Published : 12 Oct 2023, 03:12 AM
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবিতে ঋণের তথ্য হালনাগাদের ক্ষেত্রে নিয়মের যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তার সঙ্গে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ‘কোনো সম্পর্ক নেই’।
ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে থেকে সিআইবির তথ্য হালনাগাদের বিষয়ে যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে, সে বিষয়ে বুধবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ব্যাখ্যা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিয়মের এই পরিবর্তন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত কর্মকাণ্ডের অংশ এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
“কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কাজ সব সময় করে যাবে। এই কাজ কখনো রোজার ঈদের সামনে পড়বে, কখনো আমাদের কাজ কোরবানির ঈদের সামনে পড়বে- নির্বাচনের সময় পড়বে। যেগুলো আমাদের চলমান কর্মকাণ্ড তা নির্বাচনের জন্য বন্ধ করে রাখা যাবে না।”
সিআইবি হচ্ছে ঋণ সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারে জমা দেওয়ার তথ্য ভাণ্ডার। আগে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকার ঋণের তথ্য সিআইবিতে জমা দিতে হত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। এখন এক টাকার ঋণের তথ্যও সিআইবিতে জমা দিতে হয়।
প্রতি মাসে খেলাপিসহ কোন ঋণের মান কেমন- তা সিআইবিতে জানিয়ে রাখতে হয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণ খেলাপি কেউ নতুন করে কোনো ঋণ নিতে পারেন না। আইন অনুযায়ী, খেলাপি থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।
আগে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে ঋণের তথ্য সিআইবিতে জমা দেওয়া হত। এখন থেকে যে কোনো ব্যাংকের শাখা পর্যায় থেকেই সিআইবি তথ্য জমা দেওয়া যাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের দেওয়া সেই তথ্যই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে জানিয়ে মেজবাউল হক বলেন, সিআইবি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছে। এতদিন কাগজের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবির সার্ভারে অনলাইনে ঋণ তথ্য জমা (আপলোড) দিত ব্যাংকগুলো। অনলাইনে আপলোড ও কাগজের মাধ্যমে জমা দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখে- তা সঠিক কি না, যাচাই-বাছাই শেষে গ্রাহকের ঋণ মান দেখাত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি।
“এতে মাস খানেক, কখনো কখনো দুই মাসও সময় লেগে যেত। এই সময় কমিয়ে আনতে রিয়েল টাইম তথ্য জমা দেওয়ার সুযোগ করতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে বিষয়টি ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
সিআইবিতে তথ্য সংযোজনের নতুন নিয়মগুলোও সংবদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
এতদিন ব্যাংকগুলো ঋণ মান পরিবর্তনের বিষয়ে চিঠি দিয়ে সিআইবিতে জানানোর পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা যাচাই-বাছাই করে ঋণ মান পরিবর্তন করত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আগের মাসের শেষ কর্মদিবসের ঋণ তথ্য সিআইবিতে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেব দুলাল রায় বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে কোনো ভুল পেলে তখন ব্যাংকের কাছ থেকে সঠিক তথ্য নিয়ে সিআইবিতে হালনাগাদ করা হত।
নতুন নিয়মে ব্যাংকগুলো কত দিনের মধ্যে তাদের ঋণ তথ্য হালনাগাদ করবে জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, “ব্যাংক যখনই তথ্য আপলোড করবে, ওই দিনের তথ্যই যোগ হবে। আমরা চেষ্টা করছি ব্যাংকগুলো যাতে দিন শেষেই তা আপলোড করে।”
তাতে সিআইবিতে ভুল তথ্য যোগ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে কি না– এই প্রশ্নে মেজবাউল হক বলেন, “ঋণের তথ্য ব্যাংকের কাছেই থাকে। প্রতিটি তথ্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে সার্ভারে আপলোড করা হলে কোনো ভুল তথ্য আসবে না।”
ঋণ সংক্রান্ত প্রতিটি লেনদেনের তথ্যই সিআইবিতে জমা হবে জানিয়ে দেব দুলাল রায় বলেন, “আগের নিয়মের মতই ঋণ আদায় না হলে মেয়াদ অনুযায়ী নিয়মিত, সাব-স্টান্ডার্ড, খেলাপি ও মন্দ মানের ঋণ হিসেবে শ্রেণিকরণ হবে। এতে কোনো পরিবর্তন হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক আগের মতই ঋণ মানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।”
একজনের এনআইডির বিপরীতে অন্য কেউ ঋণ নিলে নতুন পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তা ধরতে পারবে কি না– এমন প্রশ্নের উত্তরে মেজবাউল হক বলেন, সিআইবি শুধু তথ্য সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু দেখে ঋণ সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়েছে কি-না। কিন্তু ঋণের বেনিফিসিয়ারি তিনি কি না (যার নামে ঋণ মঞ্জুর তিনি ঋণ নিচ্ছেন কি না) তা দেখার সুযোগ নেই সিআইবির।
ঋণের বেনিফিসিয়ারি কে– তা শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যাংক জানে মন্তব্য করে মেজবাউল হক বলেন, ‘‘সিআইবি হচ্ছে তথ্য ভাণ্ডার। এখান থেকে ঋণ তথ্য নিয়ে যা আছে তা জানতে পারবে ব্যাংকগুলো। তথ্য ভুল দিচ্ছি কি সঠিক দিচ্ছি তা বিচার্য বিষয় না। তথ্য জেনে যারা সিদ্ধান্ত নেবেন, এটি তাদের বিষয়।”
সিআইবিতে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে ব্যাংক ও ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) পাশাপাশি তথ্যদাতা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেও জরিমানা করার সিদ্ধান্ত হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে। আগে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া বা তথ্য গোপন করার জন্য কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেই জরিমানা করার বিধান ছিল।
এক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমান করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের পক্ষে নিযুক্ত তথ্য সরবরাহকারী কর্মীকে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সিআইবিতে দেওয়া তথ্য ‘স্পর্শকাতর’ বিবেচনায় ‘অতি গোপনীয়’ হিসেবে ধরা হয়। সে কারণে কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সিআইবিতে দেওয়া তথ্য আংশিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থার কাছে প্রকাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
শুধু আদালত ও জাতীয় সংসদের প্রয়োজনে সিআইবিতে থাকা তথ্য সরবরাহ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।