Published : 14 Apr 2023, 10:52 PM
‘বাদল রায় যেন ফুটবল ফেডারেশনে না আসে’- প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার বাদল রায়ের স্ত্রী মাধুরী রায়ের করা জিডিতে উল্লেখ করা ছিল এই বাক্য। নিজের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছিলেন আবু নাঈম সোহাগ। ফিফার নিষেধাজ্ঞার পর সেই সোহাগ এখন শিরোনামে।
২০১৮ সালের ২৬ মে ওয়ারি থানায় জিডি করেছিলেন মাধুরী রায়। জিডিতে তিনি অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরেছিলেন; ‘হুমকির সুরে’ তার সঙ্গে নাকি কথা বলেছিলেন সোহাগ।
সেই জিডিতে বলা হয়, “আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী মাধুরী রায়, স্বামী: বাদল রায়, বর্তমান ঠিকানা-২ নং ওয়্যার স্ট্রিট, ওয়ারী, ঢাকা; গত ২৬/৩/২০১৮ ইং তারিখ বেলা ৩ ঘটিকার সময় ফুটবল ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক জনাব আবু নাঈম সোহাগ মোবাইল ফোনে আমাকে হুমকির সুরে বলেন, বাদল রায় যেন ফুটবল ফেডারেশনে না আসে। আমি কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যদি আসেনও তাহলে এসে এক কাপ চা খেয়ে চলে যাবেন, এর বেশি নয়।”
দেশের তারকা ডিফেন্ডার বাদল রায় প্রয়াত হন ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি। যদিও ওই জিডির পর সোহাগের বিরুদ্ধে তদন্ত এগোয়নি বেশি দূর। কিন্তু বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা ফিফার এথিকস কমিটির তদন্তে কারও ‘হস্তক্ষেপ’ করার সুযোগ নেই। স্বাধীন তদন্তের পর সংস্থাটি তাদের সিদ্ধান্ত শুক্রবার জানায়।
ফিফার দেওয়া ফান্ডের অপব্যবহার ও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় বাংলা নববর্ষের দিন শুক্রবার সোহাগকে দুই বছরের জন্য ফুটবলের সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া জরিমানা করেছে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ।
অভিযোগের ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান জানাতে গত ফেব্রুয়ারি ফিফার সুইজারল্যান্ডের সদরদপ্তরে ডাক পড়েছিল সোহাগসহ বাফুফের আরও তিন কর্মকর্তার।
ফিফার সদর দপ্তরে বাফুফের কর্মকর্তাদের ডাক পড়া নিয়ে সবসময় দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা বাফুফের কর্মকর্তাদের মুখে শোনা যায় মুখস্থ কথা- খরচের বিষয়ে নিয়মিত তদারকির জন্য ডাক পড়ে বিভিন্ন ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের। কিন্তু এবার বেরিয়ে এল থলের বিড়াল।
এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে। কিন্তু তিনি ফোনে সাড়া দেননি। প্রশাসনিক কাঠামোয় সোহাগ প্রধান হলেও বাফুফের ‘সর্বেসর্বা’ সভাপতি সালাউদ্দিন।
সোহাগের নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে ফোন করা এবং মুঠোবার্তা দেওয়া হলেও সাড়া দেননি সবশেষ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হওয়া বাফুফে সহ সভাপতি ইমরুল হাসানও। সবাই যেন মুখে ছিপি এঁটেছেন!
কিন্তু তাতে আড়াল হচ্ছে না কোনো কিছু। অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে বাফুফের ‘মারপ্যাচে’ সবশেষ সংযোজন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অলিম্পিক বাছাইয়ে মিয়ানমার সফর বাতিল। আর্থিক সংকটের কারণে ওই সফর বাতিল করা হয় বলে জানায় বাফুফে।
কিন্তু ওই সফরের জন্য বাফুফে যে খরচের তালিকা দিয়েছিল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে, সেখানেও উঠে আসে নানা অসঙ্গতি।
ঢাকা থেকে প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারে জনপ্রতি বিমান ভাড়া দেখানো হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, যা বর্তমান সময়ের বিমান ভাড়ার চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেশি। এছাড়া জার্সি, বাফুফে থেকে বিমানবন্দরে যাতায়াতের জন্য দেখানো ভাড়ার অঙ্কেও ছিল অসঙ্গতি।
মিয়ানমার সফর বাতিল করার বিষয়ে সোহাগ বলেছিলেন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ‘ফিডব্যাক’ না পাওয়ার কথা। পরে এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি জানান, অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের মধ্যে যেতে হয় এবং সেটা সময় সাপেক্ষ বিষয়ও। এ বিষয়ে বাফুফেকে ‘তদন্ত’ করার নির্দেশনাও দেন তিনি। এরই মধ্যে এল ফিফার সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পথেই থাকার কথা ছিল সোহাগের। কিন্তু তিনি আসেন ফুটবলের আঙিনায় ক্যারিয়ার গড়তে। ২০০৫ সালে বাফুফের হেড অব কম্পিটিশন্স পদে যোগ দেওয়ার পর ২০১১ সালে পান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। ২০১৩ সালে পূর্ণ মেয়াদে বসেন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে। সেই থেকে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে ‘আস্থাভাজন’ হয়ে ওঠেন অনেকের।
কিন্তু ফিফার এথিকস কমিটির বিবৃতিতে বেরিয়ে এসেছে সোহাগের কেলেংকারির চিত্র; বাফুফের আর্থিক অস্বচ্ছতার বিষয়টিও।
সোহাগের বিরুদ্ধে ফিফা আইনের তিনটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে এথিকস কমিটি: ফিফা এথিকসের ১৩ ধারা (সাধারণ কর্তব্য), ১৫ ধারা (আনুগত্যের দায়িত্ব) এবং ২৪ ধারা (জালিয়াত ও মিথ্যাচার)।