Published : 22 Jun 2025, 07:09 PM
বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য থাকা এক লাখ ৮২২টি শিক্ষক পদে নিয়োগের আবেদন গ্রহণ শুরু করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ এনটিআরসিএ।
গত ১৬ জুন জারি করা ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক শূন্যপদের বিপরীতে আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন প্রার্থীরা।
বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ পদগুলোতে নিয়োগ সুপারিশ পেয়ে শিক্ষক হতে নিবন্ধিত প্রার্থীরা এক হাজার টাকা ফি দিয়ে আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা সুযোগ পাবেন, এ ফিয়ের বিনিময়ে তারা নিয়োগ সুপারিশ পেতে ৪০টি শূন্যপদে পছন্দ দিতে পারবেন।
এনটিআরসিএর শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান শাখার উপপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রহিম খোন্দকার রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা আবেদন করেছে বলেও জানতে পেরেছি।"
এ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনে 'খুব সময় লাগবে না' বলে মন্তব্য করলেও কবে নাগাদ প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি এ কর্মকর্তা।
তিনি বললেন, "কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দিলে আবেদনের সময় বাড়ানো হতে পারে। আবেদন গ্রহণ শেষ হলে দ্রুতই টেলিটক ফল প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করবে বলে আশা করি।"
গত ১৬ জুন এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরিসিএ, যা গত ১৭ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন হিসাবে প্রকাশিত হয়।
কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কতগুলো পদ?
এক লাখ ৮২২টি শূন্য পদের মধ্যে বেসরকারি স্কুল ও কলেজের ৪৬ হাজার ২১১টি, মাদ্রাসার ৫৩ হাজার ৫০১টি এবং কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ১১০টি পদ রয়েছে। এসব পদে যারা নিয়োগ পাবেন, তারা এমপিও বা সরকারি অংশের বেতনভাতা প্রাপ্য।
প্রার্থীর বয়সসীমা
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রার্থীর বয়স ২০২৫ সালের ৪ জুন ৩৫ বছর বা তার কম হতে হবে এবং নিবন্ধন সনদের মেয়াদ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে হতে হবে।
যেভাবে আবেদন
টেলিটকের নির্ধারিত ওয়েবসাইট http://ngi.teletalk.com.bd/ এ প্রবেশ করে প্রার্থীদের আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ টাকা। একজন প্রার্থীর এক আবেদনের মাধ্যমে আলাদা আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ৪০টি শূন্যপদে পছন্দ দিতে পারবেন। আর পছন্দের ৪০টি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ না পেলে মেধার ভিত্তিতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ চান কি-না সে বিষয়ে মতামত দিতে পারবেন।
থাকবে না নারী কোটা
এ নিয়োগে নারী কোটা থাকবে না বলে জানানো হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তিতে। আগে শহরাঞ্চলের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট শিক্ষক পদের ৪০ শতাংশ এবং মফস্বল অঞ্চলের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট শিক্ষক পদের ২০ শতাংশ পদে নারী প্রার্থী নিয়োগ বাধ্যতামূলক ছিল, যা ‘মহিলা কোটা’ নামে পরিচিত ছিল। গত ১৫ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ নারী প্রার্থীদের জন্য আসন সংরক্ষণের এ বিধান বাতিল ঘোষণা করে।
যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রিলেভেলের শিক্ষক-প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে প্রার্থীদের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা উত্তীর্ণ হলে প্রার্থীরা শিক্ষক নিবন্ধন সনদ পান। আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে, শিক্ষক নিবন্ধন সনদের মেয়াদ তিন বছর।
এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ওই সনদ ব্যবহার করে প্রার্থীরা নিয়োগ পেতে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন।
আবেদন করা প্রার্থীদের মধ্যে যিনি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন, তাকেই ‘স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায়’ নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ। পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর নির্বাচিত প্রার্থীরা চূড়ান্ত সুপারিশ পেলে শিক্ষক পদে যোগদান করতে পারবেন।
দেশে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০ হাজার ৮২৬টি। এরমধ্যে স্কুল ১৭ হাজার ৬৩৪টি, কলেজ ২ হাজার ৮৬৮টি, মাদ্রাসা ৮ হাজার ২২৯টি এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২ হাজার ২২২টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক বা সমপর্যায়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব এনটিআরসিএর।
২০০৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে। তবে শুরুর ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়। এরপর পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ।
এর আগে গত বছরের ৩১ মার্চ ৯৬ হাজার ৭৩৬টি শিক্ষক শূন্যপদের নিয়োগে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ। যদিও শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়েছিলেন ১৯ হাজার ৫৮৬ প্রার্থী জন নিবন্ধিত প্রার্থী।
বয়স ৩৫ এর বেশি হলে আবেদন নয়
এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান পদের দায়িত্বরত সদস্য মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষক নিবন্ধনের সনদের মেয়াদ তিন বছর। সে হিসাবে ১৭তম ও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা এবার আবেদন করতে পারবেন।
কোনো প্রার্থীরা সনদের মেয়াদ থাকলেও তার বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে তিনি গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন না।
নিয়োগের পরও থাকবে শিক্ষক সংকট
এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌনে এক লাখ শিক্ষক পদ প্রায় এক বছর ধরে শূন্য। ফলে সংকটে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো; অথচ দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পড়াশোনা করে এসব প্রতিষ্ঠানে। এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষেও শিক্ষক সংকট কাটবে না।
যোগ্য নিবন্ধিত প্রার্থী না থাকায় প্রায় এক লাখ শিক্ষক শূন্যপদের সবগুলো পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এনটিআরসিএর সদস্য মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, “কিছু কিছু পদে নিয়োগে জন্য প্রার্থী নেই। যেমন চারু ও কারুকলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদ খালি আছে প্রায় ১০ হাজার, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে এ পদের বিপরীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন কয়েকশ। আর ১৭তম নিবন্ধনে যারা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তারা ইতোমধ্যে শিক্ষকতা করছেন। এ বিষয়ের সবগুলো পদ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পূরণ হবে না।"
মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী, ভৌতবিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কলেজের আইসিটি বিষয়ে প্রভাষকসহ কয়েকটি বিষয়ের শূন্যপদ পূরণ হবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।