Published : 09 May 2025, 10:32 PM
যুদ্ধের এই বাজারে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরো সতর্ক থাকা উচিত এবং সরকারের কর্তাব্যক্তিদের আরো সাবধানে কথা বলা উচিত বলে মনে করছেন রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই সীমান্ত পথে বহু মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেছেন, “আমাদের এখান থেকে নানান রকমের কথা বলা হচ্ছে। ওদের দিক থেকেও নানান রকমের কথা বলা হচ্ছে। তারপর এই যে পুশি-ইন টুশ-ইন হচ্ছে, তো এগুলোতে যে কোনো সময় আমরা একটা ফাঁদে পা দিয়ে দিতে পারি। সম্পর্কটা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।”
আর কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো দেশই আরেক দেশ দিয়ে ‘প্রতিস্থাপনযোগ্য’ বলে মনে করেন সাবেক এই কূটনীতিক।
তিনি বলেছেন, “পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ভালো করবার চেষ্টা করা মানে এই না যে আমরা ভারতের সাথে শত্রুতা তৈরি করব। পাকিস্তানের আমাদের সাথে আছে, আমাদের আর ভারতকে প্রয়োজন নেই এটা মনে করলে এটা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক থাকা খুব জরুরি। কিন্তু সেটি সমতা এবং মর্যাদার ভিত্তিতে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ইনসাইড আউটে’ অতিথি হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সাবেক চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমদ।
ভারত-পাকিস্তানে চলমান সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব, মিয়ানমারে সম্ভাব্য মানবিক করিডোর, রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা প্রসঙ্গে নিজের বিশ্লেষণ তিনি আলোচনায় তুলে ধরেছেন।
শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়।
নেতিবাচক প্রভাব সবার উপরেই পড়বে
গত মাসে ভারতের কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ এক হামলার বদলায় বুধবার পাকিস্তানের একাধিক স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এই সামরিক অভিযান পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশকে নিয়ে গেছে আরেকটি যুদ্ধের কিনারে।
সংঘাতের তিন দিনে দুই দেশে অনেক বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বন্ধ হয়েছে আকাশসীমা। বাতিল হয়েছে বহু ফ্লাইট। দুই দেশেই বিভিন্ন এলাকার স্কুল বন্ধ রয়েছে। সীমান্তে বিরতি দিয়ে চলছে গোলাগুলি, সেই সঙ্গে চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ। উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, “আমাদের এই অঞ্চলে এই সংঘাতের অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সবার উপরেই। বাংলাদেশও এই প্রভাব থেকে বাঁচতে পারবে না। পাঁচই অগাস্টের পর থেকে আমরা কিন্তু সত্যিকার অর্থে নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারিনি। এমনিতেই ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ অবস্থায় আছে। বাণিজ্য, যাতায়াত বিঘ্নিত হচ্ছিল। তার মধ্যেই এই যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠায় পরিস্থিতি আরও জটিল হল।”
এই সংঘাতে বাংলাদেশের ঝুঁকিটা আসলে কোথায়?
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, “যুদ্ধের যেই ঝুঁকিগুলো, তার মধ্যে স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য এই দুই দেশ আর করতে পারছে না। তাদের সাথে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারব না। শ্রীলঙ্কার সাথে আমাদের যে বাণিজ্য সেটাও বাধাগ্রস্ত হবে। যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সাথে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য নিশ্চিতভাবেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইউক্রেইন-রাশিয়াসহ অনেকগুলো দেশেই যুদ্ধ চলছে, এটা সারা পৃথিবীতে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে। পাক-ভারত যুদ্ধের ফলে সেটি আরও বহুগুণে জটিল হবে।”
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তৈরি করা ‘শুল্কযুদ্ধের’ প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ, শুল্কযুদ্ধ এর চেয়েও ক্ষতিকর যুদ্ধ, যেটার মধ্যে আমরা আছি। সেটা পৃথিবীর সমস্ত বাণিজ্য ব্যবস্থাকে একেবারে তছনছ করে রেখে দিয়েছে। কেউ জানে না এখন কী হবে। হয়ত শেষ পর্যন্ত বড় কিছু হবে না। কিন্তু সবাই অস্থির অবস্থায় আছে। এই সব কিছুর মধ্যে এই যুদ্ধ (ভারত-পাকিস্তান সংঘাত) মরার উপর খাঁড়ার ঘার মত একটা অবস্থা তৈরি করেছে।”
পারমাণবিক যুদ্ধ?
অনেকেরই শঙ্কা আছে–এই সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধের রূপ নিতে পারে। তবে মুন্সী ফয়েজ আহমদ অতটা ঝুঁকি দেখছেন না।
তার ভাষায়, “যেহেতু দুই দেশের কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র আছে, সুতরাং এটা থাকতেই পারে। তবে, আমি মনে করে এটা খুব দূরবর্তী একটা শঙ্কা।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “পাকিস্তানের তো ফার্স্ট অ্যাটাক পলিসি আছে। ভারত আবার বলছে, না তারা প্রথম আক্রমণ করবে না পারমাণবিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে। পাকিস্তানের যে অস্ত্র আছে সেটার উপরে ঘোষণা করে নয়, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আছে। তারা এই নিয়ন্ত্রণ সহজে ছাড়তে রাজি নয়, সুতরাং পাকিস্তানকে তারা দূরে রাখার চেষ্টা করবে।”
সাবেক এই কূটনীতিবিদ মনে করেন, কোথাও যুদ্ধ বাধলে অনেক দেশই অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হতে চাইবে। কিন্তু পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি থাকলে তারাও সেটা থামাতে চাইবে।
সত্য-মিথ্যার খেলা
চলমান সংঘাতের বিষয়ে পাকিস্তান ও ভারত দুই দেশই পাল্টাপাল্টি তথ্য ছড়াচ্ছে। এসব তথ্যের মধ্যে কতটুকু সত্য, কতখানিই বা মিথ্যা সে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ফয়েজ আহমদ বলেন, “জঙ্গি আস্তানায় ভারতের হামলার দাবিটা আমরা পুরোপুরি ফেলে দিতে পারছি না, যতক্ষণ না আমরা প্রমাণ করতে পারছি। আবার এদিকে ওরা (ভারত) সত্যিই জঙ্গিদের অবস্থান কোথায় সেটি জানে, সেভাবে আক্রমণ করছে, সেটাও আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না। সুতরাং এটা নিশ্চিত হওয়ার কোনো ব্যবস্থা আমাদের কাছে নেই।
“আন্তর্জাতিক নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমগুলোর দিকে আমরা তাকাতে পারি। তাতে দেখা যাবে, দুই পক্ষই কিছু সত্য বলছে, আবার কিছু মিথ্যাও বলছে।”
বাংলাদেশ সঠিক পথে?
এই সংঘাতে বাংলাদেশ দুই পক্ষকেই সংযমের আহ্বান জানিয়েছে, সেটাই সঠিক পথ বলে মনে করছেন চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান সঠিক। কারণ, আমাদের কোনো পক্ষের দিকে ঝোঁকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের একটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতেই হবে।”
তবে তিনি এও মনে করেন, পাকিস্তান-ভারত সংঘাত থামাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই, যা প্রভাবশালী দেশগুলোর আছে।
“যেসব দেশ প্রভাবশালী এবং শক্তিধর, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, এরা যদি চেষ্টা করে, সংঘাত বন্ধের সম্ভাবনা বাড়বে। এরা আমাদের সহযোগী রাষ্ট্র। আমরা এদের বার-বার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বলতে পারি; যাতে দুই পক্ষ যুদ্ধ থেকে সরে আসে।”
শান্তি কীভাবে
যুদ্ধ বন্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে সন্ত্রাসী আক্রমণ বন্ধ করা জরুরি বলে মনে করেন ফয়েজ। সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
“সংঘাত শুরুর অজুহাত ছিল সন্ত্রাসী আক্রমণ। সেটি বন্ধ করতে হবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যে লড়াই হচ্ছে, সেটা তো একপাক্ষিকভাবে কোনো দেশ করতে পারবে না। সেই দিকে তাদের (পাক-ভারত) ঠেলে দেওয়া; যে চলো, আমরা একসঙ্গে বসে কে জঙ্গি-কে জঙ্গি না, সেই সন্ত্রাসীদের আমরা কীভাবে দমন করতে পারি সেটি ঠিক করি। তাহলে মোটামুটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির চিন্তা করা যেতে পারে।”
ক্রিকেটের মত রাজনীতিতেও বাংলাদেশে পাকিস্তান আর ভারতের প্রতি সমর্থনের মেরুকরণ আছে। যুদ্ধের মত পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সেই একই প্রবণতা ধরে রাখলে বিপদ হবে বলে সতর্ক করেছেন ফয়েজ আহমদ।
তিনি বলেন, “এই যুদ্ধে আমরা কোনো পক্ষ নেব না। নেওয়া উচিত না আমাদের। বিশ্লেষণ করলে হয়ত একজনকে বেশি দোষী মনে করা হতে পারে, আরেকজন কম দোষী মনে হতে পারে। কিন্তু সেই দোষ ধরতে যাওয়া আমাদের কাজ না। এটা তারা নিজেদের মধ্যে নিজেরা বুঝে নেবে। ক্রিকেটে আমরা যতই পক্ষ নিই, কিন্তু এই রাজনীতিতে বা যুদ্ধের ক্ষেত্রে আমরা কোনো পক্ষ নিতে পারি না, নেওয়া উচিত না।”
বরং সংঘাতের এই সময়ে বাংলাদেশের আরও বেশি করে নিজেদের সমস্যার দিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করেন ফয়েজ আহমদ।
তিনি বলেন, “সবাই পাক ভারত যুদ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকবে। সুতরাং এখন আমাদের সময় এসেছে আরও বেশি করে ভিতরের দিকে তাকানোর, নিজেদের দিকে তাকানোর। খুব সুনির্দিষ্টভাবে দেশে যেসব সমস্যাগুলো আছে, সেগুলোর দিকে তাকানোর একটা সুযোগ এসেছে আমাদের এই যুদ্ধের ফলে।
“আমাদের দেশের যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলোর দিকে আরো বেশি করে নজর দেব। আমাদের কৃষকদের অবস্থা, আমাদের গ্রাম কী বলে, গ্রামীণ অর্থনীতি, যেটা আমাদের একটা শক্তি ছিল, সেটাকে আবার আরও শক্ত করে তুলে ধরা।”
ফয়েজ আহমদ বলেন, “আমাদের যে দুর্বলতাগুলো আছে সেগুলোকে কাটিয়ে অভ্যন্তরীণ শক্তিটাকে আরও সঞ্চয় করা, আরও বৃদ্ধি করা, তাতে হবে কি, এই যুদ্ধতো চলে যাবে একদিন। তারপরে আমরা যখন আমাদের বন্ধুদের কাছে যাব, তারা আমাদের দিকে আরও বেশি শ্রদ্ধাভরে তাকাবে, আমাদেরকে আরও গুরুত্ব দেবে।”
সীমান্তে ‘উসকানি’
সংঘাত শুরুর পর গত তিন দিনে বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বেশ কিছু মানুষকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। তাদের ভাষ্য, ভারতের গুজরাট থেকে তাদের চোখ বেঁধে বিমানে করে এনে বাংলাদেশ সীমান্তে ‘পুশ ইন’ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
সেই প্রসঙ্গে টেনে মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, “আমাদেরকে ওইসব যুদ্ধের চিন্তা না করে অবশ্যই সীমান্তটাকে শক্ত রাখতে হবে। আর যেন পুশ-ইন না করতে পারে। হয়ত অনেকেই বলবেন যে, হঠাৎ করে হয়ে গেছে। আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন প্রস্তুত থাকব আমরা, যাতে পুশ-ইন করতে না পারে। অভ্যন্তরীণ যেসব দুর্বলতা আছে, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদেরকে অনেক বেশি সচেষ্ট হতে হবে।”
এই পুশ-ইন ভারতের পক্ষ থেকে কোনো উসকানি কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “উসকানি ছাড়া আর কিছু না। উসকানি তো বটেই। মানে আমরা কি করি, সেটা দেখার একটা ব্যাপার আছে। যদিও অনেকে মনে করতে পারি, ভারত তো পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করছে। এখন খামাখা আমাদেরকে উসকানি দিয়ে তাদের কী লাভ।
“এটার ব্যাপারটা এরকম যে, ভারত মনে করে যে তারা দরকার হলে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ চালাতে পারবে। কিন্তু তাদের দরকার হল তাদের দেশের ভিতরে সামনে নির্বাচন আছে, সেই পপুলারিটি বা ভোট বাড়ানো, সেটা হলো তাদের উদ্দেশ্য। এবং চারদিকে যত যুদ্ধাবস্থা তৈরি করতে পারবে, আর যত দেশের ভিতরে সাম্প্রদায়িকতাকে বাড়াতে পারবে, বর্তমান যে সরকার আছে তারা তাদের লাভ বলে মনে করে। তারা বিভিন্ন সময় এটাতে ফল পেয়েছে এবং আমরা সবাই বুঝি যে, এরকম উদ্দেশ্যে এগুলো করা হয়।”
‘সম্পর্ক যেন আরো খারাপ না করি’
আওয়ামী লীগের সময়ে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর তা কমে এসেছে। এই বাঁক বদল কীভাবে দেখছেন তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সাবেক কূটনীতিবিদ মুন্সী ফয়েজ আহমদের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, “এটা এখন তো আবার থেমে গেল, তাই না? এখন পাকিস্তানের সাথেও সম্পর্ক যেটা আমরা চেষ্টা করছিলাম, দুই পক্ষই চেষ্টা করছিল, সেটি এখন থেমে গেল। যতক্ষণ পর্যন্ত এই যুদ্ধ অবস্থা চলে না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেটা আবার নতুন করে শুরু করার সুযোগ নেই। তার কারণ তারা (পাকিস্তান) ওখানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ঘটছে । সুতরাং তাদের পক্ষেও করা সম্ভব না। আমরাও এখন এটা পারসু করতে পারছি না।”
চলমান সংঘাতে কোনো পক্ষকে সমর্থন করে আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমি ওই বাঁক পরিবর্তনে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি যে, আমাদের আগেও ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল, এখনও আছে। তার মধ্যে কোনো খুঁত থাকলে সেগুলো আমরা সংস্কার করি বা পরিবর্তন করি। আমার মনে হয় ভারতের ব্যাপারে আমাদের অনেক বেশি সতর্ক হওয়া দরকার।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যে পর্যায়ে চলে গেছে, সেক্ষেত্রে এই সংঘাতে বাংলাদেশের কী কোনো বিপদ হতে পারে? ফয়েজ আহমদ বলছেন, সতর্ক না হলে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
“আমাদের এখানে যে যুদ্ধ লাগতে পারে না, এমন তো মনে করার কোনো কারণ নাই। সতর্ক হতে হবে আমাদেরকে। কিন্তু এখন আমি যদি একদিন এসে বলি যে, না, আমরা বঙ্গোপসাগরের অভিভাবক, তাহলে সেটাতো ভারত পছন্দ করবে না, তাই না? এমনি খারাপ সম্পর্ক, তারপর আরো খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
“আমরা যদি বলি যে, না, আমরা কি বলে সেভেন সিস্টারসের ওপরে নিয়ন্ত্রণ আনব বা আমরা চিকেন নেক দখল করে… অনেকে বলে এসব কথা, আমাদের বিভিন্ন মিডিয়াতে আমরা দেখি।… এগুলো দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের কথা হল না তো।”
ভারতের গণমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে যে ধরনের ‘অপপ্রচার’ করে, সেই একই কাজ বাংলাদেশেরও করা উচিত হবে না বলেই মনে করেন বিআইআইএসএস এর সাবেক প্রধান ফয়েজ।
তিনি বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্যটা কী? আমাদের উদ্দেশ্য যে আমাদের সম্পর্ক টা খারাপ হয়েছে, কিন্তু প্রয়োজন সুসম্পর্কের। সুতরাং আমরা এমন কিছু করব না যে সম্পর্কটা আরও খারাপ হয়ে যাক। আমরা এমন কিছু বলব না যাতে সম্পর্ক আমরা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগটা থেকে পিছিয়ে যাই।”
‘তেমন বন্ধু থাকলে শত্রুর দরকার হয় না’
সাবেক এই রাষ্ট্রদূতের ভাষায়, অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে প্রতিস্থাপন করা যাবে না।
“যেমন চীনকে দিয়ে ভারতকে প্রতিস্থাপন করা যায় না, তেমন ভারতকে দিয়ে চীনকে প্রতিস্থাপন করা যায় না । আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা… মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সুবিধা সব নিয়ে যাবে। আপনাকে কিছুই দেবে না। পৃথিবীব্যাপী ভুরি ভুরি এরকম উদাহরণ আছে।
“আর সবচেয়ে বড় কি, তারাও নানান কথা বলে, কিন্তু সব দেশের জন্য এক কথা বলে না। তারা আমাদের জন্য গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে। তারা ইজিপ্টে বা সৌদি আরবে যেয়ে তো এই কথা বলে না।”
কোরিয়া যুদ্ধের পর নানা দেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সামরিক তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র হেরে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা আসলে ভিন্ন।
“অনেকে বলবে, তারা তো জিততে বা হারার জন্য যায় না, তারা যায় হল অস্ত্র বিক্রি করতে। সুতরাং একটা সমস্যা সৃষ্টি করে, অস্ত্র বিক্রি টিক্রি করে দিয়ে তারা পালিয়ে চলে আসে। যেখানে যায় সেখানকার সমস্যার সমাধান তো করেই না বরং সমস্যাগুলো বাড়িয়ে দিয়ে আসে।
“সুতরাং আমাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলে সতর্ক হতে হবে। অনেকে বলে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতন বন্ধু থাকলে আর শত্রুর প্রয়োজন হয় না? সুতরাং আমার মনে হয়, আমাদের সতর্ক হতে হবে।”