Published : 22 Jun 2025, 03:50 PM
ইরানের দুর্ভেদ্য পারমাণবিক স্থাপনা ফোরদোতে বড় ধরনের হামলা চালাতে মার্কিন বিমান বাহিনী তাদের বি-টু বোমারু বিমানগুলোকে একটানা ৩৭ ঘণ্টা উড়িয়ে নিয়ে গেছে, যাওয়ার সময় আকাশপথেই সঙ্গী ট্যাংকার বিমান থেকে জ্বালানি নিয়েছে স্টেলথ বোমারুগুলো।
অত্যন্ত সতর্কভাবে পরিকল্পিত এই নজিরবিহীন সামরিক অভিযান শনিবার রাতে (২১ জুন) সম্পন্ন করেছে মার্কিন বাহিনী। বি-টু স্টেলথ স্পিরিট বোমারু বিমানগুলো পর্বতের গভীরে সুরক্ষিত ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ১৩৬০০ কিলোগ্রাম ওজনের পাঁচ থেকে ছয়টি জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বোমা ফেলে। এসব বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা সরাসরি ভূপৃষ্ঠের ৬০ মিটার গভীরে ঢুকে গিয়ে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম। এই বোমা ১৮ মিটার গভীর শক্তিশালী কংক্রিটের গাথুনিও ভেদ করার ক্ষমতাসম্পন্ন।
কোনো সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথম তাদের অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা এ বোমা ব্যবহার করল, জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
নিউ ইয়র্ক টাইমস ও বেশ কিছু মার্কিন সামরিক কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ছয়টি বি-টুএ স্টেলথ স্পিরিট কৌশলগত বোমারু বিমান ব্যবহার করা হয়। এসব বিমানের এক একটির দাম প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার।
ফোরদোর পাশাপাশি ইরানের নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক কেন্দ্রেও হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ দুটি কেন্দ্রে হামলা চালাতে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে মার্কিন বাহিনী। লক্ষ্যে নির্ভুল আঘাত হানার ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়া হয়েছে মার্কিন ডুবোজাহাজগুলো থেকে। তবে নাতাঞ্জে দুটি জিবিইউ-৫৭ বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমাও ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বি-টু বোমারু বিমানগুলো শুক্রবার রাতে মিজৌরির হোয়াইটম্যান বিমান ঘাঁটি থেকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের গুয়ামে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সামরিক ঘাঁটির উদ্দেশে রওনা হয় বলে খবর হয়েছিল। কিন্তু এই বিমানগুলোই কোথাও না থেমে ৩৭ ঘণ্টায় প্রায় ১১৪০০ কিলোমিটার উড়ে ইরানে গিয়ে হামলা চালায়। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময় বিমানগুলো আকাশেই সঙ্গী ট্যাংকার বিমানগুলো থেকে বেশ কয়েকবার জ্বালানি ভরে নেয়।
মার্কিন বিমান বাহিনীর ৫০৯তম বোম্ব উইং এই হামলাটি পরিচালনা করে। ইরানে হামলা চালানোর পর বোমারুগুলো সম্ভবত গুয়ামে ফিরে যায়। টানা ৩৭ ঘণ্টার এই উড্ডয়নে বি-টু বোমারুর অনন্যসাধারণ সীমা ও সহনশীলতা প্রদর্শিত হয়েছে।
বি-টু বোমারুগুলো রেডারকে ফাঁকি দেওয়ার প্রযুক্তি সম্পন্ন ও আকারে বাদুরের মতো চ্যাপ্টা হওয়ায় সহজেই ইরানের আকাশপথে প্রবশে করতে পেরেছে। তাদের আকাশে ছয়টি মার্কিন বোমারু বিমান ঢুকে পড়লেও ইরানিরা তা শনাক্ত করতে পারেনি। ফোরদোতে রাশিয়ার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে, কিন্তু মার্কিন বিমানগুলো সেগুলোকে এড়াতে পেরেছে।
প্রতিটা বি-টু বোমারু বিমান দুটি জিবিইউ-৫৭ এমওপি বহন করতে পারে। জিবিইউ-৫৭ বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমাগুলোর বিশাল আকার ও ওজনের কারণেই এ ধরনের বোমা এরচেয়ে বেশি বহন করা সম্ভব না। বি-টু বোমারু বিমান এসব ভারী বোমাগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে খুব নিখুঁতভাবে লক্ষ্যে ফেলতে পারে। অভিযানে ছয়টি বি-টু বোমারু বিমানে মোট ১২টি জিবিইউ-৫৭ বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা ছিল।
এই সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা থামিয়ে দিতে এক নতুন অধ্যায় শুরু করল।
আরও পড়ুন:
ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা
নিরাপত্তা বৈঠক থেকে ইরানে মার্কিন হামলার ওপর নজর রাখছিলেন নেতানিয়াহু
মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলের ১০ এলাকায় আঘাত হেনেছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র