Published : 29 Mar 2025, 06:15 PM
শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে চারজনকে ধরে জনতা গণপিটুনি দিয়েছে; এদের মধ্যে তিনজন পুলিশের সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন আরো চারজন।
ডামুড্যা বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী দুই ভাইকে অপহরণের ঘটনায় শুক্রবার রাতে স্বাধীন সরদার মামলা করেছেন। স্বাধীনের বাড়ি ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি এলাকায়। মামলায় আটজনকে আসামি করা হয়েছে। চারজন ধর পড়লেও বাকি চারজন পালিয়ে গেছেন।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন- বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার গারফা এলাকার কৌশিক আহমেদ সেতু, ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার কাউসার তালুকদার, মাগুরা জেলার বাসিন্দা রুবায়েত মীর এবং কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার আমৌদা এলাকার শরীফ হোসেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তাদের মধ্যে কৌশিক, কাউসার ও রুবায়েত মীর পুলিশ কনস্টেবল। তবে রুবায়েত মীরকে আগেই চাকরিচ্যুত।
কৌশিক খুলনা জেলা পুলিশ লাইনে এবং কাউসার চট্টগ্রামের একটি থানায় কর্মরত। তবে তারা বেশ কয়েকদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
যে চারজন পালিয়ে গেছেন তাদের সঙ্গে জয় পোদ্দার নামে আরেক পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন। তবে তিনি কোথায় কর্মরত, তা জানা যায়নি।
শনিবার শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, “দুই ব্যবসায়ী অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের সময় জনতার হাতে ধরা পড়া চারজনের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।
“পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যেও একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।”
মামলার বরাতে পুলিশ ও অপহরণের শিকার দুই ব্যবসায়ীর পরিবার জানায়, জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার এই দুই ভাই ডামুড্যা বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। রাত ১০টা দিকে ডামুড্যার দারুল আমান বাজার এলাকায় কয়েকজন লোক অস্ত্রের মুখে একটি মাইক্রোবাসে তাদের তুলে নিয়ে যায়।
তারা দুই ব্যবসায়ীর কাছে সারা দিনের বিক্রি করা টাকা চায়। কিন্তু কাছে টাকা না থাকায় তারা অপহরণকারীদের দিতে পারেননি। তখন অপহরণকারীরা তাদের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করে।
তবে ব্যবসায়ীরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। এ সময়ের মধ্যে অপহরণকারীরা দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের পারে যায়। সেখানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই ব্যবসায়ী মুক্তিপণ হিসেবে অপহরণকারীদের তিন লাখ ৯১ হাজার টাকা দেন। বাকি ছয় লাখ নয় হাজার টাকা আদায় করতে রাত ১টার দিকে অপহরণকারীরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যায়।
সেখানে দুই ব্যবসায়ী গাড়ি থেকে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। স্থানীয়রা ডাকাত সন্দেহে গাড়ি ঘিরে ফেলেন। এ সময় অপহরণকারীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে জনতা তাদের চারজনকে আটক করে পিটুনি দেয়। এরপর ডামুড্যা থানা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।
উদ্ধারের পর ফয়সাল সরদার ও জুয়েল সরদার জানান, অপহরণকারীরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের হাতে হাতকড়া পরায় ও পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখায়। ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হওয়ার পরও অপহরণকারীরা তাদের রড দিয়ে পেটায়, কিল-ঘুসি মারে। পরে মাদারীপুর লেক পারে নিয়ে যায়। সেখানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদেরকে প্রায় চার লাখ টাকা দেওয়া হয়।
ডামুড্যা থানার ওসি হাফিজুর রহমান মানিক বলেন, “গ্রেপ্তার চারজনকে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”