Published : 16 Oct 2022, 06:56 PM
জেলা পরিষদ নির্বাচনে সারাদেশে ৪৬২টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন; সবগুলো কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা, আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে বসে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করবে ইসি।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। ৬০ হাজার ৮৬৬ ভোটার এ নির্বাচনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য মিলিয়ে ৬৭১ জন জনপ্রতিনিধি বাছাই করবেন।
গাইবান্ধা উপ নির্বাচনের মত সিসি ক্যামেরায় জেলা পরিষদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।
বুধবার গাইবান্ধায় বর্তমান ইসির অধীনে প্রথম ভোটে সিসি ক্যামেরায় ব্যাপক অনিয়মের চিত্র দেখে মাঝপথে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত দেয় ইসি, যা নিয়ে নানামুখি আলোচনা তৈরি হয়।
জেলা পরিষদে ভোটের প্রস্তুতি জানাতে এসে সিইসি হাবিবুল আউয়াল রোববার বলেন, “সিসিটিভির প্রচলনটা সাম্প্রতিক। আমরা এটার মাধ্যমে এখান থেকে নির্বাচন মনিটরিং করতে পারি। এটা একটা ভালো দিক।
“আমাদের তো কোনো পক্ষ নেই। আমরা চাই ভোটাররা যেন তাদের ভোটটা দিতে পারেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা সিসি টিভির ব্যবহার করছি।”
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “আমাদের উপর কোনো চাপ নেই। আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। আমরা আমাদের কাজ করছি।”
জেলা পরিষদ ভোট কেমন হবে, তা সোমবারই বলা যাবে বলে মন্তব্য করেন হাবিবুল আউয়াল।
দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। পরে হাই কোর্টের আদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালীর নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।
এছাড়া ভোলা ও ফেনীর সকল পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে সোমবার ভোটগ্রহণ হবে ৫৭ জেলা পরিষদে।
এ নির্বাচনে ভোটারদের মোবাইল নিয়ে ভোটকক্ষে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি গোপন কক্ষে ভোট দেওয়ার ছবি না তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসক। আর তার সহকারী হিসেবে থাকেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অন্য নির্বাচন কর্মকর্তারা।
তবে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের ভোটে জেলা প্রশাসককে পাল্টে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ভোটের সব ধরনের আয়োজন শেষ হয়েছে। ইভিএম ও সিসি ক্যামেরাসহ নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছেছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে।
এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন কেবল সংশ্লিষ্ট জেলার স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। কোন এলাকার ভোটার কোন কেন্দ্রে ভোট দেবেন তা আগেই গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
কেন্দ্রে যাওয়ার পর একজন ভোটারকে তিনটি আলাদা ব্যালটে ভোট দিতে হয়। তিন পদেই ইভিএমে ভোট হবে।
একনজরে
· ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ৬০ হাজার ৮৬৬ নির্বাচিত প্রতিনিধি ভোট দেবেন।
· ৪৬২ ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষ ৯২৫টি। প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটি ভোটকেন্দ্র। প্রত্যেক কেন্দ্রে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা কক্ষ।
· ৫৭ জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান, ৪৪৮ সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৬৬ সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোটগ্রহণ হবে।
· প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী: চেয়ারম্যান পদে ৯২ জন। সাধারণ সদস্য ১৪৮৫ জন। সংরক্ষিত সদস্য ৬০৩ জন।
জেলা পরিষদ বৃত্তান্ত
১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদ সরকার প্রণীত স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল; পরে আইনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে। এরপর ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয়। অনির্বাচিত এই প্রশাসকদের মেয়াদ শেষে ২০১৬ সালে ভোট হয়।
জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে গত ৬ এপ্রিল ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০২২’ সংসদে পাস হয়। ১৩ এপ্রিল সংশোধিত জেলা পরিষদ আইনের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সর্বশেষ ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম জেলা পরিষদের ভোট হয়েছিল।
এবারের নির্বাচনকে ঘিরে ২৩ অগাস্ট তফসিল ঘোষণা, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা; ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাই, ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় ছিল।
আরও খবর
জেলা পরিষদে ভোট: মোবাইল ফোন নিয়ে ভোটকক্ষে যেতে মানা
জেলা পরিষদ নির্বাচন: ভোটের দায়িত্ব থেকে সরানো হচ্ছে চট্টগ্রামের ডিসিকে
জেলা পরিষদের দ্বিতীয় ভোট ১৭ অক্টোবর
জেলা পরিষদ: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের ২৭ প্রার্থী