Published : 20 Oct 2022, 01:59 PM
মস্কো জয়ের পর এবার নিউ ইয়র্কের কুইন্স ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভালে তিনটি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছে গণঅর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশর সিনেমা ‘আদিম’।
নির্মাতা যুবরাজ শামীম জানান, উৎসবে ‘ন্যারোটিভ ফিচার ফিল্ম’ ক্যাটাগরিতে সেরা সিনেমা, সেরা পরিচালক ও সেরা সিনেমাটোগ্রাফির মনোনয়ন পেয়েছে তার চলচ্চিত্র।
এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের নেটপ্যাক জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় এই সিনেমা।
উৎসবের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, আগামী ১ নভেম্বর শুরু হয়ে কুইন্স ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভাল চলবে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত।
গণঅর্থায়নের সিনেমা ‘আদিম’ যাচ্ছে মস্কো
গণঅর্থায়নের সিনেমা ‘আদিম’-এর মস্কো জয়
এ আয়োজনে অংশ নিতে কী ধরনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সে কথা ফেইসবুকে লিখেছেন পরিচালক শামীম।
তিনি লেখেন, “সপ্তাহ দুই আগে ফেস্টিভাল কর্তৃপক্ষ আদিমের প্রোরেজ ফাইল পাঠাতে বললেন। ১০৫ জিবি ফাইল আমার বাসার দুর্বল নেটে পাঠানো কঠিন, তবুও বার কয়েক চেষ্টা করলাম। কিন্তু ইলেক্ট্রিসিটির টালবাহানা, আর আমার আইপিএস-ইউপিএস না থাকায় প্রোরেজ ফাইল পাঠানো হয়নি। এর মধ্যে আমি অন্য একটা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, ভাবনায় থাকে সময়তো আছেই!
“হঠাৎ সেদিন কুইন্স থেকে মেইল পেলাম উৎসবের প্রমোশনাল পর্ব 'ট্রেইলার পার্টি' থেকে আদিম বাদ পড়েছে! মূহুর্তে ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে, অস্থিরতা বেড়ে যায়। আমি সরাসরি উৎসব প্রধান ক্যাথাকে মেইল করি, ক্যাথা আমাকে জানায়, লোকাল বিভাগে ওরা আদিমকে রেখেছে, কেননা এই বিভাগে প্রোরেজ ফাইল জরুরি না, তবে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে আদিম নেই!”
শামীম লেখেন, “আমি বিনয়ের সঙ্গে আরো দুইদিন সময় চাই, ক্যাথা রাজি হন৷ প্রোরেজ ফাইল পাঠাতে বার কয়েক আবার চেষ্টা করি, যথারীতি ব্যর্থ হই। নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হয়!
“এরপর হঠাৎ মনে হলো, শুরু থেকেই তো আমার কিছু ছিল না, এমনকি একটা পেইড ভিমিয়ো অ্যাকাউন্ট! তবুওতো আটকাইনি কোথাও! নিজের পথে ঠিকঠাক হেঁটেছি, কেউ না কেউ পাশে দাঁড়িয়েছে। আর একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ওয়ার্কারদের এসব মেনে নিয়েই পথ চলতে হয়।
“স্থানীয় একজনের আন্তরিক সহযোগিতায় দুই দিন সময় চেয়ে চারদিন পর, গতকাল প্রোরেজ ফাইল পাঠিয়ে চুপচাপ ছিলাম, স্যরি-টরি কিছু বলিনি। কারণ সকল দায় আমার নাহ্! ভোর সকালে উৎসব কর্তৃপক্ষ মেইল করে জানান 'আদিম'কে তারা তিনটি ক্যাটাগরিতে নমিনেটেড করেছে!”
আদিমের সিনেমাটোগ্রাফার আমীর হামজার উদ্দেশে শামীম লিখেছেন, “অভিনন্দন আমীর হামজা। তোর নমিনেশন পাওয়াটা আমার কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ঘটনা।”
শামীম নিউ ইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আদিম দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
“আসছে নভেম্বরের ৫ তারিখ নিউ ইয়র্কের কুইন্স ওয়ার্ল্ড চলচ্চিত্র উৎসবে 'আদিম' প্রদর্শিত হবে, নিউ ইয়র্কে বসবাসরত সকল বাঙালিকে আদিম দেখার নিমন্ত্রণ রইল। আদিমের টিকিট বুকিং চলছে।”
টিকেট বুকিং সংক্রান্ত লিংক তার পোস্টের কমেন্ট বক্সে দিয়ে রেখেছেন শামীম।
সিনেমা যেভাবে নির্মিত হয়, সেভাবে আদিমের জন্য প্রযোজক খোঁজেননি যুবরাজ শামীম; তিনি দ্বারস্ত হয়েছিলেন সাধারণ মানুষের।
গণ অর্থায়নের এই উদ্যোগে প্রতি ইউনিট শেয়ার পাঁচ হাজার টাকা ধরে সিনেমার শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর তা দিয়েই নির্মাণের পুরো খরচ উঠে আসে।
আদিমের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাদশা, দুলাল, সোহাগী, সাদেক। চিত্রগ্রহণে ছিলেন আমির হামযা। সাউন্ড ও কালার করেছেন সুজন মাহমুদ।
নির্মাতা যুবরাজ শামীম গ্লিটজকে বলেছিলেন, “এ সিনেমায় কোনো পেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রী নেই। সবাই যে যার নিজের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।“
নির্মাতা চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে টঙ্গীর ব্যাংক মাঠ বস্তিতে বসবাস করেছেন টানা সাত মাস। সেখানে থেকেই তিনি স্থায়ী বাসিন্দাদের রিহার্সাল করিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত করিয়েছেন।
সে সময় নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে এ নির্মাতাকে। পুলিশ তাকে একবার ‘মাদকসেবী’ মনে করে গ্রেপ্তার করে। আবার কখনও স্থানীয় মাদক কারবারিরা তাকে সাংবাদিক মনে করে হুমকি দিয়েছে।
কিছু মানুষ অসহযোগিতা করলেও বেশিরভাগ মানুষের আন্তরিক সহযোগিতায় শেষমেশ এ বছর নির্মাতা চলচ্চিত্রটির কাজ শেষ করেন।
যুবরাজ শামীমের নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রসায়নের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। আদিমের সহপ্রযোজক হিসেবে সিনেমাকার ও লোটাস ফিল্ম যুক্ত আছে।