Published : 04 May 2020, 03:24 PM
করোনাভাইরাস প্রকোপের এই মন খারাপ করা সময়ে ভারোত্তোলক মাবিয়া ফিরে তাকালেন চার বছর আগের আনন্দময় দিনটিতে।
দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) সোনা জয়ী অ্যাথলেটরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনাচ্ছেন তাদের স্মৃতিময় দিনগুলো গল্প। মাবিয়াও স্মৃতি খুঁড়ে জানালেন অজানা গল্প ও মজার ঘটনা।
২০১০ সালে হামিদুল ইসলামের হাত ধরে এসএ গেমসের ভারোত্তোলনে প্রথম সোনার পদক জয়ের অধ্যায় রচনা করেছিল বাংলাদেশ। ছয় বছর বিরতি দিয়ে ২০১৬ সালে ভারতের শিলং-গুয়াহাটিতে গড়ায় প্রতিযোগিতার দ্বাদশ আসর। সেবার ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ১৪৯ কেজি তুলে বাজিমাত করেন মাবিয়া। দেশের প্রথম মহিলা ভারোত্তোলক হিসেবে পা রাখেন আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায়।
সেদিন পদকের মঞ্চে উঠে জাতীয় সঙ্গীত বাজতেই আবেগের লাগাম ধরে রাখতে পারেনি মাবিয়া। অঝোরে কেঁদেছিলেন। তার সেই আনন্দের অশ্রু ছুঁয়ে গিয়েছিল দেশের কোটি মানুষের হৃদয়। অনেকেরই চোখের জল মিশে গিয়েছিল মাবিয়ার আবেগের মোহনায়।
ওই দিনই মাবিয়া আরেকটি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন, যেটা বলতে গিয়ে রীতিমতো হো হো করে হাসলেন ২০ বছর বয়সী এই অ্যাথলেট।
“আমি যতই বলি, ‘না মামা, সত্যি বলছি।’ তিনি ওই একই কথা বলেন। কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে চান না। এরপর বাবা-মাকে বললাম। তারাও বিশ্বাস করেন না! পাঁচ-ছয় মিনিট ধরে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলাম। লাভ হলো না। কোচ তাদের সঙ্গে কথা বললেন; তখনও বিশ্বাস করতে চায় না। তারা মনে করছিলেন, আমরা সবাই তাদের সঙ্গে মজা করছি। শেষ পর্যন্ত পদক পরা ছবি যখন তাদেরকে পাঠালাম, তখনই কেবল বিশ্বাস করলেন।”
গত ডিসেম্বরে নেপালের কাঠমান্ডু-পোখারার সাফ গেমসে ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচে ৮০ কেজি ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৫ কেজি সহ মোট ১৮৫ কেজি ওজন তুলে সেরার মুকুট পরেন মাবিয়া। দেশের প্রথম মহিলা ভারোত্তলক হিসেবে গড়েন টানা দুই সাফে সোনার পদক জয়ের কীর্তি। মজার ব্যাপার হলো, এবারও আপনজনদের বোঝাতে ঘাম ছুটে গেল মাবিয়ার!
“বাবা-মা কখনই বিশ্বাস করতে চাইতেন না, তাদের মেয়েটা কিছু করতে পারে। মনে করতেন, তাদের কালো মেয়েটাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না (হাসি)। নেপালে গিয়েও যখন গোল্ড জিতলাম, তখনও বাড়িতে আনন্দে আনন্দে ফোন দিয়েছি। একই অবস্থা। এবার তারা বলেন, ‘হ্যাঁ, সব সময় তো শুধু তোরই লটারি লাগে। আর কারও লাগে না!’ বিশ্বাস করতে চাননি আমি গোল্ড পেয়েছি!”
“আসলে খেলতে গেলে অনেক সময় বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মজা করি, এ কারণে তারা আমার সবকিছু মজা হিসেবে নেয়। নেপালে জয়ের পর তাই এটাও আমাকে বলতে হয়েছিল, ‘বিশ্বাস করো, মজা করছি না। সত্যিই জিতেছি। যদি বিশ্বাস না হয়, নিউজ দেখো। নিউজ দেখার পরই কেবল তাদের বিশ্বাস হলো।”