Published : 19 May 2025, 11:34 PM
বিএনপিনেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পথ করে দিতে কয়েকটি জটিলতায় পড়েছে সরকার।
সিটি করপোরেশনগুলো যে মন্ত্রণালয়ের অধীন, সেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, এসব জটিলতা দূর না হলে সরকারও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
সোমবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ইউএনএফপিএর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন উপদেষ্টা।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিতে আইনি জটিলতার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, “সকল ধরনের জটিলতা নিরসন না করে সিদ্ধান্তে যেতে পারছি না।”
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচনে ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান এখনও হয়নি।
মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত বুধবার থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শনিবার তারা ‘সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা’ করেন। কর্মসূচির পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।
শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে এদিন স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি চিঠি পাঠান ইশরাক। নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ধানের শীষের প্রার্থীর প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ তোলেন।
দাবি আদায়ে সোমবারও নগর ভবন ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন তারা। মঙ্গলবারও নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক সমর্থকরা।
এদিকে আন্দোলন শুরুর দিনই ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ রিট আবেদনটি করেন, যেখানে ইশরাককে মেয়র ঘোষণাসংক্রান্ত মামলার বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
এরপর বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের করা মামলার রায় ও নির্বাচন কমিশনের আপিল না করার বিষয়ে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি না, তা জানতে চেয়ে আইন ও বিচার বিভাগে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এমন পরিস্থিতিতে রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ইশরাকের বিষয়ে মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে রিট আবেদনের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত আসার পর।
আদালতের সিদ্ধান্ত আসার আগে ইশরাকের সমর্থকদের ‘জনদুর্ভোগ’ সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে অনেক বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে গতকালকের প্রেস রিলিজে। এখানে অনেকগুলো জটিলতা আছে। এখানে কী কী ধরনের আইনি জটিলতা আছে, আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছি। কী ধরনের জটিলতা আছে কিংবা আছে কি না।”
আসিফ মাহমুদ বলেন, “এ সরকার দায়িত্ব আসার পর অধ্যাদেশ করে, আইনে পরিবর্তন এনে সিটি, পৌরসভা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এখানে অনেক আইনি জটিলতা রয়েছে। সেগুলো আমরা আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানতে চেয়েছি।”
এছাড়া মেয়রের মেয়াদ সংক্রান্ত জটিলতাও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার গত অগাস্টেই দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করেছে। মেয়রের জায়গায় বসানো হয়েছে প্রশাসক। তা যদি নাও হত, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ থাকত আর মাস তিনেক।
ইশরাক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিলে কত মাস দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন- সেই প্রশ্নে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা এর আগে বলেছেন, বাকি মেয়াদের জন্য (তিন মাস) নাকি নতুন যোগ দেওয়ার পর থেকে মেয়াদ শুরু হবে- সেটি ইসির গেজেট প্রকাশ, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত ও স্থানীয় সরকার বিভাগের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করবে।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, “আমরা একটা লিগ্যাল নোটিস পেয়েছি এবং আমাদের বিবাদী করে রিটও করা হয়েছে, যাতে শপথ গ্রহণ করতে দেওয়া না হয়। এটা বিচারধীন রয়েছে। সকল ধরনের জটিলতা নিরসন না করে সিদ্ধান্তে যেতে পারছি না। রিটের বিষয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া গেলে, কোনো ধরনের আইনি জটিলতা না থাকলে শপথ নিতে অসুবিধা নেই।”
আন্দোলনরতরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কর্মী উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, “জনভোগান্তি যেন না হয়, সিটির সেবা স্থবির রয়েছে। উনারা ধৈর্য দেখাবেন। আইনি জটিলতা, হাই কোর্টের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন, এটাই প্রত্যাশা।”
ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে চলছে নগর ভবন 'ব্লকেড'
ইশরাক নিয়ে সিদ্ধান্ত হাই কোর্টের আদেশের পর: স্থানীয় সরকার বিভাগ
ধানের শীষের প্রার্থীর প্রতি বৈষম্য হচ্ছে: ইশরাক
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে 'অবাঞ্ছিত' ঘোষণা, নগর ভবনে তালা ইশরাক সমর্থকদের
শপথ পড়ানোর 'ব্যবস্থা' নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে ইশরাকের চিঠি
মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা: আইন মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠি
ইশরাককে মেয়র ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে না ইসি
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা: আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নেবে ইসি
ইশরাকের গেজেট মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই: আসিফ নজরুল
মন্ত্রণালয় যথাসময়ে মতামত দেয়নি, আইনি বাধ্যতায় ইশরাকের গেজেট: ইসি