Published : 24 Dec 2023, 11:29 AM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা যখন নিজ নিজ আসনে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন, মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাজাহান খান তখন মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের পক্ষেও সময় দিচ্ছেন।
গত কয়েক দিনে মাদারীপুর-৩ (সদরের একাংশ, কালকিনি ও ডাসার) আসনে গোলাপের বেশ কয়েকটি পথসভায় দেখা গেছে মাদারীপুর-২ (সদর একাংশ ও রাজৈর) আসনের এমপি শাজাহান খানকে। সোবহানের পক্ষে স্থানীয় হাটবাজারেও ভোট চাইতে দেখা গেছে সাবেক এই মন্ত্রীকে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, গোলাপের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব থাকায় ভোটের মাঠে তার পক্ষে নেই দলীয় নেতা-কর্মীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান সরদার ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে গোলাপের নির্বাচনি প্রচারে দেখা যায়নি। মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগমের পক্ষে কাজ করছেন।
এ কারণে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রচারে সরাসরি মাঠে নেমেছেন। তার সঙ্গে জেলার কয়েকজন নেতাকেও দেখা যাচ্ছে গোলাপের নির্বাচনি প্রচারে ।
শুক্রবার সকালে মাদারীপুর-৩ আসনের লক্ষ্মীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে গোলাপের সঙ্গে এক পথসভায় অংশ নেন শাজাহান খান। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আবুল বাশার এবং শাজাহান খানের ভাই আজিজুল রহমান খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে চরদৌলতখান ও মস্তফাপুর ইউনিয়ন এবং কালকিনি পৌর এলাকায় গোলাপের পক্ষে নৌকায় ভোট চান শাজাহান খান। শনিবারও ভুরঘাটা এলাকায় গোলাপের পক্ষে ভোট চান তিনি।
লক্ষ্মীপুর এলাকায় গোলাপের নির্বাচনি পথসভায় শাজাহান খান বলেন, “এই ভোট গোলাপ সাহেবের না। এই ভোট শেখ হাসিনার। যারা আওয়ামী লীগ করেন, তাদের নৌকায় ভোট দিতেই হবে। আর যারা নৌকায় ভোট দেবেন না, তারা আওয়ামী লীগ করেন না।”
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী জনসভা মাদারীপুর সদরে বা শিবচরে করবেন না। করবেন কালকিনিতে। জনগণকে বুঝতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোলাপকে কতটা স্নেহ করেন। তাই আমাদের সবাইকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে হবে।”
তবে গোলাপের পক্ষে সরাসরি প্রচারে নামায় শাজাহান খানের সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।
কালকিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, “আবদুস সোবহান গোলাপের নিজের কোনো জনপ্রিয়তা নেই। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ এমপি। তাই তিনি জেলা থেকে লোক হায়ার করে প্রচার চালাচ্ছেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শাজাহান খান মাদারীপুর-২ আসনের এমপি, তার ৩ আসনে কাজ কী? তিনি নিজের আসনে প্রচারে মন না দিয়ে কালকিনিতে পড়ে আছেন। তাকে (শাজাহান খানকে) এটা মানায় না।”
“যদিও এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই, কারণ আমরা আওয়ামী লীগ যারা করি, তারা সবাই ঈগলের গণজোয়ারে আছি।”
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের লোক। নৌকার পক্ষেই চিরকাল ছিলাম, থাকব। তবে মাদারীপুর-২ ও ৩ আসনে নৌকার প্রার্থীর প্রচারে আমরা নেই।
“তা ছাড়া মাদারীপুর-৩ আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম স্বতন্ত্র প্রার্থী। তার পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একযোগে মাঠে নেমেছেন। তার প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। কারণ, নেত্রী বলেছেন, জনগণের ভোটে যে হয়ে আসবে, সে-ই আমার।”
কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন বলেন, “আমি নিজে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তবে নৌকার প্রার্থী গোলাপের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেই। উপজেলা ও ইউনিয়নের সব কমিটির নেতা-কর্মীরা তাহমিনা বেগমকে সমর্থন দিয়েছেন।”
আর স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, “শাজাহান খান তার নির্বাচন রেখে কালকিনি-ডাসারে এসে একজন দুর্নীতিবাজ এমপির পক্ষে প্রচার-প্রচারণা করছেন। এটা তাকে মানায় না।”
তারা নির্বাচনের মাঠে এসে `আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মী যারা তাদেরকে হত্যা করা শুরু করেছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “শুক্রবার রাতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের একজন ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করেছে। নির্বাচনের মাঠ নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে নেমেছে। আমরা তাতে ভয় পাই না।”
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বলেন, “আমার সঙ্গে নেতাকর্মী ও জনগণ রয়েছে। ইনশাল্লাহ আগামী ৭ তারিখে জনগণ ঈগল পাখি মার্কায় ভোট দিয়ে কালকিনি থেকে এক দুর্নীতিবাজকে চিরতরে উৎখাত করে দেবে।”
তাহমিনা বেগমের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী যেসব অভিযোগ করেছেন সেসব ভিত্তিহীন। শুক্রবার আওয়ামী লীগ নেতা হত্যার সঙ্গে নৌকার নেতা-কর্মীদের কেনো সম্পর্র্ক নাই। পারিবারিক বিরোধের কারণে তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন বলে শুনেছি।”