Published : 11 Jul 2023, 11:36 PM
ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতনসহ বেশ কিছু এলাকার পয়োবর্জ্য পরিশোধনে নির্মিত ওয়াসার দাশেরকান্দি অত্যাধুনিক পয়ঃশোধনাগার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে।
৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই শোধনাগার আগামী ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান।
তিনি বলেছেন, একইদিন প্রধানমন্ত্রী পাগলা পয়ঃশোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
সরকারে মাস্টার প্ল্যানে ঢাকা মহানগরীকে পাঁচটি এলাকায় (পাগলা, দাশেরকান্দি, উত্তরা, রায়েরবাজার ও মিরপুর) বিভক্ত করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর শতভাগ উন্নত ও টেকসই পয়ঃসেবা নিশ্চিত হবে বলে তাকসিম এ খানের ভাষ্য।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা ডিওএইচএস, বসুন্ধরা,বাড্ডা, ভাটারা, বনশ্রী, কুড়িল, সংসদ ভবন এলাকা, শুক্রবাদ, ফার্মগেট, তেজগাঁও, আফতাবনগর, নিকেতন, সাতারকুল ও হাতিরঝিল এলাকার সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদীতে নিষ্কাশনের মাধ্যমে পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধ করা হবে।
এছাড়া সায়েদাবাদ পানি শোধানাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২ এর ইনটেক পয়েন্টে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণ কমানোও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পয়োবর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে ৫০ লাখ নগরবাসীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে কর্মকর্তারা জানান।
আর পাগলা পয়ঃশোধনাগারে কলাবাগান, মগবাজার, শাহবাগ, ইস্কাটন, আরামবাগ, পল্টন, সায়দাবাদ, মতিঝিল, রামপুরা, তালতলা, বাসাবো, গোলাপবাগ, আহমেদবাগ, শহীদবাগ, গোরান, বেগুনবাড়ি, খিলগাঁও ও পশ্চিম নন্দীপাড়ার সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করা হবে।
এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর থেকেই পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলে জানান তাকসিম এ খান।
তিনি বলেন, “রাজধানীতে প্রথম পানি শোধনাগার সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ফেজ-১। ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী তার ভিত্তি স্থাপন করেন। ২০০৯ সালে যখন সরকারে আসলেন তখন তিনি পানি ব্যবস্থাপনার কিছু উদ্যোগ নেন। সে ধারাবাহিকতায় আমরা দুটি মাস্টারপ্ল্যান নেই। একটা হল ওয়াটার মাস্টার প্ল্যান, আরেকটা সুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান।
“ওয়াটার মাস্টার প্ল্যান আমরা শেষ করতে পেরেছি। তারপর ২০১৫ সাল থেকে সুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান আমরা শুরু করেছি। ঢাকা শহরে পাঁচটি পয়ঃশোধনাগার হবে।”
ওয়াসা এমডি বলেন, ঢাকাকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৯০ শতাংশ বর্জ্য পাইপ লাইন দিয়ে সুয়ারেজ সিস্টেমের মধ্যে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়।
“হাতিঝিলের পানি যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য আমরা কয়েকটি ডাইভারশন লাইন করে দিয়েছি। গুলশান, বনানী, তেজগাঁও, ধানমণ্ডি, পান্থপথ, মগবাজার, মালিবাগ, মধুবাগ এই সমস্ত জায়গার পয়ঃবর্জ্য হাতিরঝিলে পড়ত। তা বন্ধ করার জন্য আমরা একটা ডাইভারশন লাইন করে দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার পাঁচটা মাস্টার প্ল্যানের একটি। পাঁচশ মিলিয়ন লিটার প্রতিদিন এখানে ট্রিটমেন্ট করা যায়। চায়নিজদের ভাষায়, এই জাতীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চায়নাতেও নেই। সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট, প্ল্যান্ট ট্রিটমেন্ট, ইনসেনেরেশন। সব ট্রিটম্যান্ট একই প্লান্টে। চায়নাতে এর চেয়ে বড় থাকতে পারে, কিন্তু একসাথে তিনটি সার্ভিস নেই।”
রায়েরবাজার সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ অনেক দূরে গিয়েছে জানিয়ে ওয়াসা এমডি বলেন, “এসব প্রকল্পের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে জমি অধিগ্রহণ করা। এই কাজটা আমাদের এগিয়েছে। উত্তরা সুয়ারেজ শোধনাগারের জমির অধিগ্রহণ করা প্রায় চূড়ান্ত। মিরপুর সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের এর কাজ এগিয়ে চলছে। এটা ডিজাইন ড্রয়িং হয়েছে, ফাইনাল হয়নি।”
তাকসিম এ খান বলেন, “ঢাকায় আমরা ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ সুয়্যার ট্রিট করতে পারি। এটা পাগলা পয়ঃশোধানাগারে মাধ্যমে ট্রিট করা হত, এটাও অনেকটা নড়বড়ে। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার হওয়ার পর আমরা অলমোস্ট ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ট্রিট করতে পারছি।
“পাগলা হয়ে গেলে আমরা মিনিমাম ৩৫ শতাংশ সুয়ারেজ কিলিং করতে পারব। কোনো ময়লা বা অপরিশোধিত পয়ঃবর্জ্য যাতে করে ঢাকার চারপাশে জলাভূমি নদী, খালে যাতে না যায়- এটাই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য।”
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মহসিন আলী বলেন, এটি হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্পের একটি অংশ।
“হাতিরঝিল করার সময় এই প্রকল্পের ডাইভারশন লাইন করা হয়েছে। সেই ডাইভারশন লাইন দিয়ে রামপুরা খালে পয়ঃবর্জ্য ফেলা হত। হাতিরঝিলকে বাঁচানোর জন্যই রামপুরা খালে ফেলা হত, সেখানে ফেলার কারণেও পরিবেশ দূষিত হয়।
“হাতিরঝিলের দক্ষিণ পাশে নির্মিত ছয়টি ও উত্তর পাশে নির্মিত ছয়টি স্পেশাল স্যুয়ারেজ ডাইভারশন স্ট্রাকচার (এসএসডিএস) এর মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পয়ঃবর্জ্য নতুন নির্মিত এই দাশেরকান্দি পয়ঃশোধানাগর আসছে। এসব এলাকা থেকে আসা প্রায় ৫০ কোটি লিটার পয়োবর্জ্য শোধন করে ফেলা হচ্ছে বালু নদীতে। এতে প্রায় ৫টি খালসহ বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ কমছে।”
প্রকল্প পরিচালক মহসিন আলী জানান, দাশেরকান্দি প্রকল্পের তিনটি অংশ রয়েছে। একটি রামপুরা ব্রিজের পাশে হাতিরঝিল সংলগ্ন লিফটিং সেশন। এখানে আটটি পাম্প বসানো আছে, যার মধ্যে ছয়টি সব সময় চালু থাকে। লিফটিং সেশন থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার। সেখানে ডাবল লাইনের ব্যবস্থা রয়েছে। এই প্রকল্পটি মোট ৬২ একর জমির নিয়ে হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালের ২৫ অগাস্ট দাশেরকান্দি প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
শুরুতে প্রকল্পের খরচ ছিল ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।
তবে দ্বিতীয় সংশোধনীতে এ প্রকল্পের ব্যয়ে ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা, তাতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।