৃষকরা বলছেন, এগুলো মূলত বিলের জমি। বছরের পর বছর জলাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকা এসব জমি ছিল আগাছায় পরিপূর্ণ। অনাবাদি জমিতে আবাদ করতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর স্থানীয় খাল পরিষ্কার ও খনন করা হয়। তখন এসব জমি থেকে পানি নেমে যায়।
এরপর কৃষি অফিস এই ৯৫০ হেক্টর অনাবাদি জমিতে চাষ করতে সার, বীজ ও শ্রমিক দিয়ে কৃষকদের চাষাবাদে সহযোগিতা করে।
বুধবার উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের ধারাবাশাইল বিলে কৃষক সজল বালার ৬৫ শতাংশ জমির ধান ‘রিপার’ মেশিন দিয়ে কাটার কাজ শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে নতুন আবাদ হওয়া জমির ধান কাটা শুরু হলো।
আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কাটা কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ।
এ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায়, কান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিন্দ্রনাথ রায়, কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুষার মধুসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন, এক ইঞ্চি জমিও অনবাদি রাখা যাবে না। তার সেই নির্দেশ পালনে আমরা অনাবাদি জমিতে আবাদ করার জন্য মাঠে নামি। সে লক্ষ্যে আমরা এ বছর ৯৫০ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আনতে পেরেছি।”
তিনি আরো বলেন, “এসব জমি শত বছর ধরে অনাবাদি ছিল বলে এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি। আশা করছি আগামীতে বাকি অনাবাদি জমিও আবাদের আওতায় আনতে সক্ষম হব।”
এসব জমি আবাদের আওতায় আনতে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে ৩২টি উদ্বুদ্ধকরণ সভা করেছে কৃষি বিভাগ। কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, “শত বছর ধরে অনাবাদি এসব জমি ও খালের জলাবদ্ধতা নিরসনসহ আগাছা পরিষ্কার করা হয়। এছাড়াও কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সার, বীজ ও শ্রমিক দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।”
এ ৯৫০ হেক্টর জমির ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারলে গত বছরের চেয়ে এবার ৬ হাজার মেট্রিক টন ধান বেশী উৎপাদিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, “এই উপজেলায় আরও ৮১৭ হেক্টর জমি অনাবাদি রয়েছে। আমরা আগামীতে এই জমিগুলোও আবাদের আওতায় নেব।”
কৃষক সজল বালা বলেন, “প্রায় ১০০ বছর ধরে আমরা যে জমিতে চাষাবাদ করতে পারিনি, এ বছর সেই জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। এ জন্য উপজেলা কৃষি অফিস আমাদের বিনামূল্যে সার, বীজ ও শ্রমিক দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আমাদের সব জমিতেই বাম্পার ফলন হয়েছে।”
কান্দি ইউপি চেয়ারম্যান তুষার মধু বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে তার নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রতিনিধি সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার এ কার্যক্রমের সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছেন। এসব জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় শত শত কৃষকের মুখে এখন হাসি ফুটেছে।”