Published : 10 Nov 2024, 05:43 PM
বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর নগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় ‘টিএনজেড গ্রুপের’ শ্রমিকরা দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন।
এতে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট তৈরি হয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে টিএনজেডের শ্রমিকরা। একাধিবার বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও কর্তৃপক্ষ কথা না রাখায় বেতন ছাড়া মহাসড়ক না ছাড়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার দুপুরে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “শ্রমিকদের একটাই কথা, বেতন না পাওয়া পর্যন্ত আমরা হাইওয়ে রোড ছাড়বো না। মালিকপক্ষকে একাধিকবার সময় দেওয়া হয়েছিল, ওনারা বার বার বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন; যে কারণে শ্রমিকরা এখন আর আমাদের কথা আর বিশ্বাস করে না।
“এখন আমরা কোন মুখে শ্রমিকদের বলবো যে, তোমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করো, তোমাদের একটা ব্যবস্থা আমরা করে দিবো?। শ্রমিকরা গতকাল থেকে বসে আছে। আমরা তাদের একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু ওরা নাছোড়বান্দা মহাসড়ক ছাড়বে না।”
“গতকাল সন্ধ্যায়ও তাদের বোঝানো হয়েছে, রাতেও চেষ্টা করেছিলাম, তারা যায়নি। আজকেও তারা আছে। এই ধারাবাহিকতায় কলম্বিয়া, ভোগড়া বাইপাস, চৌরাস্তার এদিকে ৩০টি কারখানা ছুটি দিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা ভেতরে ঢুকতে পারছে না।”
পুলিশ সুপার সারোয়ার বলেন, “আমরা আবারও চেষ্টা করছি। একটু আগে সেনাবাহিনী এসেছিল, আমরাসহ কথা বলেছি। এটা নিয়ে আমাদের সিনিয়র স্যাররা, বিজিএমইএ ও শ্রম অধিদপ্তর কাজ করছে। আশা করছি, সমাধান হবে।”
শ্রমিকরা দাবি নিয়ে সবসময় কেনো মহাসড়কে নামে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমার ধারণা, ওরা মনে করে মহাসড়ক বন্ধ করতে পারলে মালিকের ওপর চাপ আসে; টাকার ব্যবস্থা করতে হয়। তাদের এরকম একটা ধারণা করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “টিএনজেড গ্রুপের দুজন মালিক। বর্তমানে একজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। যিনি দেশে আছেন তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি মন্ত্রণালয়ে বসে আছেন। যেখানে এক্সপোর্ট বিল্প আপ ফান্ড আছে। এখানে ওনার কিছু টাকা আছে। ওই টাকা ব্যবস্থা করে দেওয়া হলে, এই দুই মাসের বেতনের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন।”
অবরুদ্ধ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, বিকল্প পথে চলাচল
টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের অবরোধের কারণে এ মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী যাত্রীরা।
এ তথ্য জানিয়ে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, “শনিবার আন্দোলনের শুরু থেকেই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম ডিভিশন, ট্রাফিক ডিভিশন, শিল্প পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সবাই মিলেই টিএনজেডের শ্রমিক ভাইদের বারবার বলেছি রাস্তাটা ছেড়ে সরে যাওয়ার জন্য।
“কিন্তু তারা যে বেতন পাচ্ছে না, এটার দাবিতে তারা অবস্থান নিয়ে আছে। আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। মালিকপক্ষ গত মঙ্গলবার বলেছিল, বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের বেতন দেবে। কিন্তু বৃহস্পতিবারও দেয় নাই।”
তিনি বলেন, “আমরা তারপরও শ্রমিকদের বারবার অনুরোধ করছি যে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কারণ এই মহাসড়কে প্রচুর লোক যাতায়াত করে। এছাড়া এটা শিল্প অধ্যূষিত এলাকা।”
ইব্রাহিম খান বলেন, “এরপরও শ্রমিকরা না সরায় আমরা যেটা করছি, ময়মনসিংহ থেকে বা টাঙ্গাইল থেকে যে গাড়িগুলো আসছে সেগুলোকে ভোগড়া থেকে ডাইভারসন দিচ্ছি। গাড়িগুলো ঢাকা বাইপাস হয়ে, কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে বা তিনশ ফিট হয়ে যাতে ঢাকায় যেতে পারে।
“অপরদিকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহমুখী গাড়িগুলো স্টেশন রোড হয়ে মিরের বাজার হয়ে, ওদিক দিয়ে ঢাকা বাইপাস হয়ে আসতে পারে। গাড়ির চাপ এতই বেশি যে, দুই দিকেই যানজটের তৈরি হয়েছে। যারা রাস্তাগুলো ভেতরে ভেতরে চিনে, তারা ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।”
শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে ট্রাফিক পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, “যৌথ বাহিনীসহ আমরা সবাই মিলে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, তারা যেন মহাসড়ক ছেড়ে মালিকের সঙ্গে কথা বলে। মালিকও তাদের আশ্বাস দিয়েছিল নির্দিষ্ট সমেয়র মধ্যে বেতন পরিশোধ করবে। কিন্তু তারা সেটা প্রতিপালন করতে পারে নাই, পারছে না। তারপরও আমরা আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারবো।”