Published : 17 Feb 2024, 07:53 PM
অর্থনীতির সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের তথ্য পর্যালোচনা করে পরের মাস কেমন যেতে পারে সেটির একটি আগাম ধারণা দিতে পার্চেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) চালু হতে যাচ্ছে।
কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা খাতে দেশের পাঁচশত কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি মাসে তথ্য সংগ্রহ করে এ সূচক আগামী মে মাস থেকে প্রকাশ করা হবে।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা মেট্টোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এ সূচক প্রকাশ করবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ (পিইবি) এর সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো এ সূচক প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিক সহযোগিতা করবে ইউকে ডেভেলপমেন্ট।
শনিবার ঢাকার মতিঝিলে এমসিসিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পিইবি এর চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ এ সূচক চালুর বিষয়ে তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অনেক দেশেই পিএমআই সূচক নিয়মিত প্রকাশ করা হয়। এটি অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক অবস্থা বুঝতে সহায়তা করে।
১৯৪৯ সাল থেকে চালু হওয়া পিএমআই সূচক বেশির ভাগ দেশই চালু করেছে।
সিঙ্গাপুর ও চীনের পিএমআই ইনডেক্স তৈরি করা কোম্পানির কাছ থেকে এ সূচক তৈরির কারিগরি সহায়তা নেবে পিইবি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘‘দেশের পাঁচশত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে তথ্য নেওয়া হবে। এই তথ্য পর্যালোচনা করে মাসের শুরুতেই পিএমআই সূচক প্রকাশ করা হবে।“
তিনি বলেন, সরকার ও বেসরকারি খাত এ সূচক থেকে আগের মাসে দেশের অর্থনীতির হালচাল কেমন ছিল সেই ধারণা নিতে পারবে। চলতি মাসের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কেমন যেতে পারে সে আভাসও পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পিএমআই সূচক তৈরিতে কৃষি খাতের মধ্যে শস্য উৎপাদন, মৎস্য ও প্রাণিজ উৎপাদনকারী মিলিয়ে ৪৬টি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে পিইবি।
উৎপাদন খাতের বৃহৎ কোম্পানি ৪৪টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ৩০টি ও কুটির শিল্পের ১৮টি মিলিয়ে ৯২টি কোম্পানি, নির্মাণ খাতের ৫০টি এবং সেবা খাতের খুচরা পণ্য বিক্রেতা, আবাসন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, খাদ্যসহ বিভিন্ন কোম্পানি মিলিয়ে ২১২টির তথ্য নেওয়া হবে।
মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘‘সূচক দেখে ধারণা করা যাবে কোন কোন খাত কেমন গেল। যদি কোনো খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়, তাহলে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নীতি র্নিধারকদের গভীর পর্যালোচনা করার সুযোগ তৈরি হবে।’’
তিনি বলেন, যে মাসের তথ্য নিয়ে পিএমই সূচক প্রকাশ করা হবে, তা মোটাদাগে ধারণা দেবে মাসটিতে এই চার খাতের ব্যবসা এগিয়েছে, না কি পিছিয়েছে।
উদ্যোক্তাদের কাছে যে ধরনের প্রশ্ন করা হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-উৎপাদন, কাঁচামাল ক্রয়, লাভ-ক্ষতি, পণ্য বিক্রি কমেছে না বেড়েছে। এ সংক্রান্ত প্রশ্ন এমনভাবে চাওয়া হবে যাতে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক গোপনীয়তা বজায় থাকে।
পিএমআই সূচকে মোট ১০০ নম্বরের বিপরীতে ৫০ এর নিচে হলে অর্থনীতি সংকুচিত হচ্ছে, ৫০ এর বেশি হলে অর্থনীতি সম্প্রসারিত বা অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে বলে ধরা হবে।
আর সূচকের মান ৫০ হলে ধরা হবে অর্থনীতি স্থবির (এক জায়গায় স্থির থাকা) অবস্থায় রয়েছে।
মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘‘পর্যালোচনায় একক মাসে কোনো খাতের তথ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন হলে, এর পেছনের কারণগুলো খুঁজে দেখার সুযোগ হবে।’’
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থনীতির সবগুলো সূচক প্রকাশ করছে নিয়মিত। পিএমআই সূচক কী ভূমিকা রাখতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘‘প্রতি মাসেই নিয়মিত তথ্য প্রকাশ করা হবে আগের মাসটির বিষয়ে। এখানে গত মাসের তথ্য যেমন থাকবে-আগামি মাস কেমন যেতে পারে তার পূর্বাভাস দেওয়া থাকবে।’’
বিষয়ট পর্যবেক্ষণমূলক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অর্থনীতিতে কোনো দুর্যোগ বা মহামারীর মতো কোনো সমস্য দেখা দিতে পারে কি না, সেই পর্যবেক্ষণ দেওয়া থাকবে। আগাম পর্যবেক্ষণ কেউ দিচ্ছে না। পিএমআই সূচক সেই ধারণা দেওয়ায় বেসরকারি খাত ও সরকার উপকৃত হবে।’’
এমসিসিআইয়ের মহাসচিব ফারুক আহমেদ বলেন, ‘‘পিএমআই সূচক অর্থনীতির একটি পর্যবেক্ষণ দেবে মাত্র। এর কোনো পূর্বাভাস নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেবে না। কখনও তা হলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে এমসিসিআই।’’