Published : 09 May 2025, 12:26 AM
মূল্যস্ফীতি কমছে দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সরকারের চেষ্টা ও নীতির ধারাবাহিকতা থাকলে মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা ‘অসম্ভব কিছু হবে না’।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা যদি একদিকে টাকা ছাপাই, আর আরেকদিকে বলি মূল্যস্ফীতি কমে না, তাহলে তো হবে না।
“আমাদের এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। সে জায়গা থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মূল্যস্ফীতি কমতে একটু সময় লাগছে। তবে আস্তে আস্তে সেটি কমে আসবে।”
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস্ বিভাগ আয়োজিত ব্যাংকার-এসএমই নারী উদ্যোক্তা সমাবেশ, পণ্য প্রদর্শনী ও মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন গভর্নর।
তিনি বলেন, “দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ। এখন তা সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্য বহির্ভুত মূল্যস্ফিতি ছিল সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি, সেটি এখন ৯ শতাংশের একটু বেশিতে রয়েছে।
“আমি আশাবাদী এটা আস্তে আস্তে আরও কমবে। আমরা যদি চেষ্টা করি, নীতির স্থিতিশীলতা থাকে তাহলে ৪-৫ শতাংশে মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনা অসম্ভব কিছু না। সেটিই হবে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধান।”
নারীদের বিষয়ে গভর্নর মনে করেন, সাংবিধানিকভাবে নারীদের যে অধিকার রয়েছে, বাস্তবে তারা সেই অধিকার পাচ্ছেন না। ব্যাংক থেকে নারীরা ঋণ নিতে গেলে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “নারীদেরকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আমাদের মা-বোনদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে বর্তমান বাস্তবতায় তা উচিত নয়।”
তাছাড়া নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা জরুরি বলেও মনে করেন আহসান মনসুর।
এছাড়া বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ নারীরা পাচ্ছেন, যা বাস্তবসম্মত নয় বলে তিনি মনে করেন।
গভর্নর বলেন, “নারীদের জন্য কীভাবে বেশি ঋণ দেওয়া যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া লাগবে। একই সঙ্গে তাদের আর্থিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেব, তবে তা শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল বাড়িয়ে নয়। কারণ সেখান থেকে দিলে নতুন টাকা তৈরি করতে হয়। নারীদের ঋণ দিতে হবে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে, তাদের অধিকার বিবেচনায় রেখেই।”
ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, দেশের প্রায় অর্ধেক নারী। নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব না। তাই অনেক বেশি যাতে নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয় সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ঋণব্যবস্থা সহজ করে একটি ‘মাস্টার সার্কুলার’ জারি করেছে।
সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, “এসএমই কার্যক্রমে এখন সব ব্যাংকই এগোচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আমাদের সঙ্গে খুবই সম্পৃক্ত। নারীদের ঋণের পুরো টাকাটাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাই। এই ঋণটা খুব সামান্য সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক দিচ্ছে। এটা খুবই দুর্দান্ত একটি কর্মসূচি।”
চার দিনের এ মেলা চলবে ১১ মে পর্যন্ত। এবারের মেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে ৬৮ জন নারী উদ্যোক্তা তাদের পণ্য বিক্রি ও প্রদর্শন করছেন। এবারের মেলার শেষ দিনে ছয়জন নারী উদ্যোক্তাকে সম্মাননা দেওয়া হবে।
এর আগে ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ মেলা আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর কোভিড মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে গত চার বছর এ আয়োজন বন্ধ ছিল।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ ও এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা।