Published : 20 Jun 2023, 09:38 PM
সুসজ্জিত হাতি আর রথে শ্রী জগন্নাথ-সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবকে চড়িয়ে, বেলুন উড়িয়ে, রথের রশি টেনে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের রথযাত্রা উৎসব।
মঙ্গলবার বিকালে নগরীর নন্দনকানন তুলসীধামের কেন্দ্রীয়ভাবে এই রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়।
মদনমোহন নরসিংহ গোপাল জীও’র মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে ঢোলক বাদ্য, মঙ্গল শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে শ্রীজগন্নাথ-সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবকে রথারোহণ করানো হয়।
পরে বেলুন উড়িয়ে ও রথের রশি টেনে রথপরিক্রমা শুরু করেন তুলসীধামের মোহন্ত এবং অতিথিরা।
রথযাত্রা উপলক্ষে নয় দিনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামে, যা ২৮ জুন উল্টো রথের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, শ্রী শ্রী কৈবল্যধামের মোহন্ত মহারাজ কালীপদ ভট্টাচার্য্য ও চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় মঙ্গলবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এ উৎসব উপলক্ষে সকাল থেকে নন্দনকানন এলাকায় সাজ সাজ রব দেখা যায়। বিভিন্ন আকারের রথ সাজিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ভক্তরা। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১৭৩০ সাল থেকে এই রথযাত্রা হচ্ছে। এ আয়োজনের বয়স প্রায় তিনশ বছর।
এই শোভাযাত্রায় হাজারী লেইন শ্রীকৃষ্ণায়ন রথ, পাথরঘাটা জগন্নাথ মন্দিরের রথ, গঙ্গাবাড়ির রথ, গৌর গিরিধারী মন্দিরের রথ, সদরঘাট পার্বতী ফকির পাড়ার রথ, মাইজপাড়ার রথ, ফিরিঙ্গীবাজার শাহাজীপাড়ার রথ, টেকপাড়ার রথ, এনায়েত বাজার কেদারনাথ তেওয়ারী কলোনির রথ, টাইগারপাস জগন্নাথ সংঘের রথ, পুরাতন কাস্টমস এলাকার রথ, ইপিজেড শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের রথসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের রথ পরিক্রমায় অংশ নেয়।
বিকালে নগরীর বৌদ্ধ মন্দির মোড় থেকে ইসকন বিভাগীয় কেন্দ্রীয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়।
সেই অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “পবিত্র এই ধর্মীয় উৎসবে চট্টগ্রামের সকল ধর্মের লোকজন মিলে আমরা সম্প্রীতির অন্যতম নজির রেখেছি। আমরা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এ রথযাত্রা উৎসবে অংশ নিচ্ছি।
“আমরা এ শপথ নেব, যারা এ বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করতে চায়, সনাতন ধর্মালম্বীসহ অন্যান্য ধর্মালম্বীদের জায়গা দখল করতে চায়, ধর্মে ধর্মে বিভাজন সৃষ্টি এবং ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার বিরুদ্ধে অবস্থান করে তাদের প্রতিহত করব। স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই যে, আমরা তাদের সবসময় পরাজিত করব।”
নগরীর প্রবর্তক মোড়ে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের রথযাত্রা শুরু হয় বিকাল ৪টায়; ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এ সময় তিনি বলেন, “আমাদের এই দেশ হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ সকলের দেশ। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে হাত ধরে যুদ্ধ করে আমাদেরও এই দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে।
“এই দেশে সকল ধর্মের মানুষ ও সকল সম্প্রদায়ের সমান অধিকার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য একটি পক্ষ সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নির্যাতন চালাতে চায়। তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়। মাঝে মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াতে চায়। আমাদের সবাইকে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।”
কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী। স্বাগত বক্তব্য দেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী।
পরে রথযাত্রার বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রা প্রবর্তক মোড় থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সিনেমা প্যালেস প্রাঙ্গনে সমাপ্ত হয়।
নগরীর মোড়ে মোড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা রথযাত্রায় অংশ নিয়ে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি, মঙ্গলপ্রদীপ পূজার নৈবেদ্য সহকারে জগন্নাথ-বলদেব-সুভদ্রাকে অভ্যর্থনা জানায়।
ঢোলের বাজনার সঙ্গে শোভাযাত্রায় বিভিন্ন পৌরাণিক সাজের মাধ্যমে আবহমান বাংলা ও পৌরাণিক বিভিন্ন চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উৎসবে।
আরও পড়ুন
চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্মালম্বীদের রথযাত্রা উপলক্ষে ৯ দিনের আয়োজন