Published : 03 Apr 2025, 01:35 PM
একই মানুষ, একই ফুটবলার। কিন্তু দুই ক্লাবের হয়ে পুরো ভিন্ন চেহারা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে মিইয়ে থাকা আন্তোনি রেয়াল বেতিসে প্রস্ফূটিত যেন আপন মহিমায়। এখানে মাঠের ভেতরের লড়াই তিনি যেমন উপভোগ করছেন, তেমনি ভালোবেসে ফেলেছেন মাঠের বাইরের জীবনও। সব মিলিয়ে উচ্ছ্বসিত ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের উপলব্ধি, তার জীবনের সবচেয়ে সেরা পদক্ষেপ বেতিসে যোগ দেওয়া।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ধারে রেয়াল বেতিসে যোগ দেওয়ার পর বলা যায় বিপ্লব গড়ে ফেলেছেন আন্তোনি। তিনি নিজে যেমন দারুণ পারফরম্যান্সে উদ্ভাসিত, তেমনি বদলে দিয়েছেন দলের চেহারাও। অথচ ইংল্যান্ডে তার আড়াই বছর ছিল হতাশাময়।
২০২২ সালের অগাস্টে ফুটবল বিশ্বে আলোচনার ঝড় তুলে ১০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ট্রান্সফার ফিতে আয়াক্স থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পাড়ি জমান আন্তোনি। কিন্তু প্রত্যাশার প্রতিফলন পড়েনি পারফরম্যান্সে। মাঝেমধ্যে কিছু ঝলক দেখালেও ছিল না ধারাবাহিকতা। তার ওপর আস্থা হারান সেই সময়ের কোচ এরিক টেন হাগ। এরপর হুবেন আমুরি কোচ হয়ে আসার পর তো আরও আড়ালে পড়ে যান তিনি। কোচের সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথাও শোনা যায়।
শেষ পর্যন্ত জানুয়ারির ট্রান্সফার উইন্ডোতে আন্তোনি ধারে বেতিসে পাড়ি জমান মৌসুমের বাকি সময়টার জন্য। প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ম্যান অব দা ম্যাচ হন তিনি। পরের ম্যাচে পেয়ে যান প্রথম গোলও। তৃতীয় ম্যাচে গোল করেন বক্সের বাইরে থেকে। প্রথম মাসেই লা লিগার মাস-সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি পান।
সেই ধারাবাহিকতা চলছে এখনও। নতুন ক্লাবের হয়ে ১২ ম্যাচে চারটি করে গোল করা ও সহায়তা করার পাশাপাশি দারুণ খেলে চলেছেন।
ব্রিটিশ ক্রীড়া ও বিনোদন প্ল্যাটফর্ম দাজোনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ২৫ বছর বয়সী তারকা বললেন, এই ক্লাব ও সেভিয়া শহরকে আপন করে নিয়েছেন তিনি।
“এখানে খুবই খুশি আমি। নিজেকে ফিরে পেয়েছি এখানে। এই ফিরে পাওয়াটা জরুরি ছিল, আনন্দে ফেরাটা দরকার ছিল। আমার পরিবারকে খুশি করার প্রয়োজনও ছিল। প্রতিটি দিন গড়াচ্ছে আর আমি বুঝতে পারি, আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত এটি।”
“এই শহর (সেভিয়া), ক্লাব, সবকিছুই আমি প্রতিটি দিন আরও বেশি উপভোগ করছি। এখানকার রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া, খাবার, আবহ, সবকিছু আমাকে ব্রাজিলের কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানকার মানুষও খুব উষ্ণ। আমি খুবই খুশি এবং আমাদের ব্রাজিলিয়ানদের জন্য এই মানসিক শান্তিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
আন্তোনি যোগ দেওয়ার আগে লা লিগার পয়েন্ট তালিকায় বেতিস ছিল দশে। তাকে নিয়ে টানা ছয় ম্যাচে জয়ের ধারায় তারা এখন উঠে এসেছে ছয়ে। এর মধ্যে আছে সেভিয়ার বিপক্ষে ডার্বি ম্যাচের জয়ও। এখন তারা স্বপ্ন দেখছে ২০ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়ার।
সেই স্বপ্নের পেছনে সাহসের নাম আন্তোনি। এই ক্লাবে দর্শক-সমর্থক, সতীর্থ সবার খুব প্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি দ্রুতই। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বেতিসের আরেক তারকা ইস্কো মুগ্ধতায় কদিন আগে বলেছেন, যে কোনো উপায়ে আন্তোনিকে ক্লাবে ধরে রাখতে চান তারা।
“আমাদের গণতহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন সে আরেকটি বছর এখানে থাকতে পারে। সে আসার পর থেকেই ক্লাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি আমরা। অনেক কিছু ক্লাবে বয়ে এনেছে সে। আন্তোনিকে এখানে পেয়ে আমরা খুবই খুশি। তার বিনয় ও সহায়তা করার তাড়না দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে সে।”
বেতিসে আন্তোনির ধারের চুক্তিতে ধরে রাখার শর্ত নেই। তবে যদি কোনো সুযোগ থাকে বা নিজের ওপর সিদ্ধান্তের ব্যাপার থাকে, তাহলে এখানেই থেকে যেতে চান তিনি। যদিও ইউনাইটেডের প্রতি ক্ষোভ নেই তার।
“ইউনাইটেডের প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ সবকিছুর জন্যই… সেখানে আমার কঠিন সময় যেমন কেটেছে, তেমনি ভালো কিছু সময়ও ছিল। এখানে (বেতিসে) আমি নিজেকে তৈরি করছি, উপভোগ করছি। ভাবনায় এখন এই ক্লাবই। এখানে খুবই খুশি আমি।”