Published : 17 Dec 2023, 08:03 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও জোটগত হিসাব-নিকাশ এবং বাছাই ও আপিল উৎরাতে না পেরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে পড়েছেন ৩৫ প্রার্থী।
সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে দুটি বাদ রেখে এবার ২৯৮ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তাদের মধ্যে পাঁচজন বাদ পড়েছেন নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং আপিলে; আর বাকি ৩০ জন বাদ পড়েছেন জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের সঙ্গে সমঝোতার কারণে।
এই ৩৫ জনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার বা বাতিল হওয়ায় ২৬৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকছে। ১৪ দলের শরিকরাও আওয়ামী লীগের প্রতীক গ্রহণ করায় মোট ২৬৯ আসনে থাকছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।
ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের সময় মনোনয়নপত্র বাতিল হয় কক্সবাজার-১ আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সালাহ উদ্দীন আহমদের। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও প্রার্থিতা ফেরত পাননি তিনি।
ওই আসনে প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়ে নির্বাচনের মাঠে নেমে আলোচনা তৈরি করা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার কারণে বাছাইয়ের সময় নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে পড়েন বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও প্রার্থিতা টেকাতে পারেননি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির এই সদস্য।
শাম্মীর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র হিসাবে ভোটের মাঠে নামা পঙ্কজ দেবনাথ। তথ্য গোপনের অভিযোগে ওই আসনের বর্তমান এই সদস্যের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে শাম্মী আহমেদের আপিল করলেও নির্বাচন কমিশন তা গ্রহণ করেনি।
বাছাইয়ে প্রার্থিতা টিকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর আপিল আবেদনের কারণে দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য ভোট থেকে ছিটকে পড়েছেন ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক।
ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক একে অপরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে পাল্টাপাল্টি আপিল করেছিলেন ইসিতে।
এই দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধেই দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ ছিল। শামীমের দাবি, আজাদ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আর আজাদের দাবি, শামীমের নাগরিকত্ব আছে নেদারল্যান্ডসে।
আপিল শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের সামনে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ দিতে পারায় বৈধ হিসেবে এ কে আজাদের প্রার্থিতা টিকে গেলেও শামীম হকেরটা বাতিল করা হয়।
বাছাই ও আপিলে বাদ আওয়ামী লীগের ৫
ক্রমিক | নাম | সংসদীয় আসন |
---|---|---|
০১ | এনামুল হক বাবুল | যশোর-৪ |
০২ | শাম্মী আহমেদ | বরিশাল-৪ |
০৩ | আব্দুস সালাম | ময়মনসিংহ-৯ |
০৪ | শামীম হক | ফরিদপুর-৩ |
০৫ | সালাহ উদ্দীন আহমদ | কক্সবাজার-১ |
রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে টিকলেও নির্বাচন কমিশনের আপিল শুনানিতে এসে খেলাপি ঋণের কারণে প্রার্থিতা হারান যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক বাবুল।
রড-সিমেন্টের ব্যবসার জন্য ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ ফেরত না দেওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়ের বদলে নৌকার টিকেট পেয়েও তা ধরে রাখতে পারেননি বাবুল।
তার মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেন একই আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী সুকৃতি কুমার মণ্ডল। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাবুল।
ময়মনসিংহ-৯ আসনে দুইবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খানের জায়গায় প্রার্থী হিসাবে আব্দুস সালামকে বেছে নিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে প্রার্থিতা টিকাতে পারলেও আপিল শুনানিতে এসে ঋণ খেলাপের দায়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
সাবেক এই সংসদ সদস্যের মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন এবার আওয়ামী লীগের টিকেট না পেয়ে স্বতন্ত্র হয়ে ভোটে নামা আনোয়ারুল আবেদীন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাদ পড়ায় অন্য দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবার দলটির মনোনয়ন বঞ্চিত আনোয়ারুল আবেদীন; যিনি গতবছর এক বক্তৃতায় ভোটারদের বলেছিলেন, “২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি খোদা আমাকে এমপি বানিয়েছে, আপনারা না।”
জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতায় বাদ ২৫ জন
এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লড়াই সহজ করতে মোট ২৬টি আসনে প্রার্থী রাখেনি আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের জায়গায় শুরু থেকেই প্রার্থী ঘোষণা করেনি আওয়ামী লীগ।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে এসে আরও ২৫টি আসন থেকে নৌকার প্রার্থীকে সরিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
ক্রমিক | নাম | সংসদীয় আসন |
---|---|---|
০১ | মো. ইমদাদুল হক | ঠাকুরগাঁও-৩ |
০২ | মো. গোলাম মোস্তফা | নীলফামারী-৩ |
০৩ | মো. জাকির হোসেন বাবুল | নীলফামারী-৪ |
০৪ | মো. রেজাউল করিম রাজু | রংপুর-১ |
০৫ | তুষার কান্তি মন্ডল | রংপুর-৩ |
০৬ | মো. আছলাম হোসেন সওদাগর | কুড়িগ্রাম-১ |
০৭ | মো. জাফর আলী | কুড়িগ্রাম-২ |
০৮ | আফরুজা বারী | গাইবান্ধা-১ |
০৯ | মাহবুব আরা বেগম গিনি | গাইবান্ধা-২ |
১০ | তৌহিদুর রহমান মানিক | বগুড়া-২ |
১১ | মো. সিরাজুল ইসলাম খান রাজু | বগুড়া-৩ |
১২ | মো. আসাদুজ্জামান বাবু | সাতক্ষীরা-২ |
১৩ | মো. আফজাল হোসেন | পটুয়াখালী-১ |
১৪ | সরদার মো. খালেদ হোসেন | বরিশাল-৩ |
১৫ | মো. আশরাফুর রহমান | পিরোজপুর-৩ |
১৬ | মো. আব্দুল হাই আকন্দ | ময়মনসিংহ-৫ |
১৭ | মো. আব্দুছ ছাত্তার | ময়মনসিংহ-৮ |
১৮ | মো. নাসিরুল ইসলাম খান | কিশোরগঞ্জ-৩ |
১৯ | মো. আব্দুস সালাম | মানিকগঞ্জ-১ |
২০ | মোহাম্মদ হাবিব হাসান | ঢাকা-১৮ |
২১ | ডা. মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী | হবিগঞ্জ-১ |
২২ | মো. শাহজাহান আলম | ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ |
২৩ | মো. আবুল বাশার | ফেনী-৩ |
২৪ | মোহাম্মদ আবদুস সালাম | চট্টগ্রাম-৫ |
২৫ | নোমান আল মাহমুদ | চট্টগ্রাম-৮ |
জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা করতে গিয়ে বর্তমান সংসদের ছয়জন সদস্য বাদ পড়েছেন। এই তালিকায় থাকা গাইবান্ধা-২ আসনের এমপি মাহবুব আরা বেগম গিনি একাদশ জাতীয় সংসদের হুইপ।
বাদ পড়াদের তালিকায় থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের শাহজাহান আলম ও পটুয়াখালী-১ আসনের আফজাল হোসেন গত নভেম্বরে উপ-নির্বাচনে জয়ী হন।
তারা জয়ী হয়ে শপথ নেওয়ার আগেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় হয়ে যায়। সে কারণে একদিনও সংসদে বসতে পারেননি তারা।
ঢাকা-১৮ আসনের হাবিব হাসান ২০২০ সালে উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে এসেছিলেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে ওই আসন শূন্য হয়েছিল।
পুনরায় নৌকার টিকেট পেয়েও ভোট করার সুযোগ হাড়ছাড়া হয়েছে কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগর এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনের নোমান আল মাহমুদের।
জোটের বলী ৫
১৪ দলীয় জোটের নেতা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কুষ্টিয়া-২ আসনে শুরু থেকেই কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি আওয়ামী লীগ।
এর সঙ্গে আরও পাঁচটি আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে জোটের শরীকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহজ করার পদক্ষেপ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, ১৪ দলীয় জোট শরীকদের মোট ৬ প্রার্থী এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন। সে কারণে পাঁচ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তারা হলেন-
ক্রমিক | নাম | সংসদীয় আসন |
---|---|---|
০১ | মো. হেলালউদ্দিন কবিরাজ | বগুড়া-৪ |
০২ | মোহাম্মদ আলী | রাজশাহী-২ |
০৩ | তালুকদার মো. ইউনুস | বরিশাল-২ |
০৪ | কানাই লাল বিশ্বাস | পিরোজপুর-২ |
০৫ | ফরিদুন্নাহার লাইলী | লক্ষ্মীপুর-৪ |