Published : 04 Jan 2024, 02:57 PM
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশি সংবাদমাধ্যমেরও ‘কোনো আস্থা নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা আবদুর মঈন খান।
তিনি বলেছেন, “লক্ষ্য করুন বিশ্বের সবচেয়ে নামি-দামি মিডিয়া আজকে ঢাকা শহরে এসেছে। কেন এসেছে? তারা এসেছে বাংলাদেশে তথাকথিত নির্বাচনের যে ফানুস সেই ফানুসকে তারা ফাটিয়ে দিচ্ছে রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে।”
বৃহস্পতিবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে কথা বলছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান। তিনি বলেন, ‘ডামি’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সরকারের 'চরম পরাজয় ঘটবে'।
“আজকে আওয়ামী লীগ, যারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে, তারা যদি ভুল পথে হাঁটতে থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। আপনারা এই কঠিন সত্যটি উপলব্ধি করুন।
“আমি স্পষ্টভাষায় বলে দিচ্ছি, সরকার ভাবছে ৭ জানুয়ারি বিজয় হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের চরম পরাজয় সংঘটিত হবে।”
নির্বাচনের দুদিন আগে সরকারকে সবকিছু নিয়ে ফের চিন্তাভাবনার আহ্বান জানিয়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনি তফসিল বাতিলের আহ্বান জানান মঈন খান।
তিনি বলেন, "বুলেট দিয়ে, গ্রেনেড দিয়ে, টিয়ারগ্যাস দিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে পদানত করা যাবে না। কাজেই আপনারা আলোচনার পথে আসুন, শান্তির পথে আসুন।”
দশম সংসদ নির্বাচনের মতই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে টানা দেড় মাস দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ করার পর এখন তারা ভোট বর্জনের আহ্বানে অসহযোগের ডাক দিয়ে লিফলেট বিতরণ করছে।
দেশের ‘উদারনৈতিক, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ’ রাজনীতিতে বিশ্বাসী দলগুলোই নির্বাচন বয়কট করেছে বলে দাবি করেন মঈন খান।
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মানুষের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন, মানুষের যদি ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ না ঘটে আপনারা বন্দুকের নলের ক্ষমতার জোরে আপনারা রাষ্ট্রযন্ত্র আঁকড়ে ধরে থাকেন… সেটা হয়ত আপনারা করতে পারবেন, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন আপনাদেরকে অন্তর থেকে স্বীকার করে নেবে না। এই সরকারকে বিদায় দেবার জন্য আন্দোলন করে যাব যে আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক।”
সরকারের উদ্দেশে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, "অন্যায় করে কিন্তু কিছুদিন ক্ষমতায় থাকা যেতে পারে। কিন্তু ইতিহাস আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে আজকে হোক, কালকে হোক এই সরকারকে বিদায় নিয়ে জনগণেন ইচ্ছার কাছে মাথানত করে তাদেরকে পরাজয় স্বীকার করতেই হবে।"
ভোট বর্জনে লিফলেট বিতরণের আগে প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর মঈন খান পেশাজীবী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে পথচানী, বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের হাতে লিফলেট তুলে দেন।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতা রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে পেশাজীবীদের মধ্যে রুহুল আমিন গাজী, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুতফর রহমান, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, মোস্তাফিজুর রহমান, সাংস্কৃতিক কর্মী রফিকুল ইসলাম, ফিজিওথেরাটিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের তানভীরুল আলম, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা বেগম, টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশনের সাখাওয়াত হোসেন, ডিপ্লোমা এগ্রিচালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের জিয়াউল হায়দার পলাশ, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাঈদ খান, এম-ট্যাবের দবির উদ্দিন তুষারসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
‘ওরা বিপদ ঢেকে আনছে’
রাজধানীর উত্তরার রাজউক স্কুলের কাছে 'ভোট বর্জনের' লিফলেট বিতরণের পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সরকার যত কলাকৌশল করুক না কেনো ৭ জানুয়ারি ভোট কেন্দ্রে সাধারণ ভোটার আসবে না। শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই থাকবে।
“ডামি প্রার্থী দেখিয়ে সরকার মনে করেছিল গণতান্ত্রিক বিশ্বকে দেখাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে… কিন্তু গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশে কোনো ভোট হচ্ছে না, পাতানো নির্বাচন হচ্ছে।”
বিপদের দিকে ঠেলে দিলে 'পরিণতি হবে ভালো হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন রিজভী। তিনি বলেন, " জনগণ ৭ ডিসেম্বর ভোট বর্জন করবে, তারা ভোট কেন্দ্রে যাবে না।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কফিল উদ্দিন, মোতালেব হোসেন রতন, আকরাম হোসেন এ সময় রিজভীর সঙ্গে ছিলেন।
এছাড়া সকালে ছাত্রদলের তানজিল হাসান, এমএইচ আবু জাফর, বায়েজিদ হুসাইন, রাজু আহমেদের নেতৃত্বে সেগুন বাগিচা বাজারে লিফলেট বিতরণ করা হয়।