ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
Published : 06 Jul 2024, 10:47 AM
ম্যাচ শেষে পরস্পর সান্ত্বনা দেওয়ার পালা চলছিল। তবে সবচেয়ে বেশি বয়সী যিনি, এই ম্যাচেও যার পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত, সেই পেপে ভেঙে পড়লেন সবচেয়ে বেশি। মাঠে যিনি শক্তপোক্ত শরীরের হার না মানা মানসিকতার ডিফেন্ডার, তার হৃদয়ের কোমল ছবি ফুটে উঠল এখানে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন, হৃদয়ের মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরতে থাকল দু চোখ থেকে। এক পর্যায়ে তার আশ্রয় হলো ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর চওড়া বুক।
আগের ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টিতে গোল করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন রোনালদো। তখন তাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছিলেন পেপে। ফ্রান্সের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনাল শেষে উল্টো চিত্র। নাহ, পেপে পেনাল্টি নেননি। তবে গোটা ম্যাচে দলের সেরা ফুটবলার ছিলেন সম্ভবত তিনিই। ৪১ বছর বয়সেও ১২০ মিনিট ধরে তিনি ছিলেন দলের ভরসা। এমনকি একদম শেষ সময়েও দলকে বাঁচিয়েছেন বিপদ থেকে।
কিন্তু তার প্রচেষ্টা আর দলের সব আশার সমাধি টাইব্রেকারে। যেখানে পেপে ছিলেন কেবলই দর্শক। ম্যাচ শেষে তিনি ভেঙে পড়লেন। তাকে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করলেন রোনালদো ও অন্য সতীর্থরা।
কিছুটা গুছিয়ে উঠে অবশ্য সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখিও হলেন পেপে। রোনালদো তখন সান্ত্বনা দিয়ে কী বলছিলেন তাকে, সেসব নিজের কাছেই রাখলেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার। তবে দুজনের হৃদয়ের ব্যথাটুকু লুকালেন না।
“এসব আমি প্রকাশ্যে বলব না। এতটুকু বলতে পারি, আমরা এটা গভীরভাবে অনুভব করছি… লোকে যেমনই ভাবুক, আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে…।”
“ম্যাচ জিততে না পারার হতাশা অনুভব করছি, আরও সামনে এগোনোর মতো মান আমাদের থাকলেও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মতো এত বড় আসর থেকে এত দ্রুত বিদায় নিচ্ছি… এই হতাশা আমাদের পোড়াচ্ছে।”
পেপের কান্নার ব্যবচ্ছেদ অবশ্য করলেন রবের্তো মার্তিনেস। পর্তুগাল কোচ পাশাপাশি এটাও বলে রাখলেন, পর্তুগিজ ফুটবলের ইতিহাসে এই ডিফেন্ডারের নাম খোদাই করা থাকবে আলাদা করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তিনি হবেন অনুপ্রেরণা।
“এই টুর্নামেন্টে যা দেখিয়েছে পেপে, ফুটবলার হিসেবে তার পরিচায়ক এটিই। কেবল ম্যাচেই নয়, ট্রেনিং সেশনগুলোতে সে যেভাবে কাজ করেছে, যেভাবে সে সতীর্থদের পাশে থাকে, যতটা নিবেদন দেখায়, সব কিছু মিলিয়েই।”
“তার হতাশাগুলোই চোখের জল হয়ে ঝরেছে। কারণ, শ্রেয়তর দলের বিপক্ষে খেললে কান্নার কোনো কারণ নেই। সে কান্না করেছে, কারণ আজকে এরকম পারফরম্যান্সের পরও আমাদেরকে চলে যেতে হচ্ছে। তবে এটুকু বাদ দিলে, পর্তুগিজ ফুটবলে পেপে একজন আদর্শ এবং আজকে সে যা করেছে, টুর্নামেন্টজুড়ে যেভাবে নিজেকে মেলে ধরেছে, আমাদের সঙ্গে তা সবসময় রয়ে যাবে, পরবর্তী প্রজন্মের সামনে উদাহরণ হয়ে থাকবে।”
ইউরো থেকে বিদায়ের পর অবশ্য পেপেকে ঘিরে সবচেয়ে কৌতূহল জাগানিয়া প্রশ্ন, তার পথচলার সমাপ্তি এখানেই কি না। তবে পর্তুগালের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ (১৪১) খেলা এই ফুটবলার বললেন, এসব খোলাসা করার উপযুক্ত সময় এখন নয়।
“এটা নিয়ে কথা বলার সুযোগ সামনে আসবে আমার। এখনই এসব বলতে চাই না। কারণ, সেক্ষেত্রে আলোচনা ঘুরে যাবে। পুরো প্রক্রিয়াটা বাদ দিয়ে লোকে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে শুরু করবে।”