Published : 30 Apr 2020, 09:36 PM
পুলিশ প্রশাসনের অংশ, কিন্তু ছাত্রলীগ তা নয়। এটা সংগঠন তবু এই দুজনের কথা একসাথে বলছি কারণ একটাই, তাদের ভাবমূর্তি। তারা নিজেরা নিজেদের অনুষ্ঠান ছাড়া অন্যেরা কেউ তাদের সম্পর্কে ভালো আলোচনা করেন না বললেই চলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীর, আর দায়িত্বশীল বড় মন্ত্রীরা ছাত্রলীগের প্রশংসা করেন। আর কেউ সেটি করেন না। সত্যি সত্যিই সাধারণ মানুষ যারা তারা কেউ এই কথা বিশ্বাস করেন বলে মনে করি না। ছাত্রলীগের ঐতিহ্য অস্বীকার না করলেও এখন ট্র্যাকে আছে সে বিশ্বাস নাই কারও। আর পুলিশ সাধারণ নাগরিকদের বন্ধু বলা হলেও মানুষজন এই বন্ধুকে রীতিমতো ভয় পান।
এখন মানে করোনাভাইরাসের কালে পরিস্থিতি বদলেছে। সাধারণ সময়ের থেকে পুরোপুরি আলাদা। মানুষ ঘরে উঠে গেল, আর পুলিশ মাঠে। যারা বাইরে তাদের ঘরে পাঠানো, বাজারঘাট, রাস্তা নিয়ন্ত্রণ, সাথে স্পর্শকাতর লকডাউন এলাকায় ডিউটি করা। তাদের নিজেদের ঝুঁকি নিয়েও মাঠে থাকা এই কাজগুলোর মধ্য দিয়েই মানুষ পুলিশকে আলাদা ভূমিকায় পেয়েছে। বিষয়টি আরও বেশি করে দৃশ্যমান হলো, বাজার করে দেয়া, ক্ষেত্রবিশেষে ডাক্তার, চিকিৎসাকর্মীদের যাতায়াতে সাহায্য করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে। ত্রাণ দেয়ার ক্ষেত্রে অসহায় মানুষের বস্তিতে গিয়ে রাতে রাতে কাজ করতে দেখেছি সামাজিক মাধ্যমে। অবশ্য এক্ষেত্রে ব্যাপকহারে উদাহরণ নেই। যেটা দেখেছি সেটা কাউকে না কাউকে ভিডিও করতে হয়েছে। সেটাই কিন্তু সমস্যা। দেখানোর জন্য ক্যামেরার সামনে ভালো ব্যবহার আর ভালো কাজের উদাহরণ পুলিশের দরকার নাই, দরকার সত্যি সত্যিই মানুষের মনে জায়গা করে নেয়া। আর করোনাকাল তার বড় সুযোগ। নানাভাবে মানুষকে সাহায্য করার সুযোগ আছে। পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে চাইলে করোনাকালের চেয়ে বড় সুযোগ আর আছে বলে মনে হয় না।
এবার ছাত্রলীগের কথা বলি। মানুষ আপনাদের কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু আশা করেন না। কিন্তু ছাত্রলীগ যেসব উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা না করলেই খুশি। সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর ক্রাইসিস কাটিয়ে উঠতে পুরো আওয়ামী লীগকে বেগ পেতে হয়েছে। এদিকে কৃষকের ধান কাটতে গিয়ে মডেলিং করে শোভন-রাব্বানী জুটি অবাস্তব ও ক্লাউনের মতো ছবি তুলে এই কাজটাকেও হাস্যকর করে রেখেছে বছরখানেক আগেই।
কাজেই এখন এই মহামারিকালে কেউ সত্যি সত্যিও যদি ধান কাটতে যায় তো মানুষ হাসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি তোলা নিয়ে ট্রল করছে, করবেও।
একদিনে অনেক মানুষ ধানক্ষেতে নিয়ে গিয়ে যে ধান কাটা যায় না তা সবার জানা। যারা এই কাজটা করছেন তাদের রাজনৈতিক ফোকাসে থাকার দিন শেষ। তারা মানুষের প্রয়োজন বোঝেন না, শুধু ফোকাস চান।
ধান কাটতে গেলে ক্যামেরা লাগে না, মুজিব কোট লাগে না, বা দলের লোগো লাগানো টি শার্টও লাগে না। লাগে কাস্তে আর রোদে পুড়ে কাজ করার ধৈর্য। এভাবে বেলা গড়িয়ে প্রতি এক বিঘা জমির ধান কাটলে কৃষকের দুই হাজার টাকার সেভ হয়। দশ বিঘার ধান কাটার দায়িত্ব নিয়ে দেখবেন, আপনার ছবি নিজেও চিনতে পারবেন না।
ছাত্রলীগ বলছে তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অনেক কৃষকের ধান কাটার কাজ করে দিচ্ছে কিন্তু কিছু নেতার উদ্ভট কাজকর্মের জন্য তাদের কাজ গুরুত্ব পাচ্ছে না।
আপনাদের অবস্থাও পুলিশের মতো। অনেক নেতা অনেক অনেক হাস্যকর কাজ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে রেখেছেন। এখন দু'চার দিন ধান কাটলে মানুষ ভরসা পাবে না। বরং এই করোনাকালে অসংখ্য কৃষকের পাশে থেকে, ক্যামেরা বা মিডিয়ার কথা ভুলে কাজ করে যেতে পারেন। কৃষকের ভালোবাসা আর আস্থা পেলে তবেই বলবেন আপনার রাজনৈতিক দলের নাম পরিচয়। তখন কাজে লাগতে পারে।
ব্যাপারটা একই ভাবমূর্তি উদ্ধারের— ছাত্রলীগেরও, পুলিশেরও।