Published : 25 May 2025, 09:39 PM
স্বাধীনতার পর দলীয় প্রতীকে অন্তত একটি আসন পেলেই নিবন্ধন দেওয়ার শর্তটি পূরণ করার দাবি নিয়ে আবারও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি।
রোববার বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ‘নিবন্ধন আবেদন পুনরুজ্জীবিত’ করার দাবি নিয়ে সাক্ষাৎ করে দলটির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
এনডিপির প্রতিষ্ঠাতা সালাউদ্দিন কাদের ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে দলের বাঘ প্রতীকে নির্বাচিত হন, যিনি সাকা চৌধুরী নামে বেশি পরিচিত।
২০০৮ সালে দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এনডিপি নিবন্ধনের আবেদন করলেও সাকা চৌধুরী পরবর্তীতে বিএনপির সংসদ সদস্য হওয়ায় নিবন্ধন আবেদন নাকচ হয়।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনডিপির চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের অতীতের নিবন্ধনের আবেদন স্বৈরাচার সরকার যেসব কারণে দেয়নি, সেগুলো আমরা খোলাসা করে আলোচনা করেছি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এই দলের মহাসচিব থাকার কারণেই মূলত দলের নিবন্ধন দিচ্ছিল না, যদিও নির্বাচন কমিশনের সব শর্ত আমরা পূরণ করেছি।”
‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারকে বিদায় করতে এনডিপির নেতা-কর্মীরা ‘আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ ছিল’ বলেও কমিশনের কাছে তুলে ধরার কথা বলেছেন তিনি।
আবু তাহের বলেন, “আমরা চাচ্ছি, এনডিপি যেহেতু একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক দল, দীর্ঘদিন ধরে আমরা আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম, আমরা এখন রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন চাচ্ছি।”
সিইসি নাসির উদ্দিন ও নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত করেছেন, বলেন এনডিপি চেয়ারম্যান।
এনডিপির মহাসচিব আব্দুল্লাহ-আল-হারুন সোহেল ছাড়াও প্রেসিডিয়াম মেম্বার মুসা মণ্ডল, জামিল আহমেদ, মিজানুর রহমান পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন।
নতুন দল নয়, পুরনো হিসেবে নিবন্ধন চায় এনডিপি
পুরনো দলকে নিবন্ধন ফিরে পেতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আগ্রহী দলটির যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকতে হবে, যে কোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোতে মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে।
নতুন দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার শর্ত–দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ [২১টি] প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানার প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত তালিকা লাগবে।
রাজনৈতিক জীবনে সাকা চৌধুরী ১৯৭৯ সালে মুসলিম লীগের মনোনয়নে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এবং ১৯৯১ সালে নিজের গড়া এনডিপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
এরপর বিএনপির হয়ে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালেও সংসদে জায়গা করে নেন সাকা চৌধুরী।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৫ সালের নভেম্বরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সাকা চৌধুরীর মৃতুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
সে বছর হাই কোর্ট এনডিপিকে নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর দলটির তৎকালীন চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্তুজা রায়ের অনুলিপি নির্বাচন কমিশনে দাখিল করে। তবে সাকা চৌধুরী দলে না থাকায় কমিশন নিবন্ধন আটকে দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবার নতুন করে সেই নিবন্ধন আবেদন পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিলেন বর্তমান এনডিপি নেতারা।
দলটির মহাসচিব আব্দুল্লাহ হারুন সোহেল বলেন, “এনডিপি নতুন দল হিসেবে নয়, বরং পঞ্চম সংসদে দলটির একটি আসন ছিল, এ শর্তে নিবন্ধন পেতে চাই আমরা। আগের আবেদনটি আবার পুনরুজ্জীবিত করতে চাই।”
পুরনো খবর:
নিবন্ধন পাচ্ছে সাকা প্রতিষ্ঠিত এনডিপি
দল নিবন্ধন: আবেদনের সময় বাড়ল ২ মাস