Published : 05 May 2020, 02:32 PM
করোনাভাইরাস প্রকোপের এই মন খারাপ করা সময়ে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) সোনা জয়ী অ্যাথলেটরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনাচ্ছেন তাদের স্মৃতিময় দিনগুলোর গল্প। মিজানুর ফিরে তাকালেন ১৪ বছর আগের সোনায় রাঙানো দিনটিতে। স্মৃতি হাতড়ে শোনালেন অদ্ভূত এক গল্প।
২০০৪ সালে ইসলামাবাদ এসএ গেমসে দেশকে তিনটি সোনার পদক উপহার দেন আসিফ হোসেন খান (১০ মিটার এয়ার রাইফেল), শারমীন আক্তার (১০ মিটার এয়ার রাইফেল) ও রুবেল রানা (১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোক)। মিজানুর পেয়েছিলেন ব্রোঞ্জ। সেবার দেশে ফেরার বিমানে আসিফের প্রতি সবার খাতির-যত্ন দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা মিজানুরের। জানালেন, বড় স্বপ্ন দেখার শুরুটাও বিমানে বসেই।
“এসএ গেমসে প্রথম খেলি পাকিস্তানে। নতুন খেলোয়াড়, কেউ তেমন চিনত না, আমলেও নিত না। ওই সময় আত্মবিশ্বাস এতটা ছিল না। মোটামুটি খেলে ব্রোঞ্জ পেলাম। দেশে ফেরার বিমানে উঠে দেখি আসিফ ভাইকে কত আদর-যত্ম করছে সবাই। বিমানবন্দরে নেমে দেখি মানুষের ভিড়। ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষায়। সেদিন মনে হলো, যদি আমিও সোনা জিততে পারি, তাহলে তো একই আদর-সম্মান পাব।”
কলম্বো এসএ গেমস সামনে রেখে তাই দক্ষিণ কোরিয়ান কোচ লি জু সাংয়ের অধীনে আটঘাট বেঁধে শুরু হলো মিজানুরের অনুশীলন। দিন-মাস-বছর ঘুরে চলে এলো ২০০৬ সাল। আবডালে থাকা মিজানুর এক বুক স্বপ্ন নিয়ে নোঙর ফেললেন শ্রীলঙ্কায়। সবাইকে চমকে দিয়ে বরিশালের এই অ্যাথলেট লিখলেন সোনা জয়ের গল্প।
“আগেরবার ব্রোঞ্জ পেলাম, সেটা তেমন কোনো রেজাল্টের মধ্যে পড়ে না। সত্যি বলতে আমাদের নিয়ে কলম্বোতেও কেউ তেমন চিন্তা করেনি, আশাও করেনি। খেলা শুরু হলো জুনিয়রদের ইভেন্টগুলো দিয়ে। দুই দিন পার হয়ে গেল, কিন্তু আমাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। সবার মন খারাপ। তৃতীয় দিন ছিল আমার ৭৮ কেজি ওজন শ্রেণির খেলা। প্রথম খেলায় পাকিস্তানের প্রতিপক্ষকে হারালাম। আত্মবিশ্বাস বাড়ল।”
“ভারতের প্রতিপক্ষকে হারিয়ে লাঞ্চ ব্রেকে গেলাম। বিকালে ফাইনাল। সেমিতেই প্রতিপক্ষের কনুই লেগে আমার ডান পায়ের অবস্থা খুব খারাপ। কোচ বললেন, ‘পায়ের ব্যাথা, কথা, সব ভুলে যাও। মনে করবে ওই পা নেই। আমাদের (সম্ভাবনা) নিয়ে কেউ চিন্তা করেনি। ফাইনালে উঠেছ… দেখোযদি কিছু করতে পার।’ আমিও ব্যান্ডেজ করে খেলতে নেমে গেলাম।”
“সত্যি বলতে, আমিও পায়ের কথা মাথায় রাখিনি। ভেবেছি ছয় মিনিটের খেলা, যেভাবেই হোক পার করতে হবে। ওই পা দিয়েও মারতে মারতে এক পর্যায়ে পা অবশ হয়ে গেছে। শেষ দিকে যখন দুই মিনিট বাকি, ও (ভুটানের প্রতিযোগী) মারার জন্য মরিয়া। আমি বেশি পয়েন্টে এগিয়ে যাওয়ায় অফেন্সে যাইনি। ডিফেন্সিভ হয়ে যাই। ৩০ সেকেন্ডের খেলা যখন বাকি, তখন ও আমার ওপরের দিকে মারার জন্য ছুটে এলো। আমি একটু সরে গিয়ে ধাম করে মেরে দিলাম। খেলা শেষ!”
স্মৃতির অলিন্দে ঢু মেরে মিজানুর একটু আক্ষেপ নিয়েই জানালেন তার উৎসব দেখার জন্য মঞ্চের চারপাশে ছিল কেবল তার সতীর্থরা। না ছিল কোনো সাংবাদিক, না কোনো ফটোগ্রাফার। হোটেলে ফেরার পর দেশি ফটোগ্রাফার মীর ফরিদ গিয়েছিলেন, তিনিই ফ্রেমবন্দী করে দিয়েছিলেন কিছু সোনালী মুহূর্ত। কম্পিউটার-মোবাইলে ঝামেলা হওয়ায় সেগুলোও ফেলেছেন হারিয়ে!
স্মৃতি মোন্থনের পর মজার গল্পটি শোনালেন ৩৮ বছর বয়সী মিজানুর। কোচের শেখানো ‘কূট কৌশল’ পাকিস্তান, ভারত ও ভুটানের প্রতিযোগীর বিপক্ষে কেমন কাজে লেগেছিল বলতে গিয়ে হাসিতে ফেটে পড়ার অবস্থা তার।
“প্রতিযোগিতার ১৫ দিন আগে কোচ আমাকে এসে বললেন, চুল-দাড়ি কামানো যাবে না। প্রশ্ন করলাম, ‘কেন?’ তিনি বললেন, ‘যেন তোকে হিংস্র, ভয়ঙ্কর দেখায়!’ এরপর বললেন, ‘ব্রাশও করবি না।’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করি, ‘এটা আবার কেন? বললেন, ‘যাতে তোর মুখের দুর্গন্ধে প্রতিপক্ষ বিরক্ত হয়!”
“কী আর করা! আমিও কোচের কথা মেনে নিলাম। কেমন হিংস্র দেখাচ্ছিল জানি না, কিন্তু মুখের গন্ধে প্রতিপক্ষরা বিরক্ত হচ্ছিল, তা বুঝতে পেরেছি খেলার সময়ই। একেই বলে কোরিয়ান কৌশল (হাসি)!”