জাতীয় ক্রিকেট লিগ
Published : 23 Nov 2024, 07:59 PM
টুকটাক রান করছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, কিন্তু খেলতে পারছিলেন না বড় ইনিংস। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দারুণ ব্যাটিংয়ে দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেলে অপরাজিত আছেন তিনি। সঙ্গে তাহজিবুল ইসলামের ফিফটিতে রংপুরের বিপক্ষে বড় সংগ্রহের পথে ছুটছে ঢাকা মেত্রো।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের ষষ্ঠ রাউন্ডের প্রথম দিন শনিবার ভিন্ন দুই ম্যাচে বল হাতে আলো ছড়ান সুমন খান ও নাঈম হাসান। রাজশাহীর বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে হ্যাটট্রিকসহ স্রেফ ১৮ রানে ৭ উইকেট নেন ঢাকা বিভাগের পেসার সুমন। আর খুলনার বিপক্ষে ৪৮ রানে ৫ উইকেট নেন চট্টগ্রামের স্পিনার নাঈম।
ঢাকা মেট্রোর শক্ত ভিত
কক্সবাজারের একাডেমি মাঠে নাঈম শেখের সেঞ্চুরিতে প্রথম দিন শেষে ঢাকা মেট্রোর রান ২ উইকেটে ২৭৬।
প্রতিযোগিতার চলতি আসরে আগে চার রাউন্ড খেলে কেবল একটি ফিফটি করতে পেরেছিলেন নাঈম শেখ। তিনটি ইনিংস ছিল ত্রিশ ছোঁয়া। এবার বাঁহাতি ওপেনার উপহার দিলেন ক্যারিয়ার সেরা ১৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। তার ২২২ বলের ইনিংসে ১ ছক্কার সঙ্গে চার ১৬টি।
২ ছক্কা ও ৪টি চারে তাহজিবুল করেন ৭৩ রান। আসরে এটি তার দ্বিতীয় ফিফটি।
টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া ঢাকা মেট্রো নাঈম শেখ ও আনিসুল ইসলামের ব্যাটে পায় ভালো শুরু। ১ ছক্কা ও ৩ চারে ২৪ রান করা আনিসুল কটবিহাইন্ড হলে ভাঙে ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি।
পরে তাহজিবুলকে নিয়ে ১৯৮ রানের জুটি গড়েন নাঈম শেখ। দ্রুত গতিতে রান তুলে ৫৭ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। সাবধানী ব্যাটিং করা তাহজিবুলের পঞ্চাশ আসে ১৩০ বলে।
চা বিরতির কয়েক ওভার আগে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন নাঈম শেখ, ১২৭ বলে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি।
তাহজিবুলের বিদায়ে ভাঙে জমে যাওয়া জুটি। তবে নাঈম শেখ এগিয়ে যান দৃঢ়তায়। ১৯৮ বলে দেড়শ রান স্পর্শ করেন তিনি। এই সংস্করণে তার আগের সেরা ১২০।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ৮২ ওভারে ২৭৬/২ (নাঈম শেখ ১৫৩*, আনিসুল ২৪, তাহজিবুল ৭৩, আইয়ুব ১৬*; রবিউল ৯-৪-২৪-০, মেহেদি ১১-২-৩৭-০, নজরুল ১৪-১-৫৩-১, মামুন ৫-০-২৯-০, লিয়ন ১৮.২-০-৫৮-০, রিজওয়ান ১-০-১-০, খালিদ ৫-০-১৬-০, নাঈম ৩.৪-০-১৩-০, তাইবুল ৮-০-২৮-০, আরিফুল ৭-৩-১২-১)
নাঈম হাসানের ৫ উইকেট
সিলেট একাডেমি মাঠে নাঈম হাসানের ঘূর্ণিতে খুলনাকে ২০৪ রানে গুটিয়ে ব্যাটিং করছে চট্টগ্রাম। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩১ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করেছে তারা।
চট্টগ্রাম এখনও পিছিয়ে আছে ১৭৩ রানে।
এবারের আসরে নিজের চতুর্থ ম্যাচে এসে প্রথমবার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন নাঈম। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই অফ স্পিনারের এটি সপ্তদশ পাঁচ উইকেট।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা শিবিরে শুরুতেই ছোবল দেন নাঈম। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে এনামুল হককে বিদায় করেন ৩০ রানে। এরপর হাসানুজ্জামান, নাহিদুল ইসলাম, মেহেদি হাসান রানা ও আরিদুল ইসলাম আকাশকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি।
খুলনার রান দুইশ ছাড়ায় অমিত মজুমদারের সৌজন্যে। এই ওপেনার ১ ছক্কা ও ৯ চারে ১৯৯ বলে করেন ৭৫ রান। এছাড়া আর কেউ ৩০ রানও পার করতে পারেননি।
দারুণ বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন চট্টগ্রামের আশরাফুল ইসলাম।
পরে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রামকে কোনো উইকেট হারাতে দেননি সাদিকুর রহমান ও পারভেজ হোসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা ১ম ইনিংস: ৭৪ ওভারে ২০৪ (এনামুল ৩০, অমিত ৭৫, হাসানুজ্জামান ১১, রবিউল ০, মিঠুন ২৩, নাহিদুল ৯, পারভেজ ২৭, মাসুম ২, মেহেদি ৫, আকাশ ০, আল আমিন ৪*; ফাহাদ ১০-১-৪৩-১, শরিফ ১৯-৭-৫১-১, এনামুল ১১-২-২৫-০, নাঈম ২৮-১১-৪৮-৫, আশরাফুল ৬-১-২০-৩)
চট্টগ্রাম ১ম ইনিংস: ৯ ওভারে ৩১/০ (সাদিকুর ১১*, পারভেজ ২০*; আল আমিন ৩-১-৯-০, মেহেদি ২-০-১৪-০, মাসুম ১-১-০-০, নাহিদুল ২-১-৪-০, পারভেজ ১-০-৪-০)
সুমনের ৭ উইকেট, ৪২ রানে গুটিয়ে রাজশাহীর রেকর্ড
বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ঢাকার সুমন খানের আগুনে বোলিংয়ে পুড়ল রাজশাহী। প্রথম ইনিংসে স্রেফ ৪২ রানে অলআউট হয়ে বিব্রতকর এক রেকর্ড গড়ল দলটি। দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটিই সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর।
গত মৌসুমের জাতীয় লিগে খুলনার বিপক্ষে বরিশালের ৪৬ রান এত দিন ছিল সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। এছাড়া ২০১৪ সালে জাতীয় লিগের ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে ৪৮ রানে অলআউট হয়েছিল ঢাকা মেট্রো।
পরে ব্যাটিংয়ে নেমে আহামরি ভালো করতে পারেনি ঢাকা। তাদেরকে ১৮১ রানে গুটিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করছে রাজশাহী। ১ উইকেট হারিয়ে ১৮ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে তারা। এখন দলটি পিছিয়ে আছে ১২১ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে এদিন প্রথম সেশনেই অলআউট হয়ে যায় রাজশাহী। সুমনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে মাত্র ২০.৫ ওভার খেলতে পারে তারা।
রৌদ্রজ্জ্বল সকালে প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত করেন সুমন; ফেরান তানজিদ হাসান ও রহমতউল্লাহ আলিকে। এরপর নবম ওভারে এসে ধরেন সাব্বির হোসেন ও প্রিতম কুমারের শিকার।
দারুণ দুটি ডেলিভারিতে সানজামুল ইসলাম ও মোহর শেখকে আউট করে হ্যাটট্রিকের দুয়ারে পৌঁছে যান সুমন। পরে আসাদুজ্জামানকে এলবিডব্লিউ করে ৩৯ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে প্রথম হ্যাটট্রিকের স্বাদ পান ২৪ বছর বয়সী পেসার।
পরে ব্যাটিংয়ে নেমে জিশান আলম ও রনি তালুকদারের ব্যাটে ভালো শুরু পায় ঢাকা। দুই ওপেনারের চল্লিশ ছোঁয়া ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৮৫ রান। ৭ চারে জিশান করে ৪৪ রান, ৬ চারে রনি ৪০।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকতে দলটি। আশিকুর রহমানের ২৯, শেষ দিকে সুমনের ২৬ ও রিপন মন্ডনের ১৫ রান ছাড়া আর কারো ব্যাট থেকে আসেনি দুই অঙ্কের রান।
রাজশাহীর হয়ে ৪ উইকেট নেন আসাদুজ্জামান পায়েল। তিনটি শিকার ধরেন মোহর শেখ।
পরে আবার ব্যাটিংয়ে নেমে রহমতউল্লাহকে হারায় রাজশাহী। সাব্বির ও তানজিদ মিলে বাকি সময় নিরাপদে কাটিয়ে দেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী ১ম ইনিংস: ২০.৫ ওভারে ৪২ (তানজিদ ০, সাব্বির ১০, রহমতউল্লাহ ০, মিজানুর ৮, প্রিতম ০, মেহেরব ১৮, শাকির ২, সানজামুল ৩, শফিকুল ০*, মোহর ০, আসাদুজ্জামান ০; সুমন ৭.৫-২-১৮-৭, রিপন ৬-১-১০-১, এনামুল ৫-২-১১-১, রুবেল ২-১-২-১)
ঢাকা ১ম ইনিংস: ৪২.২ ওভারে ১৮১ (জিশান ৪৪, রনি ৪০, জয়রাজ ৫, আরিফুল ১, আশিকুর ২৯, শুভাগত ৭, রুবেল ৪, মাহফুজুর ২, সুমন ২৬, রিপন ১৫, এনামুল ০*; শফিকুল ৯-০-৫৮-২, মোহর ১৪-০-৬৮-৩, সাব্বির ৯-১-২১-১, আসাদুজ্জামান ১০.২-৪-৩১-৪)
রাজশাহী ২য় ইনিংস: ৬ ওভারে ১৮/১ (রহমতউল্লাহ ১, সাব্বির ২*, তানজিদ ৯*; সুমন ২-০-৩-০, এমানুল ২-১-৪-১, মাহফুজুর ১-০-৫-০, শুভাগত ১-০-১-০)
আব্দুল মজিদের ফিফটি
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়ে ৮ চারে ৭৮ রান করেছেন আব্দুল মজিদ। সঙ্গে বাকিদের টুকটাক অবদানে সিলেটের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে বরিশাল।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বরিশালের সবাই পান দুই অঙ্কের ছোঁয়া। কিন্তু মজিদ ছাড়া কেউ খেলতে পারেননি বড় ইনিংস।
দলটির ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি এসেছে কেবল একটি; সোহাগ গাজিকে নিয়ে গড়েছেন মজিদ। ১ ছক্কা ও ৬ চারে ৪৩ রান করেছেন সোহাগ গাজী।
সিলেটের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন রেজাউর রহমান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বরিশাল ১ম ইনিংস: ৭৯ ওভারে ২৫৮/৭ (ইফতেখার ২০, মজিদ ৭৮, আদিল ১৫, তাসামুল ১৩, সালমান ১২, মইন ২৫, সোহাগ ৪৩, মইনুল ১৬*, তানভির ৬*; এবাদত ১৩-১-৩৬-১, খালেদ ১৩-২-৪৩-০, রেজাউর ১৫-৪-৫৯-৩, তোফায়েল ১২-৩-২০-১, নাসুম ২২-৬-৪৮-১, রাহাতুল ৩-০-২৬-১, আসাদুল্লাহ ১-০-৪-০)