Published : 06 Jul 2023, 07:20 PM
ভারত-পাকিস্তান প্রেমের গল্প আবারও সংবাদের শিরোনামে। এবারের প্রেমিক জুটির পরিচয় হয় অনলাইন ভিত্তিক জনপ্রিয় গেম ‘পাবজি’ খেলতে গিয়ে।
বিবিসি জানায়, ২৭ বছরের পাকিস্তানি গৃহবধু সীমা গুলাম হায়দারের সঙ্গে কয়েক বছর আগে পাবজি খেলতে গিয়ে পরিচয় হয় ২২ বছরের ভারতীয় তরুণ শচীন মীনার।
সীমার চারটি সন্তান রয়েছে এবং তাদেরসহ গত মে মাসে তিনি অবৈধ পথে ভারতে চলে আসেন। যেন শচীনের সঙ্গে বসবাস করতে পারেন।
পুলিশ জানায়, সীমা তার চারটি ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের গ্রেটার নয়ডা নগরীতে শচীনের ভাড়া-বাড়িতে বসবাস করছেন।
গত মঙ্গলবার এই জুটিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালত তাদের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। সীমার সন্তানরা মায়ের সঙ্গে কারাগারেই রয়েছে।
এই জুটি সাংবাদিকদের বলেছে, তারা বিয়ে করে একসাথে বসবাস করতে চায়।
পুলিশ তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।
ভার্চুয়াল জগৎ বাস্তব জীবনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে কতটা ভূমিকা রাখছে সেই বিতর্ক পুনরায় উসকে দিয়েছে ভারত-পাকিস্তান জুটির এই প্রেম কাহিনী।
পাবজি খেলতে গিয়ে যে সম্পর্কের শুরু:
সীমার সঙ্গে ২০১৪ সালে বিয়ে হয় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের বাসিন্দা গুলাম হায়দারের। তাদের চার সন্তানের মধ্যে তিনটি মেয়ে এবং একটি ছেলে।
বিয়ের পাঁচ বছর পর সীমার স্বামী সৌদি আরবে কাজ করতে যান। স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর নিজেকে ব্যস্ত রাখতে সীমা পাবজি খেলা শুরু করেন।
বিবিসি হিন্দিকে তিনি বলেন, ‘‘আমি দিনে সাধারণত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পাবজি খেলতাম। পাবজি খেলতে গিয়েই শচীনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।”
তারা নিজেদের ফোন নম্বর বিনিময় করেন এবং নিয়মিত কথা বলতে শুরু করেন।
এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় তিন বছর প্রেম করার পর সীমা সিদ্ধান্ত নেন ভারতে গিয়ে তিনি শচীনের সঙ্গে বসবাস করবেন।
সীমার অভিযোগ, তার স্বামী তাকে মারধর করতেন। এমনকি তিনি পুলিশকে বলেছেন, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ করেছেন।
তবে গুলাম হায়দার গৃহনির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সীমার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি বলেও দাবি করেন। উল্টো অভিযোগ করে বলেন, সীমা পাকিস্তানে তাদের বাড়ি বিক্রি করে সেই অর্থ, ছেলে-মেয়ে এবং গহনা নিয়ে পালিয়ে এসেছে।
যেভাবে প্রথম দেখা:
পুলিশ জানায়, সীমা ও শচীনের প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ হয় নেপালে, গত মার্চ মাসে। সেখানে তারা কয়েক দিন একসঙ্গে হোটেলে থেকেছেন। পরে নিজ নিজ দেশে ফিরে যান।
মে মাসে সীমা আবারও পর্যটক ভিসায় নেপাল যান। এবার সঙ্গে ছিল তার চার সন্তান। নেপাল থেকে বাসে করে তারা ভারতের রাজধানী দিল্লি পৌঁছায় বলে জানান গ্রেটার নয়ডার একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশি জেরায় সীমা স্বীকার করেছেন, তিনি একটি জমি বিক্রি করেছেন। তবে সেটা তার স্বামীর বাড়ি নয় বরং তার নিজের বাবা-মার কাছ থেকে পাওয়া জমি।
ওই জমি বিক্রির অর্থ দিয়ে তিনি নেপালে যান। ইউ টিউবে ভিডিও দেখে তিনি নেপাল হয়ে ভারতে প্রবেশের আইডিয়া পান।
এদিকে, গ্রেটার নয়ডার রাবুপুরা শহরের বাসিন্দা শচীন একটি মুদি দোকানে কাজ করেন। সেখানে একটি ঘর ভাড়া করে সে সীমা ও তার বাচ্চাদের নিয়ে বসবাস করছিল।
বাড়িওলা গিরিশ কুমার বিবিসি-কে বলেন, এ জুটিকে নিয়ে তার বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি। কারণ, শচীন ঘর ভাড়া নেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র তার কাছে জমা দিয়েছেন। এমনকি শচীনের বাবা-মা পর্যন্ত সেখানে বেড়াতে গেছেন।
কীভাবে ধরা পড়ল এই জুটি:
প্রতিবেশীদের চোখ ভালোভাবেই ফাঁকি দিতে পারলেও বিপত্তি বাধে যখন শচীন ভারতে সীমার বৈধভাবে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরির চেষ্টা করে।
এজন্য পরামর্শ নিতে সে স্থানীয় একজন আইনজীবীর দ্বারস্ত হলে তিনি পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন বলে জানায় ভারতীয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া।
পুলিশ সীমা-শচীন জুটি ছাড়াও শচীনের বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে।
এই জুটি ভারত সরকারের কাছে তাদের বিয়ে করতে সহায়তা করার আবেদন জানিয়েছে।
আর সীমার স্বামীর দাবি, পাবজি খেলতে গিয়ে তার স্ত্রী ‘বিপথগামী’ হয়েছে। তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের পাকিস্তানে ফেরত নিতে চান।