Published : 27 Dec 2024, 12:03 AM
সমীকরণটা সহজ, কিন্তু নিষ্ঠুর। একদিকে যখন বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে; তখন বিশ্বের ধনী দেশগুলো এসব মানুষের জন্য সহায়তার পরিমাণ দিন দিন কমিয়ে দিচ্ছে।
পরিণামে কী ঘটবে? জাতিসংঘ বলছে, আগামী বছর প্রায় ৩০ কোটি ৭০ লাখ মানুষের ত্রাণসহায়তা লাগবে। কিন্তু সহায়তা আসতে পারে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ মানুষের।
সেই হিসাবে, ২০২৫ সালে পেটে ক্ষুধা থাকলেও অন্তত ১১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ কোনো খাদ্য সহায়তা পাবেন না।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে তারা মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালাতে বিভিন্ন দেশের কাছে চার হাজার ৯৬০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছিল। কিন্তু বছর শেষে মিলছে ৪৬ শতাংশের মত।
সংস্থাটি এবার নিয়ে টানা দুই বছর প্রত্যাশিত অর্থের অর্ধেকেরও কম সহায়তা পেল। এ কারণে ত্রাণ সংস্থাগুলো কিছু অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। যেমন তারা রেশন কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সহায়তাভোগীর তালিকাও ছোট করে আনছে।
সহায়তায় যে টান পড়েছে, এরই মধ্যে সেটা সিরিয়ার মত অঞ্চলগুলোতে টের পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মাধ্যমে সাধারণত ৬০ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।
ডব্লিউএফপির সহযোগী নির্বাহী পরিচালক (অংশীদারত্ব ও সম্পদ সমন্বয়) রানিয়া দাগাস-কামারা বলেন, সহায়তার পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে চলতি বছরের শুরুতে খাদ্য সহায়তার তালিকা থেকে ১০ লাখ মানুষের নাম বাদ দিতে হয়েছে।
গত মার্চে সিরিয়ায় কর্মরত ডব্লিউএফপির কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন দাগাস-কামারা। সেই তথ্য তুলে ধরে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সেখানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, কম ক্ষুধার্তের কাছ থেকে খাবার নিয়ে ‘ভীষণ’ ক্ষুধার্তকে খাওয়াতে হচ্ছে।”
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধ-সংঘাত, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রয়োজনের বিপরীতে সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়াও একটি কারণ।
অনেক দেশ অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। অনেকে দেশে ঘটেছে ক্ষমতার পালাবদল। এসব ঘটনার প্রভাবে অনেক দেশ তাদের সহায়তার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনছে।
জাতিসংঘে বড় সহায়তা দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি অন্যতম। দেশটি এরই মধ্যে ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে ৫০ কোটি ডলার কম সহায়তা দিয়েছে।
দেশটির মন্ত্রিসভা সুপারিশ করেছে, ২০২৫ সালে সহায়তার পরিমাণ যেন আরও ১০০ কোটি ডলার কমিয়ে দেওয়া হয়।
আগামী জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে বসে ডনাল্ড ট্রাম্প কী সিদ্ধান্ত নেন, তা নিয়েও উদ্বেগে আছে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া অনেক সংস্থা।
মানবিক ত্রাণ সহায়তার ব্যাপারে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, সেই আভাস এখনও তার উপদেষ্টাদের তরফ থেকে আসেনি। কিন্তু প্রথম মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
ওই সময় তার একাধিক উপদেষ্টাও বলেছিলেন, বিদেশি সহায়তায় কাটছাঁট করার সুযোগ রয়েছে।
বৈশ্বিক ক্ষুধা মোকাবিলায় আর্থিক সহায়তার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম। গত পাঁচ বছরে দেশটি মানবিক ত্রাণ হিসেবে ছয় হাজার ৪৫০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে, যা একই সময়ে আসা মোট সহায়তার ৩৮ শতাংশ।
জাতিসংঘের তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে রয়টার্স বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৭ হাজার কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে জাতিসংঘ। এর মধ্যে ৫৮ শতাংশই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইউরোপিয়ান কমিশন থেকে।
এদের বাইরে তিন বড় দেশ– রাশিয়া, চীন ও ভারত মিলে দিয়েছে ১ শতাংশের কম।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, ক্ষুধা মোকাবেলা ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধের বৈশ্বিক ব্যবস্থায় যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার অন্যতম কারণ হল সহায়তার ক্রমবর্ধমান ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ হওয়া।
২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের ত্রাণ বিভাগের প্রধান ছিলেন ইয়ান এইগুল্যান। তিনি বলেন, “এটা খেয়াল করার একটা ব্যাপার যে, নরওয়ের মত ছোট একটা দেশ শীর্ষ সহায়তা দেওয়ার তালিকায় রয়েছে।”
২০২৩ সালে জাতিসংঘে সহায়তা দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে নরওয়ের অবস্থান ছিল সপ্তম। গত বছর ১০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা দেয় দেশটি।
অন্যদিকে শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির মধ্যে চীন ও ভারতের সহায়তা ছিল ‘নগণ্য’। ২০২৩ সালে শীর্ষ সহায়তা দেওয়া দেশের তালিকায় চীনের অবস্থান ছিল ৩২তম। দেশটি সহায়তা দেয় এক কোটি ১৫ লাখ ডলার। ৩৫তম অবস্থান থাকা ভারত সহায়তা দেয় ৬৪ লাখ ডলার।