Published : 01 Jul 2025, 12:32 AM
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের একের পর এক বিমান হামলায় নতুন করে কয়েকশ ফিলিস্তিনি পরিবারের ভিটেছাড়া হওয়ার খবর দিয়েছে বিবিসি।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শুজাইয়া, তুফাহ ও জেইতুনসহ গাজার ঘনবসতিপূর্ণ পূর্বাঞ্চলে কয়েক ডজন বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
আল জাজিরা বলছে, গাজার পূর্বাঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ৫০টি বিমান হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় সোমবার মৃত্যু হয় ৮০ জনের।
লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে একটি ক্যাফেও ছিল, যেখানে প্রাণ গেছে ২০ ফিলিস্তিনির।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি বলছে, সোমবার গাজা শহরের একটি ধ্বংসস্তূপে পাঁচজনের লাশ পান উদ্ধারকর্মীরা। আহত অবস্থায় কয়েক ডজন ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয় আল-আহলি হাসপাতালে।
ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পর এ হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত মার্চে নতুন করে হামলা শুরুর পর এবার সবচেয়ে বড় এলাকাজুড়ে ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয় নেতানিয়াহুর সরকার।
এছাড়া এমন সময় হামলা জোরদার হলো, যখন গাজা নিয়ে একটা যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের ঝলকানির পরেই রাতের আকাশে আগুন ও ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, জেইতুন এলাকার একটি স্কুল লক্ষ্য করেও হামলা হয়, যেখানে বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল।
গাজা শহরের পশ্চিমে আল-শাতি ক্যাম্পেও হামলা চালায় ইসরায়েল, যেখানে পাঁচজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী— আইডিএফ আগেই উত্তর গাজার বড় অংশের বাসিন্দাদের এলাকা ত্যাগ করে দক্ষিণ দিকে আশ্রয় নিতে বলেছিল। তবে সেখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা দক্ষিণ দিকে না গিয়ে গাজা শহরের মধ্যেই পশ্চিম দিকে চলে যান।
পরিবারসহ জেইতুন থেকে পালিয়ে এসেছেন সাত সন্তানের মা আবির তালবা।
তিনি বলেন, “আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না, সবকিছু পেছনে ফেলে চলে আসতে হয়েছে।
“ফোনকলের মাধ্যমে আমরা রেকর্ডিং করা একটি বার্তা পাই, যেখানে বলা ছিল যে আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে আছি এবং অবিলম্বে সরে যেতে হবে।”
আবির তালবা বলেন, “এ নিয়ে সপ্তমবার পালাতে হলো আমাদের। আবারও আমরা রাস্তায়। আমাদের খাবার নেই, পানি নেই; সন্তানরা না খেয়ে আছে। এর চেয়ে মৃত্যুই এখন সহজ মনে হয়।”
ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের মধ্যে এ আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে যে, সেখানকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশনা ও টানা বিমান হামলা ইসরায়েলের একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।
অনেকে মনে করছেন, ইসরায়েল হয়ত গাজায় স্থল অভিযান আরও বিস্তৃত করবে।
তবে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে এমন কথাও বলা হচ্ছে যে, কিছু জেনারেল মনে করছেন, গাজায় তাদের সামরিক অভিযান লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে।
ইসরায়েলের অনেক সাবেক সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, গাজার গেরিলা ধাঁচের যুদ্ধ বেধে গেলে আরও বেশি বেসামরিক মানুষ, বন্দি ও সৈন্য নিহত হবে।
তবে সবার নজর এখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে, যিনি বরাবরই গাজায় হামলা অব্যাহত রাখার পক্ষে।