Published : 30 May 2024, 06:33 PM
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন এবং তার ছেলে মো. ফয়সাল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার ঢাকার ৮ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. বদরুল আলম ভূঞার কাছে জবানবন্দি উপস্থাপন শুরু করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ-সহকারী ফজলুর রহমান বলেন, “আসামি পক্ষের আইনজীবী নুরুল ইসলাম দুলাল মামলা বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি রাখার আবেদন করেন। বিচারক তার আবেদনে সায় দিয়ে আগামী ৩০ জুন অবশিষ্ট সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য করেন।”
এদিন সাবেক বিচারপতি জয়নুলের পক্ষে তার আইনজীবী হাজিরা দেন। এ মামলায় তার ছেলে ফয়সাল পলাতক রয়েছেন।
গত ৩১ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেয় আদালত। ওইদিন জয়নুল আবেদীন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে আইনজীবী শুনানি করেন। তবে তার ছেলে ফয়সাল পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক এ বিচারপতির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মামলা করে দুদক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক গোলাম মাওলা গত বছর দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগ কী
দুদকের মামলায় বলা হয়েছে, সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের মোট সম্পদ ১ কোটি ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৪ টাকা, যেখানে তার ১৯৮২-১৯৮৩ করবর্ষ থেকে ২০১০-১১ করবর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে ৬৪ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ অর্জিত সম্পদ ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ২১৩ টাকা, যার বিপরীতে আয়ের উৎস পাওয়া যায় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩০৪ টাকা। আয়ের তুলনায় তার ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯০৯ টাকা বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
সাবেক এ বিচারপতি তার ছেলেকে ২৬ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছিলেন বলে ঘোষণা দেন, যা তার ছেলে ফয়সালের আয়কর নথিতে বলা আছে।
তবে বিচারপতির আয়কর রিটার্নে ২৬ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া এবং ফেরত পাওয়ার কোনো তথ্য নেই। বিচারপতির দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে দাখিল করা ব্যাংক স্টেটমেন্টে (২০০৫-২০০৬ এবং ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর ) তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ লাখ টাকা উত্তোলনেরও কোনো তথ্য নেই।
ফয়সালের আয়কর নথিতে তার দায় ক্রমান্বয়ে পরিশোধ দেখানো হলেও তার বাবার কাছ থেকে নেওয়া টাকা পরিশোধের কোনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া পাওয়া যায়নি। যা থেকে দুদক মনে করছে জয়নুল আবেদীন তার ‘অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বৈধ করার জন্য’ ২৬ লাখ টাকা তার ছেলের ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেছিলেন।
জয়নুল আবেদীন তার স্ত্রীর নামে ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ থাকার হিসাব দাখিল করেন।
দুদক তার বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯০৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তা নিজ ভোগদখলে রাখা এবং ছেলে ফয়সালের ফ্ল্যাট কেনার জন্য দেওয়া ২৬ লাখ টাকা নিজ আয়কর নথিতে ও দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে না দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ফয়সাল তার বাবার ‘ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত’ ২৬ লাখ টাকা জেনেশুনে বৈধ করার জন্য সম্পত্তি কিনে ও দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।