Published : 22 May 2025, 07:15 PM
লিগের ব্যস্ততার মাঝে অন্য সব দিনের মতোই ব্রাদার্স ইউনিয়নের আঙিনায় এলেন আশরাফুল ইসলাম রানা; কিন্তু তাকে ঘিরে এদিনের আবহ ভিন্ন। মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচের প্রস্তুতির বিষয়টি যদিও থাকল; কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মূল হয়ে উঠল তার ঘোষণা। গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দীর্ঘ পেশাদার ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিলেন এই গোলরক্ষক।
পেশাদার ফুটবলকে তার এই বিদায় বলার ভাবনা অনেক দিন ধরেই। ভেবেই রেখেছিলেন যে, ২০২৫ সালে থেমে যাবেন। পরিবারের সবাই সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকায় আর দেরি করলেন না। তৃপ্তি-অতৃপ্তি মিলিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে দিলেন। বললেন, শুক্রবার মোহামেডানের বিপক্ষের লিগ ম্যাচটিই তার শেষ।
“আপনাদের মাধ্যমেই আসলে ঘোষণা করতে চাই, আগামীকাল মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই অবসরের ঘোষণা দিচ্ছি। এটা আসলে সব ধরনের ফুটবল থেকেই অবসর নেওয়া। আমার আসলে পরিকল্পনাই ছিল, ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্লাব ফুটবল চালিয়ে যাব। আমার মনে হচ্ছে, ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার এখনই সঠিক সময়।”
মানিকগঞ্জ থেকে উঠে আসা রানার প্রথম দল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল- লম্বা সময় সংস্থাটির হয়ে খেলার পর তিনি যোগ দেন মোহামেডানে। সাদাকালো জার্সি পরে তার পথচলা রঙিন ছিল না। ২০১৬ সালে থেমেও যায় সেই অধ্যায়।
এর মাঝে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দিতে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হয় রানার। জাতীয় দলের হয়ে খেলা ২৫ ম্যাচের সবশেষটি তিনি খেলেন ২০২১ সালে নেপালের বিপক্ষে।
২০২২ সালের নেপাল সফরের দলেও ছিলেন রানা; কিন্তু আনিসুর রহমান জিকো ততদিন কোচের প্রথম পছন্দের হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের পোস্টে আর ফেরা হয়নি রানার। বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করা এই গোলকিপার তাই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাতে পারলেন না মাঠ থেকে। বিদায় বেলায় এই অতুষ্টি আড়াল করেননি তিনি।
“মাঠ থেকে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা সবারই থাকে। কেউ পারে, কেউ পারে না। আমার পরিকল্পনাই ছিল এ বছর অবসর নেওয়ার। ব্রাদার্সের হয়ে যেমন খেলছিলাম, আমি খুশি ছিলাম। তবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানত আমরা ভাবনা।”
“জাতীয় দল থেকে ২০২৩ সালেই অবসর নিতে চেয়েছিলাম। হাভিয়ের কাবরেরা বিষয়টা জানত। তাকে বলেছিলাম, স্কোয়াডে থাকতেই আমি বিদায় নিব। ওই সময় জিকোরা ভালো করছিল, আমিও ভেবেছিলাম তরুণরা আসুক। আমি বিদায় নেই। কিন্তু তখন কাবরেরা আমার সাথে একমত হননি। এরপর যে কোনো কারণেই হোক জাতীয় দল থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেটা আমার জন্য দূর্ভাগ্যজনক। ওই সময় যদি মাঠ থেকে জাতীয় দলকে বিদায় জানাতে পারতাম, তাহলে আমার জন্য ভালো হতো।”
জাতীয় দলের হয়ে স্মরণীয়, হতাশার স্মৃতিও আওড়ালেন রানা। ৩৭ বছর বয়সী এই গোলকিপার ভবিষ্যৎ ভাবনা জানাতে গিয়ে বললেন, ফুটবলের সবুজ আঙিনায় নতুন ভূমিকায় ফিরে আসার আশাবাদ।
“ফুটবলে আমার সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত সল্ট লেকে ভারতের সাথে ড্র করা, আর সবচেয়ে হতাশার জায়গা ভুটানের বিপক্ষে হেরে ১৪ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে দূরে থাকা।”
“যেহেতু আমি ফুটবল দিয়েই রানা, ফুটবল দিয়েই যেহেতু আমার সবকিছু, এটা শুধু আমার পেশা ছিল না, ভালোবাসার জায়গা ছিল। অবসরের পর ফুটবলের সাথেই থাকব। হয় গোলকিপার কোচ হিসেবে কাজ করব, কিংবা সংগঠক হিসেবে কাজ করব। সামনের জুলাইতে গোলকিপিং কোচ-সি কোর্স শেষ করব। পরের মৌসুমে হয়ত কোনো ক্লাবের গোলকিপিং কোচ হিসেবেও আসতে পারি। জাতীয় দলের গোলকিপার কোচ হওয়ার আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছা আছে। যদি সুযোগ হয়, যদি আমার মনে হয়, এই কাজের জন্য আমি যথেষ্ট যোগ্য, তাহলে অবশ্যই সুযোগ পেলে কাজ করব।”
ক্লাব ফুটবলে চট্টগ্রাম আবাহনী, ধারে সাইফ স্পোর্টিংয়ে খেলার পর রানা থিতু হন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পোস্টে। এই ক্লাবের জার্সিতে ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত খেলেন তিনি। এরপর ফিরে যান চট্টগ্রাম আবাহনীতে।
বন্দরনগরীর দলটিতে দ্বিতীয় দফায় এক বছর কাটানোর পর ২০২৪ সালে রানা যোগ দেন ব্রাদার্স ইউনিয়নে। গোপীবাগের দলটির জার্সিতে চলতি মৌসুমে অবশ্য পোস্টে নিয়মিত ছিলেন না তিনি। লিগে ১৬ ম্যাচের সাতটি খেলেছেন, ক্লিন শিট রাখতে পারেন মাত্র একটিতে।
জাতীয় দলের মতো ক্লাব পর্যায়েও কোনো শিরোপা জেতা হয়নি রানার, কিন্তু তবুও পিছু ফিরে তাকিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে খুশি তিনি।
“আলহামদুল্লিল্লাহ, যা পেয়েছি তা নিয়ে সন্তুষ্ট। আমি অজপাড়া গাঁ থেকে উঠে এসেছি। প্রথাগত কোনো ট্রেনিং নিয়ে আমি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাইনি। আমরা যখন বেড়ে উঠেছি, তখন বাংলাদেশের ফুটবলের উন্মাদনা ছিল। গ্রামে গঞ্জে মাঠ ছিল, সবাই খেলত। সেখান থেকেই আমার উঠে আসা।”
“বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। সেনাবাহিনী থেকে বের হয়ে আসার কারণ জাতীয় দলে খেলা। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল জাতীয় দলে খেলার। ব্যক্তিগতভাবে সব মিলিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে খুশি আমি।”